ইসলামী রাষ্ট্রের দাবি অনইসলামী কেনো?
একটি মুখচেনা মহল ও তাদের প্রচার মাধ্যমগুলোতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শ্লোগানটি বেশ উচ্চারিত হচ্ছে। পবিত্র ইসলামকে শোষণের রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের এই অভিনয় এদেশবাসীর কাছে নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান আমলের আরা ২৪ বছর আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি। পাকিস্তান আমলে এই অভিনয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ইসলামের দুশমন ‘ভারত-সোভিয়েট-চীনের দালাল ইত্যাদি গালিগালাজ করা হতো। আজো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। পবিত্র ইসলাম নিয়ে পাকিস্তান আমলের অভিনয়ের পরিণতিতে আমাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে আবার সেই অভিনয়ের পুনরাবৃত্তি চলছে।
ইসলামী রাষ্ট্র শ্লোগানটি যতোই আকর্ষণীয় হোক না কেন, এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। হাল আমলের পাকিস্তান, সুদান আর ইরান ছাড়া ইসলাম ও মুসলমানদের দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে এই নামের কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাই না। মহানবীর (সঃ) পর তাঁর চার খলিফা ৩০ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। হযরত মাবিয়া থেকে উমাইয়ারা ৯১ বছর এবং আব্বাসীয়রা সাড়ে পাঁচশ’ বছর রাজত্ব করেন। মিসরে ফাতেমীয় খলিফারা রাজত্ব করেন। তুরস্কে করেন ওসমানীয়রা। এ ছাড়াও স্পেন, মধ্য এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও ভারতে মুসলমানরা বেশ কয়েক শতাব্দী রাজত্ব করেন। এসব রাষ্ট্র, এমনকি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম শাসিত কোন রাষ্ট্রের নামের আগেও ইসলাম শব্দটি সংযুক্ত করা হয়নি। ইসলাম শব্দটি কোন রাষ্ট্রের নামের আগে ব্যবহার করতে হলে বর্তমানে সৌদি আরবের নামের সঙ্গে সবার আগে ব্যবহার করা উচিত। কারণ এই ভূখণ্ড থেকেই ইসলামের অভ্যুদয় ঘটেছে। অথচ এই ভূখণ্ডের নাম রাখা হয়েছে এক ব্যক্তির নামানুসারে।
হিজরতের পর মহানবী (সঃ) মদীনার ইহুদী-মুশরিকদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, তা ছিল স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তাতে তিনি ইসলামী বিধি-বিধানকে রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত করেন নি। সে সময় অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলমানদের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিটি ইসলামের ইতিহাসে “মদীনার সদন নামে খ্যাত। তাতে চুক্তির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি সম্প্রদায় ও তাদের বন্ধুগোত্রের ধর্ম, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। প্রতিপক্ষ থেকে চুক্তি লংঘনের আগ পর্যন্ত মুসলমানরা এই চুক্তি ভঙ্গ করেননি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে পরিষ্কার ভাষায় মুসলমানদের বারণ করা হয়েছে। এমনকি কোরাইশ প্রতিনিধির আপত্তির প্রেক্ষিতে মহানবী (সঃ) হোদায়বিয়ার সন্ধিপত্রে তার নামের আগে ‘আল্লাহর রাসূল বিশেষণটিও মুছে দেন। সংক্ষেপে বলতে হয়, পবিত্র ইসলামের নামে কোন এলাকা জয় তথা রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত মহানবী (সঃ) জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্যে ইসলামী বিধান রাষ্ট্রয় আইনে পরিণত করেননি। মহানবীর পর তার চার খলিফা ৩০ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তাদের আমলেও ইসলামী রাষ্ট্র’ নামে কোন ভূখণ্ডের সন্ধান পাওয়া যায় না। তাদের সময়ে রাষ্ট্রকে বল হতো “খেলাফত। ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা খেলাফতের অর্থ করেছেন রিপাবলিক বা প্রজাতন্ত্র। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, এই খেলাফত আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের আগে একাধিক সম্প্রদায়কে দান করেছেন।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ও “অতঃপর আমি ওদের পর পৃথিবীতে তোমাদেরকে খলিফা বা প্রতিনিধি করেছি, তোমরা কি আচরণ কর তা দেখার জন্যে। (১০ ঃ ১৪)
অপর এক জায়গায় বলা হয়েছে ; “এবং স্মরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে নূহের সম্প্রদায়ের পর তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং তোমাদেরকে অবয়ব শক্তিতে অন্য লোক অপেক্ষা অধিকতর সমৃদ্ধ করেছেন। (৭: ৬৮)
হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন নবী ও রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : “হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলিফা বা প্রতিনিধি করেছি।। অতএব তুমি মানুষের সুবিচার কর।” (৩৮: ২৬)
এমনিভাবে পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন জাতিকে খেলাফত দানের কতা ঘোষণা করেছেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের পর উমাইয়া আমল থেকে নামকাওয়াস্তে খেলাফত থাকলেও সেগুলো ছিল রাজতন্ত্র। এ সম্পর্কে মহানবী (সঃ) নিজেই বলে গেছেন : ‘আমার পর খেলাফত বা প্রজাতন্ত্র থাকবে ৩০ বছর। এরপর রাজতন্ত্র কায়েম হবে।” সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীন-পরবর্তী মুসলিম শাসন আমল সম্পর্কে আলোচনা করাই অর্থহীন।
এ প্রেক্ষাপটে আমরা বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি। সবাই জানেন, আমরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানে ছিলাম। পাকিস্তান আমলে শুধু সাইন বোর্ডটাই ছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্র’। মদ, জুয়া, হাউজি প্রভৃতি অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড সবই চলতো। সবচাইতে বড়কথা, ইসলামের নামে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হতো। আমরা মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা ইসলামের নামে এই অন্যায়-অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াই। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
আর আজ যারা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জিগির তুলছে, একাত্তরে তারা হানাদার শক্তিকে মদদ যোগায়। সে সংগ্রামে আল্লাহতায়ারা আমাদের কামিয়াব করেন। তাদের করেন পরাজিত ও লাঞ্ছিত। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, সেদিন আল্লাহতায়ালা পবিত্র ইসলামের নামে তাদের গণ-বিরোধী ভূমিকা পছন্দ করেননি।
সেদিন আমাদের চারটি সম্প্রদায়ের সম্মিলিত সংগ্রামের পিছনে একটি যৌথ চেতনা ও মূল্যবোধ কার্যকর ছিল-যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ’ নামে অভিহিত করি।আর তা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশ হবে গণপ্রজাতন্ত্রী। বাংলাদেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, | নিবিশেষে কেউ শোষিত-বঞ্চিত হবে না। তথাকথিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের মতো কোন সম্প্রদায়ের ধর্মকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে না। প্রকৃতপক্ষে মদীনার সনদের মতােই মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ’ বাংলাদেশের চারটি সম্প্রদায়ের জন্যে একটি ঐতিহাসিক সনদ। অন্য তিনটি সম্প্রদায়ের কারো পক্ষ থেকে এই সনদ লংঘন না করা পর্যন্ত আমাদের মুসলমানদের পক্ষ থেকে তা লংঘন করা হবে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই সম্পূর্ণ অবৈধ পদক্ষেপ। এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তবে মুশরিক বা অমুসলিমদের মধ্যে যাদের সঙ্গে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ ও পরে যারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোন ক্রটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করেনি, তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পালন করবে, আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন।” (৯৪৪)
পবিত্র কোরআনের এই ভাষ্যটি অত্যন্ত স্পষ্ট। এর ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়াজন নেই। এই ভাষ্য অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অপর তিনটি সম্প্রদায়ের তরফ থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ লংঘন না করা পর্যন্ত আমরা মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাদের ওপর মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ-বিরোধী কোন শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে পারি না। এরূপ কোনকিছু করা হলে, সেটা হবে ইসলামের নামে একটা অনৈসলামিক পদক্ষেপ এবং বাংলাদেশের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। আর বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : “নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না।” (৮ ঃ ৫৮) এই প্রেক্ষাপটের আলোকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা জায়েজ হবে না।
সত্যিকার অর্থে বর্তমান যুগে ইসলামী রাষ্ট্র’ কায়েমের ক্ষেত্রে দুর্লংঘ্য সমস্যাও রয়েছে। কারণ রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে ইসলামী আইন-কানুনের সম্পর্কহীনতার ব্যবধান প্রায় দেড় হাজার বছরের। বর্তমানে হাজারো শাখা-প্রশাখায় পল্লবিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সমস্যার ইসলামী সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। এজন্যেই পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তানের খ্যাতনামা আইনবিদ জনাব এ. কে. ব্রোহী চ্যালেঞ্চ প্রদান করে বলেছিলেন, ‘কেউ যদি তাকে একটি ইসলামী শাসনতন্ত্র তৈরি করে দিতে পারেন, তিনি তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দেবেন।’ সে আমলে পাঁচ হাজার টাকার মূল্য আজকের পাঁচ লাখ টাকারও বেশি ছিল। কিন্তু জনাব ব্রোহীর এই চ্যালেঞ্জ তখন পাকিস্তানের কোন আইনবিদ বা আলেম গ্রহণ করতে পারেননি। অথচ আজ যারা বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র বা আল্লাহর আইন কয়েমের শ্লোগান দিচ্ছেন সেদিন তারা এবং তাদের মুরুব্বীরাও পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, উক্ত বিশেষ মহলটির আল্লাহর আইন কায়েমের দাবি রাজনৈতিক শ্লোগান ছাড়া কিছু নয়। এদেশের ধর্মপরায়ণ সাধারণ মানুষের বিবেক কেনার জন্যেই তারা এই শ্লোগান দিচ্ছেন।
বস্তুত, বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের মতাে নামসর্বস্ব ছাড়া কিছুই হবে না। তাতে ইসলামী মূল্যবােধ তথা আল্লাহতায়ালার সঙ্গে চরম প্রতারণা করা হবে। এ রকম প্রতারণা পবিত্র কোরআনের ভাষায় অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।তাছাড়া বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে শিয়া, সুন্নী, আহলে হাদীস, দেওবন্দী, আটরশি, জামাতী প্রভৃতি দল-উপদল রয়েছে। পবিত্র কোরআন-হাদীস সম্পর্কে তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে। স্বভাবতই তারা প্রত্যেকে চাইবেন নিজেদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত করা হোক। তাতে দেশের শাসনতান্ত্রিক ও আইনগত সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করবে।
এ প্রসঙ্গে ১৯৫৩ সালে লাহোরে কাদিয়ানী দাঙ্গা সম্পর্কিত বিচারপতি মুনি, কমিশন রিপোর্টের উল্লেখ করা যায়। বিচারপতি মুনির পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় আঠারো জন আলেমের কাছে মুসলমানের সংজ্ঞা’ জানতে চেয়েছিলেন। বিচারপতি মুনির সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, মুসলমানের সংজ্ঞা নিয়ে আঠারজন আলেম একমত হতে পারেন নি। তাহলে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে সবাই কি করে একমত হবেন?
