পশ্চিমবঙ্গের বিগ্রেড সমাবেশে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি যেভাবে ‘রক্ত দিয়ে মাতৃভূমি স্বাধীন’ করার কথা বলেছেন সেটা একজন পীরের সন্তান হিসেবে সে ছোটবেলা থেকেই বিশ্বাস করে এসেছে। ফুরফুরা শরীফে তাদের পীর ব্যবসা সুফি মতবাদে হলেও ইসলামের খিলাফত, ইসলামী শাসন, আল্লার আইন বাস্তয়নের দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের তড়িকায় কোন সন্দেহ প্রশন করা হয় না। এটা শুধুমাত্র সালাফি মুসলমানরাই বিশ্বাস করে তা নয়। সুফি পীর কোন তড়িকাতেই ইসলামের মূল রাজনৈতিক শর্তকে অবিশ্বাস করার স্থান নাই। আব্বাস সিদ্দিকির ধর্মনিরপেক্ষ হবার কোন সুযোগ নেই। ইসলামে সেক্যুলারিজম হচ্ছে কুফরি মতবাদ। আব্বাস সিদ্দিকী তার দলের নাম সেক্যুলার পার্টি দিয়েছে দ্বিন প্রতিষ্ঠার কৌশল হিসেবে। ভারতে অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদের কাছে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ সেজে প্রথমে রাজনৈতিকভাবে পোক্ত হতে হবে। এর রেফারেন্স ইসলামে আছে। আাব্বাস সিদ্দিকী জানেন আবিসিনিয়ায় খৃষ্টান রাজা নাজাশী ছিলেন উদার ধর্মমতের অধিকারী যার রাজ্যে ছিলো সকল ধর্মের সমান অধিকার। তাই মুহাম্মদ তার সঙ্গীদের আবিসিনিয়াতে হিযরত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেখানে মুহাম্মদের সঙ্গীরা ধর্মনিরপেক্ষতার সমস্ত সুবিধা নিয়ে ইসলাম প্রচার করতে থাকে এবং এই ধর্মনিরপেক্ষ আবিসিনিয়া একদিন মুহাম্মদের হাতে ইসলামী খিলাফতের অধিন হয়। আবিসিনিয়ার ইহুদী খ্রিস্টান পৌত্তলিকরা ধর্মনিরপেক্ষ শাসন থেকে হয়ে পড়েছিলো ইসলামের হাতে স্রেফ ‘জিন্মি’! জিন্মি নিয়ে কুরআনে স্পষ্ট করে বলা আছে। তারা দেশের মালিক নয়। জিজিয়া কর দিয়ে মুসলমানদের বশ্যতা মেনে তাদের থাকতে হবে। আব্বাস সিদ্দিকি এসব পড়েই বড় হয়েছেন। ভারতকে ‘দারুল হার্বই’ মনে করেন কারণ ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং এখানে ইসলাম অনুসারে চলে না। এটাকে ‘দারুল ইসলাম’ করতে হবে। এটা একজন পীরের সন্তান হিসেবে, একজন প্রাক্টিসিং মুসলমান হিসেবে না মানার কোন কারণ নেই। ফ্রান্সের স্যামুয়েল প্যাটির খুনকে যারা স্বাগত জানায়, ফরাসী প্রেসেডেন্টের ছবিতে যারা জুতা মারে, যারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আল বদরদের মুক্তির পক্ষে থাকে, যারা ব্লগার কিলারদের পক্ষ নেয়, যারা তিন তালাকের অধিকার চায়, সেই ফুরফুরা শরীফের পীরজাদার সঙ্গে বামদের জোট একটুও অবাক করার মত কিছু নয়। বামেররা মুসলিম লীগের সঙ্গেও জোট করেছিলো। বামেরাও জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে ফরাসীরা ইসলাম বিদ্বেষী। ফ্রান্সে জিহাদের আগুন জ্বলে উঠলে তারা এর জন্য ফরাসীদের কোলোনিয়াল যুগের নিপীড়নকেই দায়ী করে। ভারতকে তারা ইতিহাস থেকে একটি দেশ হিসেবে অস্বীকার করে। ভারত নামের কোন দেশই কোনকালে ছিলো না। ভারতীয় কোন জাতিই নয়… ইত্যাদি। কাজেই ভারত ভাগ হলে হোক! বাংলাদেশ, লাহোর, করাচি ভাগ হয়েছে না। কাশ্মির ভাগ হোক, চীন সীমান্তে ভাগ হয়ে যাক। বামরা কিছু শাসন করল, ইসলামিকরা কিছু শাসন করল। এগুলো তাদের অপ্রকাশিত ভাষণ। কিন্তু তাদের ইতিহাস, রাজনৈতিক ইতিহাস এগুলোর পক্ষেই প্রমাণ দাঁড় করায়।
ভারতে হিন্দুত্ববাদ রুখতে ইসলামকে সুযোগ করে দেয়ার একটিও শক্তিশালী যুক্তি বামেরা এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। ইসলাম নিয়ে বামেরদের কোন কালেই সমস্যার ছিলো না। ২০১৮ সালের ইরাকের নির্বাচনে ইসলামিক নেতা মুক্তাদা আল সদরদের দলের সঙ্গে ইরাকের কমিউনিস্ট পার্টি জোট করে নির্বাচনে লড়েছিলো। কারণ মুক্তাদা আল সদর হলেন কট্টর মার্কিন বিরোধী। ইরানের কমিউনিস্ট পার্টি তুহেদ ছিলো খোমিনির বিপ্লবের মিত্র! ১৯৮২ সালে খোমিনি এই তুহেদ পার্টিকে ইরানে নিষিদ্ধ করে কমিউনিস্টদের সঠিক মূল্য চুকিয়েছিলো। বাম বুদ্ধিজীবী মিশেল ফুকো ব্যাখ্যা করেছিলেন ইরানের ইসলামিক বিপ্লবকে কেন তিনি সমর্থন করেছেন, তিনি বলেছিলেন, ইরানের এই বিপ্লবকে ‘ইসলামিক’ বা ‘মৌলবাদী’ তকমায় না ফেলে এটাকে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ইরানের মহান এক বিপ্লব হিসেবে দেখা উচিত…!
পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত সম্পর্কে বড় কিছু বলার সময় আসেনি। তবে এখানে যে খুব পরিস্কারভাবে মুসলিম ভোট মুসলমানদের দলে ফেলার সূচনা তৈরি করে দেয়া হলো তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটি হচ্ছে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে এতদিনকার লড়াইয়ের অর্জন! বিষবৃক্ষের বদলে নতুন বিষবৃক্ষের রোপন…।
#সুষুপ্ত_পাঠক