অসামান্য আবিষ্কার , অবহেলিত মহিলা বিজ্ঞানী ! কারণ তিনি নারী !! (ডাবল হেলিক্স)

আবিষ্কার বিজ্ঞান

বিজ্ঞানের ইতিহাসে ডিএনএর গঠন আবিষ্কার ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত আবিষ্কারের একটি। কেননা এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা অবশেষে বুঝতে সক্ষম হন যে, ডিএনএ আসলে কীভাবে কাজ করে, তারা কীভাবে পরস্পরের সাথে আবদ্ধ থাকে। এটি জীববিজ্ঞানে এতটা মূল্যবান ভূমিকা রাখে যে, আবিষ্কারের প্রায় চার বছর পর ১৯৬২ সালে বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিন তাদের এই অসামান্য অবদানের জন্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

বেশ ক’জন বিজ্ঞানীর সহযোগিতাপূর্ণ প্রচেষ্টার ফলেই এই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছিল, সেটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, এর পেছনে যার অবদান অনেক বেশি ছিল, সেই রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের নামই তখন জনসমক্ষে আসেনি। বিজ্ঞানে অবদানের ক্ষেত্রে নারীর অবদানকে অগ্রাহ্য করার ঘটনা নতুন নয়। ওভারিয়ান ক্যান্সারের কারণে রোজালিন্ডের অকালমৃত্যুর চার বছর পরে এই তিন বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। রোজালিন্ড যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো সেদিন বাকিদের সাথে তার নামও এই আবিষ্কারের সাথে উচ্চারিত হতো। রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন আর মরিস উইলকিন একই বিষয়ে, একই গবেষণাগারে কাজ করলেও তাদের কাজের প্রকল্প ছিল আলাদা। তাদের ব্যবহৃত গবেষণাগারটি ছিল সেই সময়কার প্রথম গবেষণাগার, যেখানে ডিএনএ পর্যবেক্ষণের জন্য ‘এক্স-রে ইমেজিং’ ব্যবহার করা হয়। আগে কখনও ডিএনএর গঠন এতটা পরিষ্কারভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়নি।

ব্যাপার হচ্ছে, সেই সময়ে নারীদের গবেষণাগারে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার ছিল না। তাছাড়া, রোজালিন্ড আর মরিসের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল এবং তাদের পদমর্যাদা সমান হওয়া সত্ত্বেও মরিস তার সাথে সহকারীর মতো আচরণ করতেন। এছাড়া কিছু বিপত্তির কারণে রোজালিন্ডের এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি ব্যবহারের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়াটসন ও ক্রিক তার আগেই বৈজ্ঞানিক জার্নালে তাদের ডিএনএ’র গঠন তত্ত্বটি প্রকাশ করে দেন। ফ্রাঙ্কলিন তার একক প্রচেষ্টায় এই জটিল তত্ত্বের উপর কাজ করতে থাকেন। দিন শেষে তার অগ্রগতি দেখে বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। কারণ, একক প্রচেষ্টায় এই তত্ত্বের উপর এমন অসাধারণ বিশ্লেষণ তৈরি করা এক কথায় অসম্ভব! তবে তার ধারণাটি সঠিকভাবে প্রমাণ করার জন্য, সেটিকে গাণিতিক এবং রাসায়নিকভাবে সুনির্দিষ্ট মডেলে রূপান্তর করতে হতো। তিনি সেটি করে দেখানোর আগেই ওয়াটসন ও ক্রিক তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যান। আর এদিকে মরিস উইলকিন তাদের কাছে যেই তথ্য পাঠিয়েছিলেন তাতে তিনি ফ্রাঙ্কলিনের নাম উল্লেখ করেননি। পরে ওয়াটসন ও ক্রিক জানতে পারেন যে, উইলিকিনের পাঠানো তথ্য মূলত ফ্রাঙ্কলিনের থিউরি থেকে তৈরি করা। ক্রিক তার ব্যক্তিগত বিবৃতিতে বলেন, “উইলকিন নোবেলের যোগ্য ছিলেন। তিনি রাতদিন খেটেছেন এই তত্ত্বের উপর। শুরুর দিকের কাজটার জন্য হলেও তিনি পুরষ্কারটির যোগ্য দাবিদার। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তার কাজের খুঁটিনাটি তথ্যগুলো সবই ছিল রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের কাছ থেকে পাওয়া।”

তথ্য কৃতজ্ঞতা —- জাকারিয়া হাসান
জিরো টু ইনফিনিটি !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *