(১৮+ স্ট্যাটাস। এলার্জি থাকলে দূরে থাকুন। ডাক্তারদের ওসবে অতো এলার্জি থাকলে চলে না।)
আমি বরং কিছু গল্প শোনাই। এগুলো আমার রোগী এবং আত্মীয় স্বজন এর টুকরো টুকরো গল্প।গল্প হলেও কিন্তু সত্যি।
আমার পেশেন্ট। উনার কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা।আমরা বলি ডিস্ক হার্নিয়েশন।মেরুদণ্ডের হাড় সরে গিয়ে নার্ভে চাপ দিচ্ছে। কী ভীষণ ব্যথা আর যন্ত্রণা হয়, আমি জানি। তাই যথাসাধ্য কাউন্সেলিং করেছি।মহিলার স্বীকারোক্তি, স্বামীর সাথে শুইলে ব্যথা বাড়ে। এই কথার কিন্তু আক্ষরিক অনুবাদ করলে হবেনা।স্বামীর সাথে শোয়া মানে এখানে সেক্সুয়াল লাইফ কিংবা যৌন জীবন এর কথা বলা হচ্ছে। যাই হোক, স্বভাব সুলভ উপদেশ দিলাম, শোয়ার সময় আপনি উপরে থাকবেন, ব্যথা কম হবে। মহিলা হতাশ!
-ওটা কী আর সম্ভব? নিষেধ আছে।স্বামীর অকল্যাণ হবে।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম।বউ এর কোমরের ব্যথা সত্ত্বেও স্বামী বেচারা ধৈর্য্য ধরবেনা।তার উপর স্বামীত্বের গরিমা ছাড়বে না। বউকে কোন মতেই উপরে উঠতে দেয়া যাবেনা Boss..তাকে নিচে ই রাখতে হবে।
এতোদিনে আমি ক্লিয়ার বুঝতে পারলাম। আমার মেরুদণ্ডের সমস্যা ধরা পড়ার পর কতিপয় আত্মীয় কেন আমার সংসার টিকবে কিনা এটা নিয়ে খুব ই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।এই সমাজে,জরায়ু অপারেশন করে ফেলে দিলে নারীমহলে কানাঘুষো চলে, ওই সাবু’র মায়ের জরায়ু ফেলে দিয়েছে। আর তো স্বামীর সাথে শুইতে পারবে না। হ্যাঁ জাস্ট এই ভয়েই, কত মহিলা, জরায়ু নামক অঙ্গ কে লালন করে, এটা তাদের ভাষায় মাসিকের রাস্তা দিয়ে বাইরে এসে ঝুলে থাকা অব্দি। আমার মায়েদের জেনারেশন এর অনেকের জরায়ু বাইরে থাকে।পচে যায়। তবু তারা অপারেশন করতে চায় না। জরায়ু না থাকলে স্বামীকে ধরে রাখা যাবেনা যে!
পুরুষ কি কেবল যৌনতাসর্বস্ব একটা প্রাণী?তার অন্তরে দয়ামায়া নেই??মা হিসেবে ছেলের মধ্যে নারীর প্রতি সম্মান জাগ্রত করার দায়িত্ব কি নারীর নয়?যৌনতার বাইরেও বউ এর স্থান আছে। সংসারে তার অবদান আছে। উপরে কিংবা নিচে শুইলে তাতে প্রভাব পড়েনা।এসব কি নারীপুরুষ এর জানা উচিত নয়?জরায়ু ফেলে দিলেই যে যৌনজীবন শেষ হয়ে যাবে, তাও নয়। অর্ধেক জানা সেক্স এডুকেশন নিয়ে এই সমাজের সবার কাছে তাই সেক্স একটা ফ্যান্টাসি। এজন্যই এতো লিটনের ফ্ল্যাট।এজন্যই এতো শিশুকামী, ধর্ষকামী চারপাশে।
সেক্স লাইফ কীভাবে চালাবেন,এ বিষয়ে পুরোটা জানুন। গুগল করে পড়ুন।
নইলে,৪-৫ বাচ্চার জন্ম হবার পর ও আবার বিয়ে করতে মন চাইবে,কাজের মহিলার সাথে সেক্স করতে মন চাইবে।কলিগের সাথে ঘর পাতবেন।হ্যাঁ এসব সত্য।পরিচিত দের মধ্যে ই ঘটেছে। মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে….
প্রেম করে বিয়ে করার ১২ বছর পর,স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন ভদ্রলোক।স্ত্রী সেবা করে সুস্থ করার পর ভদ্রলোক বীরদর্পে কলিগ কে বিয়ে করে ফেললেন। কী চমৎকার প্রতিদান, তাইনা!
