🎯আজ ইসকন প্রতিষ্ঠাতাচার্য অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদের ৪৪তম তিরোভাব তিথি মহোৎসব।
👉এই মহান আচার্যের জীবনী ঃ-
☀️১৮৯৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর অভয়চরণ দে (বাল্যকালের নাম) ১৫১ নং হ্যারিসন রোডের উত্তর কলকাতায় শ্রীযুক্ত গৌরমোহন দে এবং রজনী দেবীর গৃহে অার্বিভূত হন। গৌরমোহন দে ছিলেন সম্ভ্রান্ত সুবর্ণবনিক সমাজের একজন স্বচ্ছল কাপড় ব্যবসায়ী।
☀️১৯০১ সালে যখন তাঁর পাঁচ বছর তখনই গৌরমোহন দে তাঁকে মতিলাল শীল ফ্রি স্কুলে ভর্তি করে দেন। শৈশব থেকেই প্রভুপাদ ছিলেন অসাধারণ বুদ্ধি ও তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন কৃতি ছাত্র।
☀️১৯০২ সালে ছয় বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতার কাছে পূজা করার জন্য ভগবানের শ্রীবিগ্রহ চেয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধে গৌরমোহন ছোট রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি তাঁকে কিনে দেন।
☀️১৯১৭ সালে তিনি কলকাতার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন।ঐ কলেজে সুভাষচন্দ্র বসুর এক ক্লাস নীচে অভয়চরণ পড়তেন।
কলেজে অধ্যয়ন করার সময়েই অভয়চরণের পিতার পরিচিত এক বণিক পরিবারের কন্যা রাধারাণী দত্তের সঙ্গে তাঁর বিবাহের আয়োজন করেন।
☀️১৯২০ সালে কলেজে তাঁর চর্তুথ বর্ষের পাঠ শেষ করে পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উর্ত্তীণ হয়েছিলেন, কিন্তু তারঁ প্রাপ্য ডিগ্রী তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
☀️১৯২২ সালে কলকাতায় তাঁর গুরুমহারাজ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ লাভ করেন।
☀️১৯৩২ সালে তাঁর গুরুমহারাজ তাকে শিষ্যত্ব হিসেবে গ্রহণ করেন। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর শ্রীল প্রভুপাদকে একসাথে হরিনাম দীক্ষা ও গায়িত্রী/ব্রাহ্মণ দীক্ষা প্রদান করেন।
☀️১৯৩৫ সালের ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত ঠাকুরের ৬২ তম জন্মবার্ষিকীর তাঁর গুরুভ্রাতাদের এক সম্মেলনে শ্রীল প্রভুপাদ একটি কবিতা ও প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। সেখানে লিখা ছিল এরকম,
🌀 পরম ব্রহ্ম পরমপুরুষ প্রমাণ করিলে তুমি
নির্বিশেষের নির্বাণ-বাদ ত্যজিল ভারত ভূমি 🌀
তারপর গুরুদেব সন্তুষ্ট হয়ে গৌড়ীয় মঠের মুখপাত্র ‘দ্য হারমোনিষ্ট’ এর সম্পাদককে বলেছিলেন- “ও যা লেখে, তাই ছাপিও।”
☀️১৯৩৫ সালের নভেম্বরে বৃন্দাবনে রাধাকুন্ডে তাঁর গুরুমহারাজের সাথে দেখা হয়েছিল। সেখানে প্রভুপাদকে বলেছিলেন, “যদি তুমি কোনদিন অর্থ সংগ্রহ করতে পার, পারমার্থিক বই ছাপিও।”
☀️১৯৩৯ সালে অভয়চরণের প্রথম গ্রন্থ “গীতোপনিষদের সূচনা” স্বীকৃতি লাভ করে।
☀️১৯৪৪ সালে প্রভুপাদ এককভাবে একটি ইংরেজি পাক্ষিক পত্রিকা “Back to Godhead” প্রকাশ করতে শুরু করেন। এমনকি তিনি নিজ হাতে তা বিতরণও করতেন।
☀️১৯৪৭ সালে শ্রীল প্রভুপাদের দার্শনিক জ্ঞান ও ভক্তির উৎকর্ষতার স্বীকৃতিরূপে ‘গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ’ তাঁকে “ভক্তিবেদান্ত”উপাধিতে ভূষিত করেন।
☀️১৯৫০ সালে ৫৪ বছর বয়সে, সংসার জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে চার বছর পর বানপ্রস্থ আশ্রম গ্রহণ করেন এবং শাস্ত্র অধ্যয়ন, প্রচার ও গ্রন্থ রচনার কাজে মনোনিবেশ করেন।
(তার আগে প্রভুপাদ এক ছোট ফার্মাকিউটিক্যাল ব্যবসার মালিক ছিলেন)
☀️১৯৫৩ সালের ১৬ই মে ঝাঁসিতে ছবির মত সুন্দর ভারতীভবনে প্রভুপাদ “ভক্তসঙ্গ” নামে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
☀️১৯৫৬ সালের শুরুতে অভয় নিউ দিল্লীতে তাঁর “ভগবৎ-দর্শন” পত্রিকাটি প্রচার করা শুরু করেন।
☀️১৯৫৯ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর মথুরার কেশবজী গোড়ীয় মঠে তিনি তাঁর জ্যৈষ্ঠ গুরুভ্রাতা শ্রীল ভক্তিপ্রজ্ঞান কেশব মহারাজের কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।
☀️১৯৬২ সালে শ্রীল প্রভুপাদের ভাষ্যকৃত শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথম স্কন্ধ ছাপাখানায় ছাপা হয়েছিল।
☀️১৯৬৪ সালের জুন মাসে নতুন দিল্লীর পার্লামেন্ট ভবনে শ্রীল প্রভুপাদ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
☀️১৯৬৫ সালের ১৩ আগস্ট ‘জলদূত’ নামক স্টীম নেভিগেশন কোম্পানির একটি মালবাহী জাহাজে প্রাশ্চাত্যে কৃষ্ণভক্তি প্রচার হেতু নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে সকাল ৯ ঘটিকায় কলকাতা ত্যাগ করেন।
☀️১৯৬৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ ৩৫ দিন পর সকাল ৫:৩০ ঘটিকায় ঐ জাহাজ বোস্টন কমনওয়েলথ জেটিতে পৌঁছে, তারপর অন্তিমে নিউ ইয়র্ক শহরে ব্রুকলীন বন্দরে নোঙ্গর ফেলেছিলেন।
☀️১৯৬৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ‘Butlar Eagle’ পত্রিকায় শ্রীল প্রভুপাদ সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ বেরোয়। এটিই ছিল আমেরিকা প্রচারের প্রথম সংবাদ। পত্রিকায় প্রভুপাদকে “বৈকুন্ঠ দূত” হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছিল।
☀️১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে শ্রীল প্রভুপাদ আমেরিকার মাটিতে “আন্তর্জান্তিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) প্রতিষ্ঠা করেন।
(উক্ত সংঘের মূল উদ্দেশ্য ছিল ৭ টি, যার নির্দেশনা ছিল প্রকৃত চিন্ময় স্বরূপের চিত্ত উৎঘাটন)
☀️১৯৬৬ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমীর পরের দিন তিনি পাশ্চাত্যে প্রথম দীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ও এগোর জনকে দীক্ষা দেন।
☀️১৯৬৭ সালের ৯ই জুলাই সানফ্রানসিস্কো শহরের রাজপথে শ্রীল প্রভুপাদ পাশ্চাত্যের প্রথম রথযাত্রা অনুষ্টান পরিচালনা করেন।
☀️১৯৬৭ সালের ২৫ জুলাই শ্রীল প্রভুপাদের শরীর ভেঙ্গে পড়েছিল বলে তিনি ভারতে ফিরে আসেন।
☀️১৯৬৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি শ্রী শ্রী রাধা-লন্ডনেশ্বর শ্রী বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন।
☀️১৯৭০ সালের জুলাই মাসে প্রভুপাদ ইসকনের প্রকাশনা সংস্থা “ভক্তিবেদান্ত বুক টাস্ট্র” স্থাপন করেন। বর্তমানে রুশ ও চীনা ভাষাসহ পৃথিবীর ৫০ টির ও বেশি ভাষায় সেখানে প্রভুপাদের গ্রন্থগুলি ছাপাচ্ছে।
☀️১৯৭০ – ১৯৭৫ সালের মধ্যে প্রভুপাদ বিশ্বময় ব্যাপকভাবে কৃষ্ণভাবনা প্রচারের উদ্দেশ্য ভ্রমণ করেন। বিশ্বময় সংঘের মন্দিরগুলির পরিচালনার জন্য তিনি একটি পরিচালক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর প্রধান শিষ্যদের নিয়ে।
☀️১৯৭২ সালে আমেরিকার ডালাসে গুরুকুল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করেন।
(প্রথমে তিনজন ছাত্র নিয়ে গুরুকুল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, বর্তমানে ১৫ টি গুরুকুলসহ ছাত্র সংখ্যা সহস্রাধিক)
☀️১৯৭২ সালেই পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীল প্রভুপাদ মূল কেন্দ্রটি স্থাপন করেন।
☀️১৯৭৪ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার পার্বত্য ভূমিতে গড়ে তোলেন নব-বৃন্দাবন, যা হলো বৈদিক শাস্ত্রের প্রতীক।
☀️১৯৭৬ সালে শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর কতিপয় বৈজ্ঞানিক শিষ্যকে নিয়ে ইসকনের বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিভাগ “ভক্তিবেদান্ত ইনস্টিটিউট” প্রতিষ্ঠা করেন।
☀️১৯৭৭ সালের ১৪ই নভেম্বর কার্তিক মাসে গৌর-চতুর্থীর দিন সন্ধ্যা ৭:৩০ ঘটিকায় বৃন্দাবনের কৃষ্ণ-বলরাম মন্দিরে শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর শিষ্যদের অন্তিম শিক্ষা প্রদান করে এই জড় জগৎ থেকে বিদায় নিয়ে ভগবানের নিত্যলীলায় প্রবিষ্ট হয়েছিলেন।
|| HARE KRISHNA ||
(লেখাটি সংগৃহীত)