আপনি ড্রাইভারকে আড়ালে ডাকছেন কেন? যা করার এখানে করুন?

Blog আমিনুল ইসলাম
এক চীনা নাগরিকের গাড়ি আটকিয়ে কাগজ-পত্র চেক করছিল পুলিশ। অনেক বেশি সময় লাগার কারনে ওই চীনা নাগরিক গাড়ি থেকে বের হয়ে পুলিশ’কে ইংরেজিতে বলেছে 

-“তোমার তো টাকার দরকার তাই না?” 
এরপর সে ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্যে পুলিশকে টাকা ছুড়ে মেরে বলেছে 
– এই নেও তোমার টাকা। ফাকিং মানি!” 
তো পুলিশ এই বিষয়ে গতকাল বলেছিল- আমরা জানি না পুলিশ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে কিনা। তদন্ত চলেছে। 
আজ অবশ্য পুলিশ বলছে ওই চীনা নাগরিক নাকি পুলিশকে বলেছে 
– আমি যেই দেশ থেকে এসছি (মানে চীনে) পুলিশ এভাবে কাগজ দেখতে চেয়ে টাকা চায়। এই জন্য আমি এমন ব্যাবহার করেছি। আমার ভুল হয়েছে। 
কি চমৎকার ব্যাপার-সেপার! তা আমি যে দুই মাস দেশে থেকে প্রায় ৫ বার এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছি; সেটার কি হবে? প্রতিবার গাড়ি দাঁড় করিয়ে ড্রাইভারের কাছে এটা-ওটা কাগজ পত্র চেয়েছে। সব পেপার দেখানোর পরও ড্রাইভারকে আড়ালে অন্য জায়গায় যেতে বলেছে! মানে তার কাছ থেকে টাকা নেবে! 
প্রতিবার এমন হয়েছে, আমি চুপচাপ পর্যবেক্ষণ করেছি। ঠিক যখন আড়ালে ডাকার ব্যাপার এসছে, তখন’ই ওই পুলিশ’কে প্রশ্ন করেছি 
– আপনি ড্রাইভারকে আড়ালে ডাকছেন কেন? যা করার এখানে করুন? 
পুলিশ ভদ্রলোক অবশ্য এরপরও দমে যায়নি। পারলে আমার সামনেই টাকা নিয়ে নেয় ড্রাইভারের কাছ থেকে। শেষমেশ যখন নিজের পরিচয় দিয়েছি; প্রতিবার পুলিশ ভদ্রলোক গুলো বলেছে 
– আপনি আগে বলবেন না স্যার, এটা আপনার গাড়ি। 
এরপর ড্রাইভারকে ওরাই পথ দেখিয়ে বলছে- যাও যাও। ঠিক মতো যাবে! তার মানে আমার কোন পরিচয় না থাকলে নির্ঘাত ড্রাইভারের কাছ থেকে টাকা খেত। দুই মাসেই আমার অনেক বার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। অথচ এখন দেখছি কিছু বাংলাদেশি নাগরিক আর সেই দেশের পুলিশ বাহিনীর নাকি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে ওই চীনা ভদ্রলোকের আচরণে! 
প্রকাশ্যে রাস্তায় ঘুষ খেলে অবশ্য দেশের ভাবমূর্তির কিছু হয় না এই দেশে! ভাবমূর্তি নষ্ট হয় যখন কেউ প্রতিবাদ করে এসবের! 
এদিকে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন- যে আডিও’তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের বিয়ে হবে না বলে শুনা যাচ্ছে; সেটি নাকি এডিটেড! এটি নাকি তার না! 
অথচ ২০২০ সালে তিনি যখন এই কথা বলেছিলেন; তখনই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র নিজ কানে শুনে ওই ঘটনা নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। সেই পোস্টও দিব্যি বিদ্যমান! 
তিনি একটা মন্তব্য করেছেন। সেটি অন্যায় এবং ভুল মন্তব্য। কোথায় তার উচিত এটি স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চাওয়া; উল্টো তিনি আরেকটা অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছেন মিথ্যা বলে! এতে অবশ্য শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না। 
শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে যখন ছাত্ররা যৌক্তিক আন্দোলন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষক ম্যাডাম নাকি গতকাল বলেছেন- আমরা কোন চাষাভুষা নই। আমাদের সম্মান আছে। আমাদের নিয়ে ছাত্ররা এমন ভাবে কথা বলতে পারে না। 
এই ম্যাডাম অবশ্য ২৪ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় আমাকে প্রশ্ন করেছিলো- কই থেকে উঠে এসছ তুমি? বস্তি থেকে নাকি? 
আমি ভেবেছিলাম এই ২৪ বছরের তার মানসিকতার নিশ্চয় পরিবর্তন হয়েছে। ২৪ বছর আগেই প্রতিবাদ করে বলেছিলাম- কেন ম্যাডাম, বস্তি যারা থাকে তাদের কি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার অধিকার নেই? 
২৪ বছর পর এসেও দেখছি তিনি এতটুকু বদলাননি! তার কাছে এখনও মনে হচ্ছে- চাষাভুষাদের কোন সম্মান নেই! সকল সম্মান কেবল শিক্ষকদের। 
এদিকে বিসিএস এডমিন (প্রশাসন) ক্যাডাদের আজ নাকি সম্মেলন হয়েছে। সেখানে তারা দাবী করেছে- তাদেরকেও বিদেশে মিশনে পাঠাতে হবে। 
বাহ চমৎকার ব্যাপার-সেপার! দেশে কাজ করে উনাদের পোষাচ্ছে না। দেশে তো কোন সমস্যা নেই। তাই বিদেশে মিশনে গিয়ে অন্য দেশের সমস্যা সমাধান করতে চাইছেন উনারা!
লেখা: আমিনুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *