আমি বা আপনি আসলে কেমন আসুন মিলিয়ে দেখি

Uncategorized

আমি বা আপনি আসলে কেমন আসুন মিলিয়ে দেখি ————-
আমাদের বাসায় আমার বাল্যকালে একটা এলসেশিয়ান কুকুর ছিল। তখন আমার কোনো বন্ধু ছিল না। বয়স ছয় সাতের কথা বলছি। স্কুলের পড়া আর গল্পের বই পড়েই সময় কাটতো। অবসরে দেখতাম কুকুরটা ঝিমুচ্ছে । ভয় পেতাম বলেই আমিও দুরে দুরে থাকতাম। সেই কুকুরের  বাবা-মা’র কথা ভাবতাম। সে কই থেকে এলো,তারও কেন আমার মতো বন্ধু নাই এসব ভাবতাম।আমার বাবার এই কুকুরটা খুব প্রিয় ছিল। এতো প্রিয় যে মুক্তিযুদ্ধের সময় পালিয়ে থাকা দিনগুলাতেও তিনি কুকুরকে নিয়ে গেছেন পরিবারের সদস্য হিসেবে। সেই হিসেবে তার গুরুত্ব বুঝতাম । ফলে কুকুর নিয়া আমার কোনো ফিলিংস আমি পরিবারের কারো সাথে তখনও শেয়ার করিনি।
পরে ক্লাস সিক্স থেকেই মিশন স্কুলের আবাসিক ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সব মিলিয়ে একা একাই বড়ো হয়েছি আমি।আমি অর্নাস পড়ার কালে বিডিআর পিলখানায় এক ব্রিগেডিয়ারের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে পড়াইতে যেতাম। তাদের বাসায় গিয়া দেখি একটা এলসেশিয়ান, তিনটা ডোবারম্যান, আর বিড়ালের বাচ্চা কতোটা গুণে শেষ করতে পারি নাই। দেখতাম তাদের জন্য ভালো খানাদানা।
যেসব কথা বলার জন্য এসব বলছি সেইটা হোল কাল এক বন্ধুর সঙ্গে বিতর্ক হলো। সেই বন্ধু ঘনঘন তারও দমি কুকুরের ছবি পোস্ট করেন।  তিনি কেন, আমার আরেক লেখক বন্ধুও অফিসের কাজে যখন দিল্লি আফগানিস্তান, সিডনি যান তখনও সঙ্গী থাকে তার বিড়াল।তার জগতে অসহায়ের জন্য জগতের মায়া। সংবেদনশীলতা।একটা ঘাসফুলের কথা বলবেন, বন উজাড়ের জন্য মিছিলে পা মিলাবেন,বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করবেন। এরপর?
এমন অনেক বিখ্যাত মানুষের মানে গ্রেট যারা তাদের কথা বলছি, তাদেরও এমন শখ আছে যে তা আপনারাও জানেন। নাম বলার আলাদাভাবে দরকার নাই।আমার মেয়েও বিড়াল পোষে।
কিন্তু আমি এই পোষা কুকুর-বিড়ালদের দেখলে ভাবি, তারা যেন কয়েদি।ধরেন, আপনাকে আপনার প্রানীকুল থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে অন্য প্রজাতি তখন কি অবস্থা হবে , ভেবেছেন ?আপনার ভাষার কেউ নেই, আপনার কেউই নেই।ভাই বোন বা বাবা-মা।তখন?ধরেন ভালোবাসলো এরপরও কি আপনি ভালো থাকবেন?
সেই যুক্তিতে যদি বলি এই যে কুকুর বা বিড়াল পোষা এটা কি দাপট নয় ? বলতে পারবেন তাদের ভাষা নেই , অনুভুতি নেই? বলতে পারেন, আমরা তো জীবনের দরকারে মাছ, মুরগি , গরু, ভেড়া মেরেও খাই।পিঁপড়াকেও মাড়িয়ে যাই। ওকে,ওটি না হয় করি যে খাবারের দোহাই দিয়ে, নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার দোহাই দিয়ে । প্রোটিন আমিষের দোহাই দিয়ে। কিংবা হত্যাই করলাম । একেবারেই মরে গেলো। খালাস।কিন্তু তিলে তিলে কষ্ট দেওয়া কি ঠিক অন্য প্রজাতির পোষা প্রাণীগুলোকে? আপনি না দাবি করেন আপনি সংবেদনশীল? রেসিস্ট ফ্যাসিস্ট কিছুই না। তবে?
একটা কবিতা শেয়ার করি।পড়ুন, ক্ষমতা আসলে কেমন চলুন বোঝার চেষ্টা করি।
এই যে ঘাসের মধ্যে লাশ দেখছো
এটা একটা পিঁপড়ের,
আমি ওকে মেরে ফেলেছি।
কারণ তোমরা জানো
পৃথিবী মানুষের জন্য।
এখানে পিঁপড়ে পোকা-মাকড়
যারা ঘাসের মধ্যে হামা দিয়ে বেড়ায়
তাদের কোন স্থান নেই ।
প্রকৃতি যদি ভুল করে থাকে
শোধরাবার দায়িত্ব মানুষের।
অবশ্য পিঁপড়ে যদি দীর্ঘদেহ হতো
হাজারগুণ চওড়া হতো
এবং তার হাতে যদি বন্দুক থাকতো
আমি তাকে সম্মান দেখাতাম ।
(কবি কে জানি না। কুড়িয়ে পাওয়া কবিতা বলতে পারেন। বা কেউ জানলে কবি’র নাম বলতে পারেন।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *