আমেরিকায় নিজের ল্যাবের প্রেশারে আত্মহত্যা করেছেন চুয়েটের সহকারী অধ্যাপক অভিজিৎ হীরা।

Uncategorized

আমেরিকায় নিজের ল্যাবের প্রেশারে আত্মহত্যা করেছেন চুয়েটের সহকারী অধ্যাপক অভিজিৎ হীরা। স্বান্তনার কোন ভাষা নেই। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লিখতেছি।

“বিদেশের সুন্দর সুন্দর ছবি দেখে আমরা ভাবি, আহা জীবনটা কি সুন্দর! পিএইচডি লাইফে কি যে প্যারা নিয়ে চলতে হয় তা বিশেষত সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে যারা পিএইচডি করতেছেন কিংবা করেছেন সবাই জানেন। পেপার কিংবা ব্যক্তিগত অর্জনের বিপরীত দিকে দারুণ একটা অন্ধকার দিক থাকে যেটা আমরা অনেকেই জানিনা, সেটা হচ্ছে ল্যাবের ভয়াবহ প্রেশার। আর প্রফেসর ভালো না হলে তো জীবন পুরোটাই প্যারাময়।

আমি একজনকে চিনি, যিনি প্রতিদিন বাসায় গিয়ে রেখে দেয়া ফুটবলকে ইচ্ছেমতো কিক মেরে যাবতীয় আক্রোশ কিংবা স্ট্রেস কমিয়ে নেন। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই ব্যক্তিগত ডায়েরির পাতা ভরিয়ে তুলেন নিজেদের বাজে অভিজ্ঞতাগুলো দিয়ে! সবাই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এর ভিন্ন ভিন্ন তরিকা বেছে নেয় এতে কোন সন্দেহ নেই! প্রশ্ন হচ্ছে ল্যাব-জীবন কি শুধু এইটুকুই? না। কোরিয়ায় নিজের প্রজেক্টে কাজ করার পাশাপাশি, ল্যাবে আসা বিভিন্ন কোম্পানির কাজ করতে আপনি বাধ্য। আপনার ব্যক্তিগত লাইফ কিংবা আবেগের মূল্য খুব কম প্রফেসরই দিবেন। দিনশেষে আপনি যদি টার্গেট ফিল-আপ না করতে পারেন কপালে জুটবে ভয়াবহ গালি যা সংগতভাবে আপনার ঘুম কেড়ে নিবে!

বাংগালী হিসেবে আমরা সবসময়ই বিভিন্ন কারণে ভীত থাকি! ডিগ্রি হবে কিনা কিংবা ল্যাব থেকে প্রফেসর কিক আউট করে দিলে কি হবে? দেশে ফিরে গেলে মানুষ কি বলবে? ব্যক্তিগতভাবে আমি ইদানীং এই বাক্যগুলোকে একেবারে ইগনোর করা শুরু করেছি। অভিজিৎ হীরা যদি এভাবেই বিষয়টিকে নিতেন তাহলে হয়তো আমেরিকায় গিয়ে উনাকে আত্মহত্যা করতে হতোনা। আমি বলি পিএইচডিতে নিজের গবেষণার পাশাপাশি স্ট্রেস ম্যানেজম্যান্ট-এর সর্বোচ্চ পরীক্ষা আপনাকে দিতেই হবে! ল্যাব সেমিনারে পর্যাপ্ত ডাটা না দিতে পারলে যে অপমানের মুখোমুখি হতে হয় তা আর নাই বলি!

দিনশেষে জীবন একটাই। যার জন্য এই ডিগ্রি! ডিগ্রির জন্য কোন ক্রমেই জীবন নয়। পৃথিবীতে যত বেশি ভালো ল্যাবে যাবেন, যত ভালো পেপার করতে চাইবেন, তত বেশি প্রেশার আপনাকে নিতেই হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে প্রেশার হ্যান্ডেল করবেন এটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রেসার ম্যানেজমেন্টের জন্য সব থেকে ভালো সাপোর্ট হলো পরিবার ও বন্ধুবান্ধব। পারলে তাদের সাপোর্ট দিন কিংবা সাপোর্ট নিন।

ভালো থাকবেন।

শুভ রাত্রি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *