আহমদ ছফার অজ্ঞতাঃ ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ উন্মোচন (১)
প্রয়াত আহমদ ছফাকে তাঁর ভক্তদের কেউ-কেউ “মহাত্মা” বলে সম্মান করেন এবং জ্ঞানের এক বিশাল ভাণ্ডার ও ক্ষণজন্মা বুদ্ধিজীবী হিসেবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। আমি যদিও আহমদ ছফাকে আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছাত্রত্ব-কালে চিনতাম, কিন্তু মৃত্যুর পর তিনি “মহাত্মা” হয়ে উঠবেন ভাবিনি। যাহোক, এখানে প্রয়াত আহমদ ছফার ‘আত্মা’ নয়, ববং বুদ্ধিবৃত্তিক উৎপাদন ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ রচনাটির আলোকপাতে প্রবৃত্ত হই।
আহমদ ছফার ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ শীর্ষক রচনাটি কোনো সাব-হেডিং ছাড়া ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যার অধীনে ছোটো-ছোটো ৯টি অধ্যায়ে সংগঠিত করে প্রায় ৭ হাজার শব্দে উপাস্থাপন করেছেন এবং প্রায় একই কথার নানাভাবে পুনরাবৃত্তি করেছেন। তিনি শুরু করেছেন ‘শহীদে কারবালা’ নামের একটি পুঁথিতে বর্ণিত খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে আরবের কারবলা যুদ্ধে ইমাম হুসেইনের পক্ষে হিন্দু-ব্রাহ্মণদের অংশগ্রহণের ঘটনার উল্লেখ দিয়েঃ
“‘শহীদে কারবালা’ পুঁথিতে কবি কারবালার যুদ্ধে শহীদ হজরতের দৌহিত্র হজরত হোসেনের মস্তকসহ ঘাতক সীমারের দামেস্ক যাত্রা অংশটি রচনা করতে যেয়ে তাঁর কল্পনাশক্তির অবাধ ব্যবহার করেছেন। কবি বিষয়টি এভাবে বর্ণনা করেছেন: কারবালা থেকে দামেস্ক যাচ্ছে সীমার, মনে অপার আনন্দ, এখন হজরত হোসেন বিগতজীবন, কাঁধের বর্শার অগ্রভাগে শোভা পাচ্ছে তাঁর কর্তিত মস্তক। লক্ষ টাকা পারিতোষিক লাভ করার পথের যাবতীয় প্রতিবন্ধক অন্তর্হিত। নিশ্চয়ই বাদশাহ্ নামদার এজিদ তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করবেন। যেতে যেতে সন্ধ্যে হলো পথে। সে রাতের জন্য সীমারকে এক গৃহস্থের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হলো। গৃহকর্তার নাম পুঁথিলেখকের জবানীতে আজর। হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তার ওপর আবার ব্রাহ্মণ। সেই রাতে হজরত হোসেনের ছিন্ন মস্তক এক অলৌকিক কাজ করে ফেলল। গৃহকর্তা আজর, তাঁর ব্রাহ্মণী, সাতপুত্র এবং সাত পুত্রবধূ এক সঙ্গে কাটা মস্তকের মুখে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।”
আহমদ ছফা কবির নাম উল্লেখ করেননি। তাই, লেখাটি কোনো কবির কবিত্বের সমালোচনা হিসেবে ধরা যায় না। আর, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে তিনি যা লিখেছেন, তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি সাহিত্যের একটা জান্রা (genre) হিসেবে পুঁথির সমালোচনা করেছেনঃ
“পুঁথি-পুরাণের জগতে এরকম অলৌকিক কাণ্ড প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। ওই জাতীয় সাহিত্যের বেশির ভাগেরই একটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মের মহিমা কীর্তন করা। সেজন্যে পুঁথি-পুরাণের নায়কদের চরিত্রে সম্ভব-অসম্ভব সব রকমের ক্ষমতা এবং গুণগ্রাম আরোপ করাটাই বিধি। এদিক দিয়ে দেখতে গেলে আধুনিক প্রোপাগান্ডা লিটারেচারের সঙ্গে পুঁথিসাহিত্যের একটা সমধর্মিতা আবিষ্কার করা খুব দুরূহ কর্ম নয়।”
শুরুতেই বুঝা দরকার যে, ‘শহীদে কারবালা’ ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে রচিত হলেও এটি ইতিহাস-গ্রন্থ নয়। এটি ঐতিহাসিক উপাদান নিয়ে কবির কল্পনা-সংযুক্ত একটি সাহিত্যিক জান্রা (genre), যার জেনেরিক (generic) নাম হচ্ছে পুঁথি। পুঁথি শুধু ধর্মীয় কাহিনী নিয়েই নয়, মানব-মানবীর প্রেম কাহিনী, সমসায়িক ঘটনাবলী, ইত্যাদি নিয়েও পুঁথি আছে। সাহিত্যবিশারদগণ পুঁথি সাহিত্যকে অন্ততঃ ৬ ভাগে ভাগ করেছেন। ফলে, এ-দাবী ঠিক নয় যে, “ওই জাতীয় সাহিত্যের বেশির ভাগেরই একটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মের মহিমা কীর্তন করা।”
পুঁথি সুর করে পাঠ করা হয় বলে এর সরল ছান্দিক ও শাব্দিক সৌন্দর্য্যটি ঘটনার সাথে যুক্ত হয়ে পাঠক-শ্রোতার কাছে আদরণীয় হয়ে ওঠে। স্বভাবতঃ সাহিত্যের নানা উপাদান পুঁথিতে রয়েছে, যেটির উপলব্ধি না থাকলে সাহিত্যিক জ্ঞান ও ভাষাবিজ্ঞান বিবর্জিত ব্যক্তির কাছে অদ্ভুত মনে হতে পারে।
সাহিত্যে অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃতিক কাণ্ডের সংযুক্তি শুধু বাংলা পুঁথি সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য নয়। ইংরেজীতে যে-গথিক (Gothic) সাহিত্য দীর্ঘকাল যাবৎ চর্চিত ও সমাদৃত এবং যার শুরু Horace Wolepole রচিত ও ১৭৬৪ সালে প্রকাশিত ‘The Casltel of Otrranto: A Gothic Story’র মাধ্যমে এবং এখনওপর্যন্ত যা টিকে আছে (যেমন Mark Z Danielewski রচিত ও ২০০০ সালে প্রকাশিত ‘The House of Leaves’), তার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হচ্ছে অলৌকিক কাণ্ড।
শেইক্সপীয়ারের বিখ্যাত নাটক জুলিয়াস সিজার, হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, টেম্পেস্ট ইত্যাদিতে রয়েছে অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃতিক শক্তির বিশেষ ভূমিকা।আধুনিক কালেও অতিপ্রাকৃতি থিম ও চরিত্র নিয়ে নানা সাহিত্য রচিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে নানা ভাষার নানা, নানা ধর্মের, নানা জাতির মধ্যে।সুতরাং, সাহিত্যে অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃতির অন্তর্ভুক্তি বাংলা সাহিত্য কিংবা বাঙালীত্বর কিংবা বাঙালী মুসলমানত্বের একান্ত বৈশিষ্ট্য নয়।
বর্তমান প্রসঙ্গে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছেঃ সাহিত্যের সমালোচনার মধ্য দিয়ে একটি জাতির অন্তর্গত একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের ‘মন’ বিশ্লেষণের পদ্ধতিটি কী? একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের ‘মন’ বলতেই বা কী বুঝায় এবং কীভাবে সে-মনের পরিচয় পাওয়া যায়? তার বিজ্ঞান সম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উপায় কী?
সাহিত্যের আধার ও আধেয় দিয়ে একজন লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃষ্টিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়, কিন্তু একটি জাতি ও সম্প্রদায়ের মনের পরিচয় আঁকার যুক্তিসঙ্গত কাঠামো বা সূত্র থাকা প্রয়োজোন। উদাহরণ স্বরূপ, দস্যু মোহন, দস্যু বাহরাম কিংবা দস্যু বনহুর সিরিজ-উপন্যাসে যে দস্যুবৃত্তির বিবরণ আছে, তা এমন সিদ্ধান্ত টানা ঠিক হবে না যে, এদের লেখকগণ ও পাঠকগণ দস্যু মনোবৃত্তির।
আমি এটি বলতে চাচ্ছি না যে, একটি ঐতিহাসিক কালে সাহিত্যের একটি জান্রাতে যে-বৈশিষ্ট্য থাকে, তাতে সে-কালের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে ক্রিয়াশীল লেখকের বোধ ও মননের পরিচয় পাওয়া যায় না। এমনটি নির্ণয় করা যতোই সহজই হোক না কেনো, সেখান থেকে পাঠকের মনের পরিচয় পাওয়া খুবই কঠিন। কারণ, সাহিত্যে লেখকের দেওয়া উপাত্ত থাকলেও পাঠকের দেওয়া কোনো উপাত্তই থাকে না, যদিও একটি বিশেষ জান্রার উদ্ভব ও বিকাশের সাথে পরোক্ষভাবে পাঠকের মনের একটি দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ভাবা যেতে পারে। কিন্তু সাহিত্য থেকে একটি জাতি ও সম্প্রদায়ের মনোবিশ্লেষণের বিজ্ঞান-সম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ ফ্রেইমওয়ার্ক ও পদ্ধতির উদ্ভাবন ও অনুসরণ ছাড়া তা সাবজেক্টিভ হতে বাধ্য।
একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের ঘটনাদি পাঠের ডিসিপ্লিন হচ্ছে ইতিহাস। কিন্তু তার মনের পরিচয় অনুধ্যান করার ডিসিপ্লিন হচ্ছে ‘সৌশ্যাল সাইকোলজি’, ‘কালচার্যাচল স্টাডি’, কিংবা ‘কালচার্যারল হিস্ট্রি’, যেখানে তাদের অতীত ও সমকালীন সাহিত্যের বিশ্লেষণও একটি উপাদন ও উৎস হিসেবে বিবেচিত ও ব্যবহৃত। কিন্তু সাহিত্যের একটি জান্রা (পুঁথি) একটি উপবিভাগ (যুদ্ধ-পুঁথি) এবং সে-উপবিভাগের মধ্যে থেকে একটি মাত্র ঘটনা (কারবালা-যুদ্ধ) ভিত্তিক কিছু সাহিত্যকর্ম থেকে উদ্ধৃতিহীন কিছু তথ্য নিয়ে এবং কোনো প্রকার ডিসকৌর্য কিংবা কণ্টেণ্ট এ্যানালাইসিসের ফ্রেইমওয়ার্ক ও পদ্ধতির ধার না ধারে একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের ‘মন’ চিত্রিত করা মোটেও কোনো বৈধ ও নির্ভযোগ্য পদ্ধতি হতে পারে না।
সাহিত্য সমালোচনারও বিভিন্ন তত্ত্ব আছে এবং বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।যাচ্ছেতাই মন্তব্য করাকে সাহিত্য সমালোচনা বলা যায় না। আমার এ-লেখার আলোকপাত স্থির রাখার্থে আমি সাহিত্য সমালোচনার বিবিধ তত্ত্ব ও পদ্ধতির আলোচনায় যাবো না। কিন্তু পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে ফিকশন বা কল্পসাহিত্যের বিশ্লেষণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের কথা উল্লেখ করবো। সাহিত্যের, বিশেষতঃ ফিকশনের, বিশ্লেষণে আমরা মোটামুটি ৭টি উপাদনের ওপর আলোকপাত করিঃ
(১) সেটিং বা পটভূমিঃ সাহিত্যের বিশ্লেষণে সেটিং বা পটভূমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পটভূমি হতে পারে দু’প্রকারের। প্রথম পটভূমি হচ্ছে সাহিত্যকর্মটি কার, কোথাকার ও কখনকার ঘটনার ওপর নির্মিত করছে; আর দ্বিতীয়টি সাহিত্যকর্মটি কোথায়, কখন ও কার দ্বারা সৃষ্ট হচ্ছে।
(২) প্লট বা কাহিনীঃ কল্পসাহিত্যের প্লট বা কাহিনী হচ্ছে ঘটনার পরম্পরা, যা হতে পারে সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং সাহিত্যকের ইচ্ছামাফিক কার্য-কারণ সম্পর্কিত; কিংবা বাস্তব ঘটনা ভিত্তিক, যা সাহিত্যেকের পর্যবেক্ষণ অনুসারে উপাস্থাপিত; কিংবা হতে পারে এ-দু’য়ের সংমিশ্রণ, যা সাহিত্যকের পর্যবেক্ষণ এবং ব্যাখ্যামূলক উদ্ভাবনী উপাদান সংযুক্ত করে প্রক্ষেপিত। কল্প সাহিত্যের কাহিনী উপর বর্ণিত পটভূমির দু’টি দিককেই ধারণ করতে পারে।
(৩) ক্যারেক্টার বা চরিত্রঃ কল্পসাহিত্যে যে-ক্যারেক্টার বা চরিত্র নির্মাণ করা হয়, তাঁদের কেউ-কেউ হতে পারেন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব আশ্রিত কিংবা সম্পূর্ণ কাল্পনিক কিংবা দু’য়ের সংমিশ্রণ। চরিত্রগুলোর বচন ও আচরণের বিবরণ থেকেও নির্দেশিত পটভূমি সম্পর্কে সাহিত্যিকের পর্যবেক্ষণ ও ভাষ্য উপলব্ধি করা যায় এবং তাঁর ওপর আস্থা নির্ভরে সে-পটভূমির সামাজিক ও মানসিক চিত্র লাভ করা যায়।
(৪) থিম বা ভাবঃ থিম বা ভাব হচ্ছে সাহিত্য রচয়িতার এমন একটি চিন্তা যা তিনি তাঁর পাঠক তথা সমাজের কাছে উপস্থাপন করে এর ওপর আলোকপাত করার তাগিদ বোধ করেন। এ-তাগিদ হতে পারে লেখকের সমাজিক দায়িত্ববোধ থেকে, শিল্পসৃষ্টির বোধ থেকে, জীবিকার প্রয়োজনে, পাঠকের চাহিদা মেটোনো প্রয়োজন বোধ থেকে, কিংবা বিশেষ উদ্দেশ্য থেকে।
(৫) ভিউ-পয়েণ্ট বা দৃষ্টিকোণঃ প্রতিটি কল্পসাহিত্যেরই একটি পয়েণ্ট অফ ভিউ বা দৃষ্টিকোণ থাকে, যেখান থেকে প্লট বা কাহিনীটি দেখা হয়। সাধারণতঃ তিনটি পয়েণ্ট অফ ভিউ থাকেঃ
ক. ফার্স্ট পার্সন বা উত্তম পুরুষ, যেখান কাহিনীর কথক ‘আমি’ কিংবা ‘আমরা’র অবস্থান থেকে কাহিনীর বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করেন।
খ. সেকেণ্ড পার্সন বা মধ্যম পুরুষ, যেখানে পাঠককে একটি চরিত্র দান করে কাহিনীটি তাঁর দৃষ্টিতে এগিয়ে চলে।
গ. থার্ড পার্সন বা তৃতীয় পরুষ, যেখান লেখক অমনিশিয়েণ্ট বা সর্বজ্ঞ তথা অন্তর্যামী হয়ে পাঠের কাছে সবার বোধ ও অনুভূতি প্রকাশ করেন। তবে কোনো ক্ষেত্রে সর্বজ্ঞ না হয়ে বরং একজন তৃতীয় ব্যক্তির সীমিত বা লিমিটেড দৃষ্টিকোণ থেকে কাহিনী বলে যান।
(৬) স্টাইল বা শৈলীঃ স্টাইল হচ্ছে উপরের সবকিছুর উপস্থাপনায় লেখকের শৈলী, এতে রয়েছে ডিকশন বা শব্দের নির্বাচন, সিনট্যাক্স বা ভাষার বিন্যাস, ও ভয়েস বা কণ্ঠ, যা একত্রে লেখকের বিশেষত্বকে তুলে ধরে এবং তাঁকে স্বাতন্ত্র্য দান করে।
(৭) লিটেরারি ডিভাইস বা অর্থালঙ্কারঃ লিটের্যা রি ডিভাইস বা অর্থালঙ্কার হচ্ছে লেখকের শাব্দিক হাতিয়ার, যা দিয়ে তিনি নিজস্ব স্টাইল অনুযায়ী সাহিত্যের দেহ নির্মাণ ও সজ্জিত করেন। কল্পসাহিত্যে ব্যবহৃত অনেক ডিভাইসের মধ্যে মাত্র ১০টি তুলে ধরছিঃ
ক. সিমিলি বা উপমা – যেখানে একটি সত্তা বা ঘটনার সাথে অন্যটির সাদৃশ্য দেখানো হয় ‘মতো’, ‘যেনো’, ‘ন্যায়’ কিংবা ‘যেমন’-‘তেমন’ শব্দ ব্যবহার করে। যেমনঃ “মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম/ মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল,/মোরা বিধাতার মত নির্ভয়/মোরা প্রকৃতির মত স্বচ্ছল।”
খ. মেটাফর বা উৎপ্রেক্ষা – যেখানে একটি সত্তা বা ঘটনাকে প্রতীক রূপে ব্যবহার করে অন্যটি একটি বুঝানো হয়। যেমনঃ “তুমি যে আমার কবিতা, আমারও বাঁশীর রাগিনী, আমারই স্বপন, আধো-জাগরণ, চিরদিন তোমারে চিনি।”
গ. পার্সোনিফিকেইশন বা ব্যক্তিকরণ – যেখানে নির্বাক প্রাণী, উদ্ভিদ, জড়বস্তু মানুষের মতো অনুভূতি প্রকাশ করে এবং কথা বলে। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘাটের কথাঃ “পাষাণে ঘটনা যদি অঙ্কিত হইত তবে কতদিনকার কত কথা আমার সোপানে সোপানে পাঠ করিতে পারিতে। পুরাতন কথা যদি শুনিতে চাও তবে আমার এই ধাপে বইস; মনোযোগ দিয়া জলকল্লোলে কান পাতিয়া থাকো, বহুদিনকার কত বিস্মৃত কথা শুনিতে পাইবে।”
ঘ. আইরনী বা বিড়ম্বনা – যেখানে প্রত্যাশার উল্টটি বলে বা ঘটিয়ে বিশেষ অনুভূতি তৈরি করা হয়। যেমনঃ সিগারেটে সুখটান দিয়ে ডাক্তার রোগীকে বললেন, বাঁচতে হলে আপনাকে ধুমপান ত্যাগ করতে হবে। আইরনী তিন প্রকারের হয়ঃ ভার্ব্যাল বা শাব্দিক, ড্রামাটিক বা নাটকীয়, ও সিচুয়েশন্যাল বা পরিস্থিতিক।
ঙ. হাইপারবলি বা অত্যুক্তি – যেখানে বাস্তবতাকে বাড়িয়ে বলা হয়। যেমনঃ “হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে” কথাটিতে হাজার বছর ধরে হাঁটা একটি হাইপারবলি, কারণ কোনো ব্যক্তির পক্ষে এক হাজার বছর ধরে হাঁটা সম্ভব নয়, কিন্তু এটি অসম্ভব কথাটি একটি বিশেষ অর্থ তৈরি করে কাব্য সৌন্দর্য্য গঠন করেছে।
চ. অক্সিমোরন বা বিরোধাভাস – যেখানে দু’টি বিপরীত শব্দের সংমিশ্রণে একটি বিশেষ অর্থ সৃষ্টি করা হয়। যেমনঃ ভণ্ডপীর, ঠাণ্ডাযুদ্ধ, জীবনামৃত, সাধুশয়তান ইত্যাদি।
ছ. অনোমেটোপিয়া বা ধ্বনিবৃত্তি – যেখানে প্রাণীর বা প্রকৃতির শব্দের অনুকরণ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ পায়ের নীচে শুকনো পাতা মচ্-মচ্ করে ওঠার সাথে-সাথে কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে ছুটে আসতে দেখে আমি দৌড়াতে গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেলাম।
জ. এ্যালিটারেশন বা অনুপ্রাস – যেখানে একই ধ্বনি যুক্ত নানা শব্দের সম্মিলন ঘটে। যেমনঃ “গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গগনে” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ঝ. ইমাজেরী বা কল্পচিত্র – যেখানে না সংবেদনশী শব্দ প্রয়োগ করে পাঠকের মনে একটি সত্তা, পরিস্থিতি, বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে মানসিক চিত্র তৈরি করা হয়। যেমনঃ চারদিকে নিথর রক্তাক্ত লাশ। কয়েকটি দেহ গলা-বিচ্ছিন্ন, ছিন্ন মাথায় চোখ টিকরানো, থেতলানো মুক্তমণ্ডল বিকৃত ও বীভৎস। শিশিরের কান্না, ঝরা পাতার আর্তনাদ,
ঞ. প্যারাডক্স বা স্ববিরোধ – যেখানে পরস্পর-বিরোধী ধারণার সমন্বয় ঘটে। প্যারাডক্স ব্যবহার করা হয় পাঠকের মধ্যে ক্রিটিক্যাল থিংকিং বা সূক্ষ্মচিন্তা চাগিয়ে দিয়ে বক্তব্যের স্ববিরোধিতা অনুধাবন করে রস আস্বাদন করা। যেমনঃ “ঘোড়া চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল, কিছু দূর যাইয়া মর্দ রওনা হইল।”
আগেই বলেছি, সাহিত্য ইতিহাস নয়। সাহিত্য কোনো সংবাদ প্রতিবেদনও নয়। কল্পসাহিত্যে ইতিহাস কিংবা সংবাদ প্রতিবেদনের মতো বস্তুনিষ্ঠতার প্রয়োজন নেই। কারণ, সাহিত্যের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সাহিত্যিকের পক্ষ থেকে রস-সৃষ্টি এবং পাঠকের তরফে রস-আস্বাদন। উপরের লিটের্যারি ডিভাইসগুলো বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হলো, পাঠক যেনো আহমদ ছফার ‘কাণ্ডজ্ঞান’ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে তাঁর কাণ্ডজ্ঞান বুঝতে সক্ষম হন।
আহমদ ছফা পুঁথি-সাহিত্য বিশ্লেষণ করেছেন সম্ভবতঃ সাহিত্য বিশ্লেষণ সম্পর্কে কোনো প্রকারের বিদ্যায়তনিক কিংবা স্বকীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই। তাই, তিনি সাহিত্যকে বিচার করতে চেয়েছেন ‘কাণ্ডজ্ঞান’ দ্বারা। নীচের উদ্ধৃতি লক্ষ করলে তাঁর কাণ্ডজ্ঞানের চেহারা বুঝা যায়ঃ
“ঐ জাতীয় সাহিত্যে সচরাচর যে অবাস্তব-অলৌকিক কাণ্ড ঘটে থাকে, ঘেঁটে একটা তালিকা সংগ্রহ করলে ছিন্ন মস্তকের মুখে কলেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাটা খুব আশ্চর্য ঠেকবে না। পুঁথি-পুরাণের রচয়িতাদের পাল্লায় পড়ে বনের হিংস্র বাঘ, শিংঅলা হরিণ পর্যন্ত মানুষের ভাষায় কথা বলে, দুঃখে রোদন করে, কাটা মাথা তো কোন্ ছাড়! সুতরাং ধরে নেয়া ভালো পুঁথি-পুরাণের জগতে জাগতিক নিয়মের পরোয়া না করে লোমহর্ষক ঘটনারাজি একের পর এক অবলীলায় ঘটে যেতে থাকবে। রোমাঞ্চকর হিন্দি ছবির দর্শকের মতো পাঠকের রুদ্ধশ্বাসে দেখে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না; সম্ভব-অসম্ভব, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন তোলা অর্থহীন। যেমন: ‘লাখে লাখে সৈন্য চলে কাতারে কাতার/গণিয়া দেখিল মর্দ চল্লিশ হাজার।’ এ জাতীয় পংক্তি পাঠ করার পরেও বুদ্ধিমান সিরিয়াস মানুষের মনে কোনো জিজ্ঞাসা-চিহ্ন জাগে না। অর্থাৎ সকলেই ধরে নিয়ে থাকেন, পুঁথি-পুরাণের জগতে এ জাতীয় ঘটনা হামেশা ঘটতেই থাকবে। এ নিয়ে মনকে কষ্ট দেওয়া খামোখা পণ্ডশ্রম। কাণ্ডজ্ঞানকে ফাঁকি দেয় এ জাতীয় এন্তার ঘটনা সম্বন্ধে ওয়াকেবহাল হতে হবে, সে ব্যাপারে আগাগোড়া প্রস্তুতি গ্রহণ করেই পুঁথি-পুরাণের জগতে প্রবেশ করা উত্তম।”
আহমদ ছফা কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে “লাখে লাখে সৈন্য চলে কাতারে কাতার/গণিয়া দেখিল মর্দ চল্লিশ হাজার”-এর মতো একটি চমৎকার প্যারডক্সের সাহিত্য-সৌন্দর্য্য ও মূল্য বুঝতে না পেরে তুচ্ছজ্ঞান ও ব্যঙ্গ করেছেন। এ-প্যারাডক্স দিয়ে কবি প্রথমে নির্দেশ করেছেন মানুষের আন-ক্রিটিক্যাল পার্সেপশন বা অনুমান এবং পরের লাইনেই দেখিয়েছেন যে অনুমান যখন লাশ-গণনার মতো বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতিতে ফেলে যাচাই করা হয়, তখন অনুমানের বিশালত্ব গণনার বস্তুনিষ্ঠতায় লাখ-লাখ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে মাত্র চল্লিশ হাজারে ঠেকে।
উপরের প্যারাডক্স দ্বারা কবি শুধু রসের সৃষ্টিই করেননি, এর দ্বারা তিনি মানুষের আন্দাজ ও গণনা তথা প্রত্যক্ষণ ও বাস্তবতার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখিয়ে থাকবেন। এটি একটি কালোত্তীর্ণ ও দেশোত্তীর্ণ পংক্তি। কারণ, পৃথিবীর দেশে-দেশে যুগে-যুগে যুদ্ধে হতাহতের আন্দাজ ও গণনার মধ্যে যে-দ্বন্দ্ব থাকে, তা বুঝাতে একটি চমৎকার উদ্ধৃতি হতে পারে এটি।
আহমদ ছফা কাণ্ডজ্ঞানের ওপর নির্ভর করে সাহিত্য সমালোচনায় শুধু-যে আনাড়ির পরিচয় দিয়েছেন, তা নয়; তিনি তাঁর কাণ্ডজ্ঞানের ওপর এতোই আত্মপ্রত্যয়ী যে, ইতিহাসের অনসন্ধান না-করে ইতিহাস সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তাতেও তেমন ক্ষতি ছিলো না, যদি না তিনি তা থেকে বাঙালী মুসলমানের ‘মন’ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত টানতেন। নীচে তাঁর কাণ্ডজ্ঞানজাত ইতিহাসবোধ ও মনঃস্তাত্ত্বিক সিদ্ধান্তের নমুনা তুলে ধরছিঃ
“যেমন ধরা যাক, কারবালা থেকে দামেস্কে যাওয়ার পথে কোনো ব্রাহ্মণের বসবাসের বিষয়টি। তা তো একরকম জানা কথাই যে কোনো ব্রাহ্মণের সেখানে নিবাস থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু তাহলে কি হবে, পুঁথিলেখকের সেটি জানা থাকা চাই তো। কারবালা-দামেস্কের মাঝপথে নয়, গোটা আরবদেশে ব্রাহ্মণ না থাকুক তাতে পুঁথিলেখকের কি আসে যায়! এই বাংলাদেশে তো ব্রাহ্মণ আছে! আর আমাদের পুঁথিলেখক ভদ্রলোকটি তো বাঙালী এবং তিনি ব্রাহ্মণ জাতটার ওপর হাড়ে হাড়ে চটা। সুতরাং অনায়াসে ব্রাহ্মণকে কারবালা-দামেস্কের মাঝপথে বসিয়ে স্ত্রী-পুত্রসহ সপরিবারে তাঁকে দিয়ে কলেমা পড়িয়ে মানসিক ঘৃণার মানসিক প্রতিশোধ নেয়া যায় এবং নিয়েছেনও।“
উপরের উদ্ধৃতির মধ্যে দু’টো বাক্যের ওপর বিশেষ আমি জোর দেবো। কারণ, প্রথমটি তাঁর আর্গ্যুমেণ্টের প্রেমিস এবং দ্বিতীয়টি তাঁর কনক্লুশন। আহমদ ছফার আর্গ্যুমেণ্টের প্রেমিস ও কনক্লুশন নিম্নরূপঃ
(১) আহমদে ছফা তাঁর প্রেমিস দাঁড় করিয়েছে অতি নিশ্চয়তার এই স্টেইটমেণ্ট বা বিবৃতি দিয়ে যে, “তা তো একরকম জানা কথাই যে কোনো ব্রাহ্মণের সেখানে নিবাস থাকা সম্ভব নয়।”
(২) তাঁর এ-রূপ নিশ্চয়তার ভিত্তিতে তিনি তাঁর প্রত্যক্ষিত অসাম্ভব্যতার একটি কারণ দাঁড় করিয়ে কনক্লুশন টানছেন যে, “সুতরাং অনায়াসে ব্রাহ্মণকে কারবালা-দামেস্কের মাঝপথে বসিয়ে স্ত্রী-পুত্রসহ সপরিবারে তাঁকে দিয়ে কলেমা পড়িয়ে মানসিক ঘৃণার মানসিক প্রতিশোধ নেয়া যায় এবং নিয়েছেনও।”
আহমদ ছফার রচনার সমালোচক হিসেবে আমার কাজ হবে তাঁর আর্গ্যুমেণ্ট বা যুক্তিকে ইনভ্যালিড বা অসিদ্ধ প্রমাণিত করা। আর এটি প্রমাণ করবো আমি তাঁর প্রেমিসকে অসত্য প্রমাণ করার মধ্য দিয়ে।
আরবে ব্রাহ্মণ উপস্থিতি
আমি বর্তমান প্রজন্মের অতি-পরিচিত ক্ষেত্রের থেকে শুরু করছি। পাঠকদের অনেকেই হয়তো ভারতের চলচ্চিত্র তারকা সঞ্জয় দত্তকে চেনেন এবং এটিও জানেন যে, সঞ্জয় দত্তের বাবা ছিলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র তারকা সুনীল দত্ত ও মা নার্গিস দত্ত, যাঁরা উভয়ে জাতিতে পাঞ্জাবী হলেও ধর্মবিশ্বাসে যথাক্রমে হিন্দু ব্রাহ্মণ ও মুসলমান শিয়া। যাহোক, পাঠকদের অনেকেই হয়তো জানেন না যে, পাঞ্জাবী দত্তরা হচ্ছে মুহালী বা মোহালী ব্রাহ্মণদের ৭ গোত্রের মধ্যে একমাত্র যোদ্ধা-গোত্র যাঁরা ‘হুসেইনী ব্রাহ্মণ’ নামে সমধিক পরিচিত।
পাঠক কি ‘হুসেইনী ব্রাহ্মণ’ শুনে তড়িতাহত? হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত করছি যে, তাঁরা ‘হুসেইনী ব্রাহ্মণ’ (Hussaini Brahmin)। প্রশ্ন হতে পারেঃ ‘হুসেইনী ব্রাহ্মণ’ আবার কী? হুসেইনী ব্রাহ্মণ কারা, তার পরিচয় দিতে আমি একাধিক সূত্র থেকে উদ্ধৃতি দেবো, যাঁদের দু’জন খোদ হুসেইনী ব্রাহ্মণ।
প্রথম উদ্ধৃতি দেবো ১৯১১ সালে প্রকাশিত ইতিহাসবিদ রাসেল ট্র্যাসি বিখ্যাত গ্রন্থ The History of the Muhiyals: The Militant Brahmin Race of India’ থেকে। আমি অনলাইন আর্কাইভে গিয়ে তাঁর গ্রন্থের ১৯৩৪ সালের সংস্করণের ৫৫ নং পৃষ্ঠা থেকে উদ্ধৃতি করছি, যা অন্য আরও অনেকেও করেছেনঃ
“From the Kavits of the clan, it is evident that the ancestors of the Datts were once in Arabia. They participated in the Karbala War between the descendants and followers of Hazrat Ali and Yazid Sultan, the son of Amir Muaviya. They were friends of Hasan and Hussain, the martyred grandsons of the Prophet, the incidents connected with which furnish the material for the passion play of the Shias at every Muharrum.
When these princes fell, a brave warrior of the Datts named Rahib, resolutely but unsuccessfully defended the survivors. The slaughter of his band, however, compelled him and the small remnant to retire to India through Persia and Kandahar.”
“গোত্রটির গাথা থেকে এটি প্রতীয়মান যে, দত্তদের পূর্বপুরুষ একসময় আরবে ছিলেন। হযরত আলী বংশধর ও অনুসারী এবং আমির মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ সুলতানের মধ্যে সঙ্ঘটিত কারবালা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা পয়গম্বরের দৌহিদ্র ও শহীদি মৃত্যুপ্রাপ্ত হাসান ও হুসেইনের মিত্র ছিলেন, যার সাথে সম্পর্কিত ঘটনাগুলো প্রতি মুহররমে শিয়াদের আবেগের মসলা যোগায়।
যখন শাহজাদাদ্বয়ের পতন হয়, দত্তদের রাহিব নামের এক সাহসী যোদ্ধা দৃঢ়তার সাথে কিন্তু বিফলভাবে বাকীদের রক্ষায় নিয়োজিত হন। যাহোক, তাঁর দলের নিধন তাঁকে ও তাঁর অবশিষ্ট ক্ষুদ্র সঙ্গীদলকে বাধ্য করে পারস্য ও কান্দাহার দিয়ে ভারতে প্রত্যাবর্তন করতে।”
প্রশ্ন হতে পারে, এই দত্তদের বংশধরগণ কি এখনও ভারতে আছেন? উত্তর হচ্ছেঃ হ্যাঁ আছেন। তাঁদের একজন হচ্ছেন ভারতের দিল্লির জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ননিকা দত্ত। তিনি ২০১৯ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ভারতের প্রখ্যাত অনলাইন সংবাদ-মাধ্যম thewire.in-এ প্রকাশিত ‘The Forgotten History of Hussaini Brahmins and Muharram in Amritsar’ শীর্ষক ফীচারে লিখেছেনঃ
“Before 1947, my grandfather, Padma Shri Brahm Nath Datta ‘Qasir’, a Hussaini Brahmin and a well-known Urdu-Persian poet, would initiate the taziya procession in Farid Chowk, in Katra Sher Singh, in his beloved city of Amritsar. There was a prominent Shia mosque in the area from where the taziyas were commenced and brought to the historic Farid Chowk.
The grand procession would then move towards the Imambara and Karbala maidan, near the Kutchery, which was a meeting point for all the processions coming from several imambaras. The final convergence of the taziyas was momentous. It is believed that this was close to the pivotal site, known as Ghoda pir, where the legendary steed, Zuljanah, of Imam Husain was said to have been buried.”
অর্থাৎ, “১৯৪৭-এর আগে, আমার পিতামহ পদ্মশ্রী ব্রাহাম নাথ দত্ত ‘কাসির’, যিনি ছিলেন একজন হুসেইনী ব্রাহ্মণ এবং একজন সুপরিচিত উর্দু-ফার্সি কবি, তাঁর প্রিয় নগরী অমৃতসরে কাতরা শের সিংয়ের ফরিদ চকে তাজিয়া মিছিল উদ্বোধন করতেন। সেখানে একটি বিশিষ্ট শিয়া মসজিদ ছিলো, যেখান থেকে তাজিয়া শুরু হতো এবং ঐতিহাসিক ফরিদ চকে আনা হতো।
তারপর, বিশাল মিছিলটি যাত্রা করতো কাচেরির কাছে ইমামবারা ও কারবালা ময়দান অভিমুখে, যা ছিলো বিভিন্ন ইমামবারা থেকে আগত সকল মিছিলের মিলন স্থল। তাজিয়াগুলোর চূড়ান্ত মিলন ছিলো গুরুত্ববহ। এটি ছিলো ঘোড়া পীর নামে কেন্দ্রীয় স্থানের সন্নিকটে যেখানে ইমাম হুসেইনের কিংবদন্তিক ঘোড়া জুলজানাহ সমাহিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।”
অধ্যাপক ননিকা দত্ত স্বয়ং তাঁর পূর্ব-পুরুষের স্মৃতি-বিজড়িত অমৃতসরের ইমামবাড়াতে যান এবং সেখানে তিনি কিংবদন্তি শুনেন। নীচে আমি তাঁকে পুনরায় উদ্ধৃত করছিঃ
I was warmly welcomed by the caretaker of the Imambara, Syed Abdullah Rizvi, popularly called Abbuji. He told me that the structure is nearly 110 years old, and was built by Syed Nathu Shah and was regularly maintained by local Shia and Hussaini Brahmin families of Amritsar before 1947.
Abbuji was touched to meet me as a Hussaini Brahmin in the majlis. He enquired whether I had a mark of a cut on my throat (in folklore, the Hussaini Brahmins are known to have a faint line across their throats as a symbol of having sacrificed their lives for Imam Husain). The story of Dutt Brahmins was shared in the assembly (majlis):
“It was Rahib’s mother, who instructed him to sacrifice his seven sons for Imam Husain. Rahib’s mother had been blessed with seven boys by Imam Husain. As a token of her gratitude to Maula Husain, she implored Rahib to sacrifice his own sons. So he did.”
“আমাকে উষ্ণতার সাথে স্বাগত জানালেন ইমামবাড়ার খাদেম সৈয়দ আব্দুল্লাহ রিজভি, যাঁকে সবাই আব্বুজি বলে ডাকেন। তিনি বললেন, ইমামবাড়াটি ১১০ বছরের পুরোনো এবং সৈয়দ নাথু শাহ এটি নির্মাণ করেন, যা১৯৪৭ সালের পূর্বপর্যন্ত অমৃতসরের হুসেইনী ব্রাহ্মন পরিবারসমূহ ও স্থানীয় শিয়ার মিলে নিয়মিত দেখভাল করতেন।
আমাকে হুসেইনী ব্রাহ্মণদের একজন হিসেবে মজলিসে দেখতে পেয়ে আব্বুজি অবিভূত হন।তিনি অনুসন্ধান করেন আমার গলায় কাটা একটি কাটদাগ আছে কি-না (লোকগাঁথায় কথিত আছে যে, ইমাম হুসেইনের জন্যে ত্যাগের প্রতীক হিসেবে হুসেইনী ব্রাহ্মণদের গলায় একট হালকা দাগ থাকে)।সমাবেশে (মজলিসে) দত্ত ব্রাহ্মণদের কাহিনীটি সহভাগ করা হলোঃ
রাহিবের মাতা, যনি নির্দেশ দিলেন রাহিবকে তাঁর সাত সন্তানকে ইমাম হুসেইনের জন্যে উৎসর্গ করতে। রাহিবের মা ইমাম হুসেইনের দ্বারা আশির্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন সাত সন্তানের জননী হয়ে। মাওলা হুসেইনের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্মারক হিসেবে তিনি রাহিবকে উৎসাহিত করেন তাঁর নিজের সাত সন্তানকে উৎসর্গ করতে। সুতরাং তিনি তাই করেন।”
পাকিস্তানের ডেইলি টাইমস পত্রিকায় ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক ফীচারে লেখক আব্দুল রাসুল সৈয়দ জানানঃ
“Additionally, the presence of Brahmins in Karbala was also authenticated by the noted Shia cleric Allama Hassan Zafar Naqvi. In an interview, he validated the claim propounded by the Mohyal community of Brahmins saying that there are plenty of historical evidences that verify the Brahmins participation in the battle of Karbala.”
“অধিকন্তু, কারবালাতে ব্রাহ্মণদের উপস্থিতি প্রখ্যাত শিয়া ধর্মগুরু আল্লামা হাসান জাফার নাকভি ও নিশ্চিত করেন। একটি স্বাক্ষাতকারে তিনি ব্রাহ্মণদের মুহিয়াল সম্প্রদায়ের এ-দাবীকে বৈধতা দেন যে একথা বলে যে, প্রচুর ঐতিহাসিক সাক্ষ্য রয়েছে, যা কারবালার যুদ্ধে ব্রাহ্মণদের উপস্থিতিকে নিশ্চিত করে।”
শিয়া মুসলমানদের আন্তর্জাতিক ইংরেজী অনলাইন প্রকাশনা শাফাকানা (Shafaqana)২০১৬ সালের ১৫ই অক্টোবর ‘Who are the Hussaini Bhramins? What part did they play in the Bettle of Karbala?’শীর্ষক একটি ফীচারে জানায়ঃ
“While Rahab Dutt, distraught with loss of Imam said goodbye to Arabia remaining Brahmins, under the leadership of one Bhurya Dutt stayed behind in Kufa (present day Iraq). Here Ameer Mukhtar arranged for them to stay in a special part of the town, which even today is known by the name of Dair-i-Hindiya or ‘the Indian quarter’. It is also significant to note that even before the Karbala incident, Imam Hussain’s father Hazrat Ali had entrusted the public exchequer to the regiment of the valiant Dutts, at the time of the Battle of Jamal (Camel) fought near Basra between Ali and Omayad Caliph Muawiya, the father of Yazeed. This provides impeccable evidence about the pragmatic role played by the Dutt Mohyals in the history of Karbala.”
অর্থাৎ, “ইমামকে হারিয়ে ভগ্নহৃদয় রাহাব দত্ত যখন আরবকে বিদায় বলেন, তখন ভুরিয়া দত্ত নামের একজনের নেতৃত্বাধীন বাকী ব্রাহ্মণগণ কুফাতে (বর্তমানের ইরাক) থেকে যান। এখানে আমীর মুখতার তাদের থাকার জন্যে নির্মাণ করেন একটি বিশেষ শহর, যা এমনকি আজও দায়ের-ই-হিন্দিয়া বা ‘ভারতীয় কোয়ারটার’ নামে পরিচিত। এটি গুরুত্বের সাথে নিতে হবে যে, এমনকি কারবালা কাণ্ডের আগে, ইমাম হুসেইনের পিতা হযরত আলী ইয়াজিদের পিতা উমাইয়াদ খলিফা মুবাবিয়ার সাথে বসরার সন্নিকটে উটযুদ্ধের কালে সরকরী তহবিল পরাক্রমশালী রেজিমেণ্টের হাত অর্পণ করেন। এটি আমাদেরকে নিখুঁত প্রমাণ দিচ্ছে কারবলার ইতিহাসে মোহিয়াল দত্তরা যে কী প্রায়োগিক ভূমিকা পালন করেছেন।”
আরবদেশে কারবালা যুদ্ধ-কালে হিন্দু-ব্রাহ্মণদের উপস্থিতির উপর্যুক্ত প্রমাণের সাথে আমি সেই হোসেইনী ব্রাহ্মণ সুনীল দত্তর কাছে ফিরে যাচ্ছি, যাকে দিয়ে শুরু করেছিলাম। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন তাঁর মায়ের নামে শওকত খানম মেমোরিয়্যাল হসপিট্যাল প্রতিষ্ঠা করে হৃদয়বান মানষের কাছে আর্থিক অনুদান আহবান করেন, তখন তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে হুসেইনী বংশোদ্ভূত ভারতীয় ফিল্মস্টার সুনীল দত্ত যা বলেন, তা thewire-এ অধ্যাপক ননিকা দত্ত ছাড়াও পাকিস্তানী বিখ্যাত ইংরেজী সংবাদ-মাধ্যম Dawn-এ মজিদ শেখ উদ্ধৃত করেনঃ
“ For Lahore, like my elders, I will shed every drop of blood and give any donation asked for, just as my ancestors did when they laid down their lives at Karbala for Hazrat Imam Husain.”
“লাহোরের জন্যে, আমার বয়োজ্যেষ্ঠদের মতোই, আমি আমার প্রতিটি রক্তবিন্দু এবং অনুদান দেবো যদি চাওয়া হয়, ঠিক যেভাবে আমার পূর্ব-পুরুষেরা তাঁদের জীবন দিয়েছিলেন হযরত ইমাম হুসেইনের জন্যে কারবালাতে।”
আহমদ ছফা নিজের অজ্ঞতা সম্পর্কে অসচেতন ছিলেন বলেই তিনি মীর মোশাররফ হোসেনের মতো একজন লেখক সম্পর্কে বলতে পারেছিলেন নীচের কথাগুলোঃ
“মুসলমান রচিত পুঁথি-সাহিত্যের প্রতিক্রিয়াশীলতা আসলে সামাজিক প্রতিক্রিয়াশীলতারই সাহিত্যিক রূপায়ণ। সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা পোষণ করতে হলে এই অপমানজনক দূরস্মৃতির বিষয়টি স্মরণে রাখার প্রয়োজন আছে। মুসলিম শাসনের অবসানের পর এই সামাজিক প্রতিক্রিয়া আরো গভীর এবং অন্তর্মুখী রূপ পরিগ্রহ করে। এই প্রতিক্রিয়ার জের বাঙালী মুসলমান সমাজে এত সুদূরপ্রসারী হয়েছে যে ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী গদ্য-লেখক মীর মশাররফ হোসেনের সুবিখ্যাত ‘বিষাদ সিন্ধু’ গ্রন্থটিতেও ‘শহীদে কারবালা’ পুঁথির ব্রাহ্মণ আজরকে একই চেহারায়, একই পোশাকে, একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সময়ের পালাবদলের ব্যাপারটি এই অত্যন্ত শক্তিধর লেখকের মনে সামান্যতম আঁচড়ও কাটতে পারেনি। পুঁথিলেখকের কাণ্ডজ্ঞানহীনতাকে তিনিও বরণ করে নিয়েছেন।”
আমি জানি না আহমদ ছফা কী বলতেন পাঞ্জাবের কবি শাহ মুহাম্মদের জংনামা সম্পর্কে যেখান তিনি ইমাম হুসেইনের পক্ষে হিন্দু-ব্রাহ্মণদের লড়াই ও আত্মত্যাগের কথা বলেছিলেন মোটামুটি মীর মোশাররফ হোসেনের বিষাদসিন্ধু প্রকাশ-কালের কাছা-কাছি সময়ে?
কী বলতেন আহমদ ছফা ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে জন্ম নেওয়া ভারত-বিখ্যাত উর্দু ও হিন্দি সাহিত্যিক মুন্সি প্রেমচাঁদ রাই শ্রীবাস্তব রচিত বিখ্যাত নাটক ‘কারবালা’ সম্পর্কে, যেখানে তিনি কারবালা যুদ্ধে ইমাম হুসেইনের পক্ষে হিন্দু-ব্রাহ্মণদের দাঁড়ই করাননি, তাঁদেরকে মহাভারতের দ্রৌণাচার্্যেমর পুত্র অশ্বথামার বংশধর বলে বর্ণনা করেছেন?
কী বলতেন আহমদ ছফা বাঙালী বিজ্ঞানী শিশিরকুমার মিত্র সম্পর্কে যিনি তাঁর The Vision of India গ্রন্থে আরবদেশে বিপুল সংখ্যক হিন্দু অধিবাসীর কথা উল্লেখ করেছেন?
কী বলতেন আহমদ ছফা বাঙালী হিন্দু-ঘুর্ণিত-ক্রিশ্চিয়ান কবি কবি মাইকেল মধুসূধনের কারবালা নিয়ে একটি মহাকাব্য লিখার ব্যক্ত ইচ্ছা সম্পর্কে, যিনিও হয়তো ইমাম হুসেইনের পক্ষে হিন্দু-ব্রাহ্মণদের লড়াই ও আত্মত্যাগের কাহিনীই লিখতেন?
ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলা থেকে মধ্যপ্রদেশ ও পাঞ্জাব পর্যন্ত হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে আরবে হিন্দু-ব্রাহ্মণদের উপস্থিতি ও কারবালার যুদ্ধে ইমাম হুসেইনের পক্ষে লড়াই ও আত্মত্যাগের কাহিনী নিয়ে নানা জান্রার সাহিত্য এবং অসংখ্য মর্সিয়া সঙ্গীত রচনা করে গিয়েছেন, এগুলোকে হিন্দু-ব্রাহ্মণদের প্রতি বাঙালী মুসলমানের বিদ্বেষবশতঃ প্রতিশোধগ্রহণ হিসেবে দেখা ও দেখানো যায়?
প্রকৃতপক্ষে, কারবলা যুদ্ধে ইমাম হুসেইনের পক্ষে হিন্দু-ব্রাহ্মণদের লড়াই ও আত্মত্যাগের কাহিনী বাংলা থেকে শুরু করে মধ্য প্রদেশ ও পাঞ্জাব পর্যন্ত হিন্দু-মুলমানের মধ্যে ঐক্যের আকাঙ্খারই প্রতিফলন। এটি খুবই দুঃখজনক যে, আহদ ছফা তাঁর অজানার কারণে তথাকথিত “কাণ্ডজ্ঞান” দিয়ে সমগ্র উপমহাদেশ ব্যপী হিন্দু-মুসলমানের মিলন আকাঙ্খাকে তিনি হিন্দু-ব্রাহ্মণদের ওপর বাঙালী মুসলমানের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার প্রয়াস হিসেবে দেখেছেন ও দেখিয়েছেন।
আরও দুঃখের বিষয় হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য রচনাটি এবং এতে অঙ্কিত বাঙালী মুসলমানের “মন” ভ্রান্ত চিত্র বিদগ্ধ বাঙালী বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত শ্রেণী অত্যন্ত উপাদেয় হিসেবে গ্রহণ করে মুগ্ধ বোধ করছেন!
এ-লেখায় আমি দু’জন অবাঙালী ও অমসুলিম ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে খোদ হিন্দু-ব্রাহ্মণদের উত্তরপুরুষদের দেওয়া তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেছি যে, আরব দেশের কারবালা যুদ্ধে ইমাম হুসেইনের পক্ষে ভারতের হিন্দু-ব্রাহ্মণেরা অংশগ্রহণের বিষয়টি বাঙালী মুসলমান কবির কল্পনা নয় এবং অসম্ভবও নয়। এটি সম্ভবতো বটেই, এমনকি সত্যও হতে পারে এবং সত্য বলেই পেশাজীবী ঐতিহাসিকও সত্য বলে দাবী করেন।
সুতরাং বাঙালী মুসলমান কবির ‘শহীদে কারবলা’ পুঁথিতে আরব দেশের কারবালাতে ইমাম হোসেইনের পক্ষে হিন্দু-ব্রাহ্মণ পরিবারের উপস্থিতিকে যে তিনি “সম্ভব নয়” বলেছেন, এটি তার অজ্ঞতার গরিমা ছাড়া আর কিছুই নয়। অজ্ঞতা আমাদের সবারই কম-বেশি আছে। অজ্ঞতায় তেমন ক্ষতি নেই যদি-না অজ্ঞতাই আমাদের লালিত গর্ব না হয়ে দাঁড়ায় এবং অন্যকে আঘাত করার হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
দুঃখজনকভাবে, আহমদ ছফা তাঁর অজ্ঞতার হাতিয়ার দিয়ে বাঙালী মুসলমান সম্প্রদায়কে চিত্রিত করেছেন হিন্দু-ব্রাহ্মণ বিদ্বেষী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ রূপে। আমি আমার এ-লেখার মাধ্যমে আহমদ ছফার আর্গ্যুমেণ্টের প্রেমিসকে অসত্য হিসেবে উন্মোচিত করে তাঁর কনক্লুশন বা সিদ্ধান্তকে অসিদ্ধ প্রমাণ করলাম। অর্থাৎ, ছফার সমগ্র আর্গ্যুমেণ্টটাই রিফিউটেড বা বাতিল হলো।
আমি আশা করছি, পরবর্তীতে আহমদ ছফার ‘বাঙালী মুসলমান’ আইডেণ্টিটির ব্যবচ্ছেদ করে দেখবো এবং দেখাবো তার মূল প্রকল্পটি কী।
১১/০২/২০২১
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড
আমি আহমদ ছফার বাংগালী মুসলমানের মন পড়েছি এবং মোটামুটি ভাবনার বিষয় পেয়েছিলাম। তারপরও কেমন যেন পরিপূর্ণভাবে ভাবনাটিকে হ্রদয় অংগম করতে পারছিলাম না। আপনার লেখাটি পড়ে আরো ভাবনার বিষয় পেলাম। হিন্দু ব্রাহ্মণ্য র উপস্থিতি ওই সময়ে উল্লেখিত পটভূমিতে ছিলো কি ছিলো না – আহমদ ছফা আর আপনার লেখা মিলে একটি গবেষণার বিষয় হয়ে গেলো আমার কাছে। যাইহোক, ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি আহমদ ছফার বাংগালী মুসলমানের মন পড়েছি এবং মোটামুটি ভাবনার বিষয় পেয়েছিলাম। তারপরও কেমন যেন পরিপূর্ণভাবে ভাবনাটিকে হ্রদয় অংগম করতে পারছিলাম না। আপনার লেখাটি পড়ে আরো ভাবনার বিষয় পেলাম। হিন্দু ব্রাহ্মণ্য র উপস্থিতি ওই সময়ে উল্লেখিত পটভূমিতে ছিলো কি ছিলো না – আহমদ ছফা আর আপনার লেখা মিলে একটি গবেষণার বিষয় হয়ে গেলো আমার কাছে। যাইহোক, ধন্যবাদ আপনাকে।