৪-৫ বাচ্চার জন্ম হবার পর ভদ্রলোক এর মনে হল, আবার কচি বউ দরকার। বিয়ে করে ফেললেন।
বউকে বেডরুমে রেখে ডাইনিং এ কাজের মহিলার সাথে জড়িয়ে গেলেন ভদ্রলোক। অতঃপর। বিয়ে করে সংসার স্থাপন করতে বাধ্য হলেন।
এক সম্পর্কে থেকে আরেক সম্পর্কে জড়ানো পাপ ই শুধু নয়, প্রতারণা ও।আপনারা তো মিথিলা, প্রভা,তামিমা নিয়ে ট্রল করেন। আরে ওগুলো তো শোবিজ লাইফের ঘটনা। মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন। এখানে পিতৃত্ব কিনতে হয় টাকা দিয়ে।হ্যাঁ,সাত বছরের বাচ্চা ও বুঝে গেছে রোজগার করে বাপের হাতে টাকা তুলে না দিলে পিতৃ পরিচয় থেকেও বঞ্চিত হবে। বাপ যে মাকে রেখে আরেক মহিলা কে বিয়ে করে ফেলেছে।
জীবন টা একটা রঙ্গমঞ্চ!
বহুদিন ধরে,বহুক্রোশ ঘুরে, বহু ব্যয় করি, বহু পথ ঘুরে, পর্বতমালা আর সিন্ধু তো দেখছেন ঠিক ই।ঘর হতে দুই পা ফেলে, একটা ধানের শিষের উপর একটা শিশির বিন্দু দেখা মিস করে ফেলছেন না তো??
সারাদিন ঘরের কাজ করে, বাচ্চার দেখাশোনা করে,শ্বশুর শাশুড়ির দেখভাল করে ক্লান্তশ্রান্ত মধ্যবিত্ত বউটার দিকে তাকান প্লিজ।তার ও বুকের ভেতর সোনার হৃদয় থাকতে পারে।হয়তো ক্লান্তিতে নুয়ে আসা শরীরে সে নায়িকা সুলভ লাস্যময়ী চরিত্র ধারণ করতে পারেনা।হয়তো খিটমিট করে।তবুও যান না, তার সাথে দুদিন রান্নাঘরে!তার শখের জিনিস টা,অযত্নে ফেলে রাখা হারমোনিয়াম কিংবা সু্ঁইসুতো নিয়ে অবসরে বসুন না তার পাশে!বন্ধুবান্ধব এর সাথে আড্ডা দেয়ার ফাঁকে বউ এর জন্য ও একান্ত সময় রাখুন না।!
সে ও তো বন্ধু ই।তার জীবন টা ধারণ করুন,হৃদয় টাও।মা যা শেখান নি, বউ এর কাছ থেকে শিখে নিন।নিজেও শিখিয়ে দিন তাকে, আপনার হৃদয় ছু্ঁয়ে থাকার নিঞ্জা টেকনিক টা।শেখার কোন বয়স তো নেই।দুজনে মিলে করুন না সংসার টা!মধ্যিখানে পিঁপড়া ঢোকার ফাঁকটাও রাখবেন না।
ভালবাসুন, প্রাণ খুলে, প্রকাশ করুন মন খুলে।
শেষ বয়সে,পড়ন্ত বিকেলে এক কাপ চা হাতে পরিতৃপ্ত স্ত্রীর চোখ দুটো স্মৃতিতে রেখেই না হয় চিতায় উঠলেন বা কবরে গেলেন 💓
“যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম,
যদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব ।”
( সামবেদীয় বিবাহ মন্ত্র )
অর্থাৎ তোমার হৃদয় আমার হউক, এবং এই যে আমার হৃদয় তোমার হউক ।
(যারা আমাকে, কেবল পুরুষের দোষ ধরতে দেখেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, গতকালকের স্ট্যাটাস দেখে এসে প্রতিবাদ করবেন।উভয়পক্ষের ই শোধরানো প্রয়োজন, কেউ নির্দোষ নন।)
(জুটি হিসেবে আমরা খুব একটা সফল কেউ নই। আমাদের প্রচুর ঝগড়া হয়েছে। মারমার,কাটকাট,ধুন্ধুমার হয়েছে।বিচারসভা বসেছে।তবু এই ছবি গুলো দেখলে খুব শান্তি পাই।বউ সাজে সজ্জিত মেয়েটার হৃদয়ে হাজার টা প্রজাপতি উড়তো ছেলেটাকে দেখলে। আর ওই ছেলেটার জীবনের সর্বস্ব ছিল মেয়েটা!সংসারের চাপে, আগের অনুভূতি পালটে গেছে মনে হলেই, আমি ছবি গুলো দেখি।ওদের চোখের জ্যোতি দেখি, ছলকে পড়া খুশি দেখি। তারপর আবার এনার্জি পেয়ে যাই 🤪)
দীপিকা চক্রবর্তী