সত্যি কথা বলতে কি, এক শ্রেণীর লোকের ইসলামী রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার দাবি দেশে হানাহানি ও রক্তপাতের পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছে। তার বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে, সিলেটে দোয়ালীন’ আর ‘জোয়াল্লীন’ উচ্চারণকে কেন্দ্র করে দু’দলের সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষে দু’ব্যক্তি নিহত হয়। এটি অনেক আগের ঘটনা। এতো দূরে যাওয়ার দরকার নেই। এই সেদিনের কথা, ‘গত রোজার শেষদিকে রোজার ফেত্রা সম্পর্কিত একটি সংবাদ অনেকেরই দৃষ্টি এড়ায়নি। একটি প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করেছেন এবারে ফেত্রা জনপ্রতি ১৫ টাকা দিতে হবে। আর একটি প্রতিষ্ঠানের মতে দিতে হবে ২০ টাকা। কেউ বলেছে ২২ টাকা। এখন আপনারাই বলুন কোন্টা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নেয়া হবে। ফেত্রার ব্যাপারেই যদি এ রকম মতভেদ হয়, তাহলে ইসলামী হুকুমতের রাষ্ট্রীয বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কি রকম ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা ভাবতেও ভয় হয়। আমরা এদেশে আর রক্তপাত চাই না, শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপনকারীদের বক্তব্য বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে যতোই ফলাও করা হোক না কেন, তাতে কেউ বিভ্রান্ত হবে না। পাকিস্তান আমলে, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তাদের ভূমিকা এমনটি ছিল। তাদের এই ভূমিকার জন্যে সমগ্র জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। তাদের এই ভূমিকা আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেনান। যদি করতেন তাহলে বাংলাদেশ হতো না। তারাও পরাজিত ও লাঞ্ছিত হতো না। পরাজিত শক্তি হিসেবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের তো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে কোন প্রকার নাক গলাবার অধিকারই নেই। কারণ ইসলামে পরাজিত শক্তিকে রাজনৈতিক অধিকার দেয়া হয়নি। ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরাজিত শক্তিকে তাদের অপরাধের ধরন অনুযায়ী হত্যা কিংবা দাস-দাসীতে পরিণত করা হতো। পরবর্তীকালে তাদেরকে জিম্মি বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা দেয়া হতো। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে তাদের নাক গলাবার অধিকার দেয়া হতো না। আর বাংলাদেশে পরাজিত শক্তি বিভিন্ন সরকারের দুর্বলতার সুযোগে শুধু রাজনৈতিক অধিকারই নয়, প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন। পরিশেষে আমি পবিত্র ইসলামকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের মহানবীর (সঃ) একটি হাদীস স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেছেন, “শেষ যুগে কিছু প্রতারক সৃষ্টি হবে। তারা ধর্মের নামে দুনিয়া শিকার করবে। তারা মানুষের নিকট নিজেদেৱ দরবেশী ও দীনতা জাহির করা এবং মানুষকে প্রভাবিত করার জন্যে ভেড়ার চামড়ার পােশাক পরবে। তাদের রসনা হবে চিনির চেয়েও মিষ্টি। কিন্তু তাদের হৃদয়
হবে নেকড়ের হৃদয়ের মতো হিংস্র।” (তিরমিজী) ইসলামী রাষ্ট্রের’ প্রবক্তাদের মহানবীর (সঃ) এ হাদীসের সঙ্গে নিজেদের ভূমিকার মূল্যায়ন করার জন্যে অনুরোধ করছি।
– মাওলানা গোলাম রাব্বানি