অকৃতজ্ঞ জাতি!
দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। যাঁর নামে কলকাতায় দেশপ্রিয় পার্ক। যে নাম উচ্চারিত না হলে ভারতবর্ষের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর জন্মটা চট্টগ্রামে।
কে এই যতীন্দ্রমোহন? আজ থেকে ১০০ বছর আগে এই নামে ভূ ভারত কাঁপত। চট্টগ্রামের শেষ কথাটা উনিই বলতেন। ছিলেন পাঁচ পাঁঁচ বার কলকাতার মেয়র। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন। তাঁর নাম শুনলে ব্রিটিশ আইসিএস আইপিএস অফিসাররা ভয়ে সিঁটিয়ে যেত। চট্টগ্রামের ডিসি এসপির চাকরি চলে গিয়েছিল তাঁর আপিলের মুখে। একজন ত বিচারের হাত থেকে বাঁচতে সুইসাইড করেছিলেন। চা শ্রমিক রেল শ্রমিকদের পাশে যখন কেউ ছিল না, তিনি ছিলেন। তীক্ষ্ণ যুক্তি দিয়ে ছাড়িয়ে আনতেন বিপ্লবীদের।
যে লোক লক্ষ লক্ষ টাকা কামাতেন ব্যারিস্টারি করে, দেশ সেবা করতে গিয়ে তিনিই কিনা জেলে মরেছেন বিনা চিকিৎসায়। উপার্জিত অর্থ উজাড় করে দিয়েছেন বিপ্লবীদের। কিছুই রেখে যান নি তাঁঁর পূর্বসূরিদের জন্য। বিদেশী স্ত্রী নেলী সেনগুপ্তও নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের জন্য।
তাঁদের ত্যাগের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা দেখালাম আজ আমরা। অনেক আগে গায়ের জোরে দখল করা তাঁর বাড়িটা আজ গুড়িয়ে দেয়া হল। জমি চাই, স্মৃতি নয়।
আমি নিশ্চিত, যারা এ কাজটা করেছেন, তারা ইতিহাস পড়েন নি। পড়লে হাত কাঁপত। শ্রদ্ধায় একবার হলেও মাথা নত হত।
…
জেনে রাখা ভালো –
এ সেনগুপ্ত পরিবারের ভূমিতে অথবা উদ্যোগে জে এম সেন হল, জে এম সেন স্কুল এন্ড কলেজ, ডাক্তার খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়, অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয়, কৃষ্ণকুমারী বালিকা বিদ্যালয়, ত্রাহিমেনকা সংগীত মহাবিদ্যালয়, বর্তমান শিশুবাগ স্কুল (যা জে এম সেনের বসতঘর), চট্টগ্রাম সংস্কৃতিক কলেজ, চন্দনাইশস্থ বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চ বিদ্যালয়, বরমা ডিগ্রি কলেজ, বরমা উন্নতমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরমা দাতব্য চিকিৎসালয়, ভারতের কলিকাতা ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত কলেজ, দুর্গাপুর ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
জে এম সেন বা যাত্রামোহন সেন, যতীন্দ্রমোহনের পিতা। ডা. খাস্তগীর তাঁর মাতামহ।