আঠারখাদা সিদ্ধেশ্বরী মঠ

Uncategorized
আঠারখাদা সিদ্ধেশ্বরী মঠ
মাগুরা শহর হতে দেড় মাইল দূরে নবগঙ্গা নদীর ধারে আঠারখাদা গ্রামে সিদ্ধেশ্বরী মঠ অবস্থিত। সিদ্ধেশরী মঠ অতি প্রাচীনকালে স্থাপিত হয়েছে যার সঠিক স্থাপত্য সাল জানা যায়নি।কে বা কারা এই মন্দির নির্মাণ করেন তাও সঠিকভাবে জানা যায়নি। সু-প্রাচীন কালে মঠস্থান কালিকাতলা শ্মশান নামে পরিচিত ছিলো।প্রাচীন কাল হতেই এই শ্মশানে একটি মঠ এবং সিদ্ধেশরী মাতার মন্ত্রে-মন্ত্রাঙ্কিত শিলাখন্ড ও কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল।গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই স্থানটি ছিলো সন্যাসীদের তপস্যাস্থান। সপ্তদশ শতকে রঙ্গমাচার্য নামে বর্তমান চট্রগ্রাম অঞ্চলের এক সন্যাসী সিদ্ধেশ্বরী মঠের স্বামী ছিলেন।বহুকাল পরে যখন ব্রহ্মান্ডগিরি বা ব্রহ্মানন্দগিরি নলডাঙ্গার অধিশ্বর শ্রীমন্ত রায়কে দীক্ষিত করেন,সেই সময় থেকে তিনি এই কালিকাপুর সিদ্ধেশরী মঠে এসে বসবাস শুরু করেন।তখন মঠে সন্যাসীদের বাসপোযোগী তেমন কিছু ছিল না।মাগুরা সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের নলডাঙ্গার রাজাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।শ্রীমন্তরায় দীক্ষা গুরু ব্রহ্মান্ডগিরির আদেশে তখন পূর্ববর্তী মঠে সাধুগণের বাসপোযোগী আশ্রম নির্মাণ করে দেন এবং ২৫০ বিঘা জমি নিষ্কর ভূ-সম্পত্তি দেবোত্তর স্বরূপ দান করেন।ব্রহ্মান্ডগিরি বহুকাল জীবিত ছিলেন।রাজা চন্ডীচরণ,ইন্দ্রনারায়ণ ও সুরনারায়ণ সবাই তার শিষ্য।ব্রহ্মান্ডগিরি অর্ন্তধ্যানের পর কালিকাপুর সিদ্ধেশ্বরী মঠের দিকে পরবর্তী রাজাদের সু-দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়নি।মঠস্বামীদের নিযুক্ত গোমস্থাদের অযত্ন ও স্বার্থপরতার জন্য ক্রমেই এর পূজার অব্যবস্থাপনা এবং মঠের দুরাবস্থা হতে থাকে।শিলাখন্ড চুরি হয় এবং মন্দির ভেঙ্গে ধুলিসাৎ হয়।এমনকি কয়েকজনে মঠের স্থানটি পর্যন্ত নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করার চেষ্টা করেন,কিন্তু প্রতিবন্ধকতায় তা সফল হয়নি।ফলে স্থানটি ভীষন জঙ্গালাকীর্ণ হয়ে পড়ে।প্রায় দুইশ বছর পর অমলানন্দ নামক একজন ব্রাহ্মন সাধু উক্ত স্থানে এসে পুনরায় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি মঠের প্রাচীন মন্দিরের ভগ্নাশেষের উপর নতুন পাকা মন্দির নির্মাণ করেন এবং তার মধ্যে অপূর্ব এক কালিকা প্রতিমা স্থাপন করেন।দুটি শব শিশু কাঁধে করে নীল বরনী শ্যামা শিব বক্ষে নৃত্য করছেন।তার ভীষণামুর্তির অন্তরাল হতে দিব্য কিরণ দৃষ্টি বিচ্যুতি হয়ে পড়ছে। বর্তমানকালে এই ধরনের মূর্তি আর কোথাও দেখা যায়না বা না।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাক-দোসর কর্তৃক মন্দিরের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়।শুধুমাত্র মন্দিরের সামনের তিনটি পিলার সহ মন্দিরের পাকা ভিটা ছিল।পরবর্তীতে কোন একদিন কালীমাতার সাধক কুন্ডেশ্বরী ঔষুধালয়ের কবিরাজ শ্রী দুলাল অধীকারি সপ্নাদ্রষ্ট হয়ে এ্যাডঃ দীপক রায় চৌধুরী,স্বর্ণ ব্যাবসায়ি নারায়ণ চন্দ্র দাস,হস্তরেখাবিদ শ্যামাপ্রসাদ ভট্ট্যাচার্য্য প্রমূখ ব্যক্তিগণকে জানান এবং উক্ত ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় পুনরায় মন্দির সংস্কার করে এবং মূর্তি তৈরী করে নিয়মিতভাবে পুজার ব্যবস্থা করেন।

সম্প্রতি আবারো মন্দিরটি নতুন করে তৈরী করা হয়েছে।বর্তমানে এখানে প্রতি পূণ্য তিথিতে এখানে জাঁকজমপূর্ণভাবে পূজা অর্চনা হয়।নতুন এ মন্দিরটি নির্মানের উদ্দেশ্যে খনন করে প্রায় ১০ ফিট মাটির নিচে পাওয়া গেছে প্রায় হাজার বছর আগের একটি মন্দিরের ধ্বংশাবশেষের কিছু নিদর্শন।সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে কারুকার্যময় নকশা করা বিভিন্ন আকারের ইট।আরো পাওয়া গেছে একটি পুরাতন প্রাচীর।ইটগুলি মন্দিরের ঘরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *