আসুন সরস্বতী দেবীর আত্বকথা সম্পর্কে জেনে নিই

Uncategorized

।।ওঁ তৎসৎ।।
#আসুন সরস্বতী দেবীর আত্বকথা সম্পর্কে জেনে নেই
#সরস্বতীঃ বিদ্যা, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী (ব্রহ্মার পত্নী)
#মন্ত্রঃ
ওঁ ঐঁ সরস্বত্যৈ নমঃ, সরস্বতী (সংস্কৃত: सरस्वती) হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার হিন্দু দেবী। তিনি সরস্বতী-লক্ষ্মী-পার্বতী এই ত্রিদেবীর অন্যতম। এই ত্রিদেবীর কাজ হল ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে যথাক্রমে জগৎ সৃষ্টি পালন করতে সাহায্য করা।
#সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী। হিন্দুরা বসন্তপঞ্চমী (মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী) তিথিতে সরস্বতী পূজা করে।এই দিন ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের হাতেখড়ি হয়। বৌদ্ধ ও পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈনরাও সরস্বতীর পূজা করেন।জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, বালি (ইন্দোনেশিয়া) ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে।
#প্রতিমাকল্প [সম্পাদনা]
ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত প্রতিমা কল্পটিতে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে। নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ সকলবিভবসিদ্ধৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ।।
অর্থাৎ, “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেত পদ্মাসনে (উত্তমরূপে) আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভমানা বাগ্‌দেবী সকল বিভবপ্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন।
আবার পদ্মপুরাণ-এ উল্লিখিত সরস্বতী স্তোত্রম্-এ বর্ণিত হয়েছে,
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা।।১
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা।।২
অর্থাৎ, “দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা।১ অধিকন্তু তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা।।
ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরালবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী।বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।
#শ্রী শ্রী সরস্বতী পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রঃ
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোঽস্তুতে।। নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ। বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।। এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।
#প্রনাম মন্ত্রঃ
ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোঽস্তুতে।। জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
#সরস্বতীর স্তবঃ
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা। শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।। শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারব‌ভূষিতা বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ। পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।। স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্। যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।
#মহাপুরাণে পৌরাণিক কাহিনীঃ
লক্ষ্মী ও সরস্বতী, রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, পরম কুস্মন্দেরে প্ৰথম অংশে দেবী সরস্বতীর জন্ম। তিনি বিষ্ণুর জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হয়েছেন। সরস্বতী বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী; সকল সংশয় ছেদকারিণী ও সর্বসিদ্ধি প্রদায়িনী এবং বিশ্বের উপজীবিকা স্বরূপিনী। ব্রহ্মা প্রথম তাকে পূজা করেন। পরে জগতে তার পূজা প্রতিষ্ঠিত হয়। সরস্বতী শুক্লবর্ণা, পীতবস্ত্রধারিণী এবং বীণা ও পুস্তকহস্তা। তিনি নারায়ণ এর থেকে সৃষ্টি হয় তাই তিনি তাকে স্বামী হিসেবে ভাবতে লাগলেন পরে তিনি গঙ্গার দ্বারা অভিশাপ পান ও পুনরায় শিবের চতুর্থ মুখ থেকে সৃষ্টি হন ও ব্রহ্মা কে পতি রূপে গ্রহণ করেন। তারপর কৃষ্ণ জগতে তার পূজা প্রবর্তন করেন মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে তার পূজা হয়।
গঙ্গা, লক্ষ্মী ও আসাবারী (সরস্বতীর পূর্ব জন্মের নাম) ছিলেন নারায়ণের তিন পত্নী। একবার গঙ্গা ও নারায়ণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসলে, তিন দেবীর মধ্যে তুমুল বিবাদ উপস্থিত হয়। এই বিবাদের পরিণামে একে অপরকে অভিশাপ দেন। গঙ্গার অভিশাপে আসবারী নদীতে পরিণত হন। পরে নারায়ণ বিধান দেন যে, তিনি এক অংশে নদী, এক অংশে ব্রহ্মার পত্নী ও শিবের কন্যা হবেন এবং কলিযুগের পাঁচ হাজার বছর অতিক্রান্ত হলে সরস্বতী সহ তিন দেবীরই শাপমোচন হবে।গঙ্গার অভিশাপে অসাবারি মর্ত্যে নদী হলেন এবং ব্রহ্মার পত্নী হলেন ও শিবের চতুর্থ মুখ থেকে সৃষ্টি হয়ে তার কন্যা হলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *