ঈমান নিয়ে যারা টানাটানি করেন তাদের উদ্দেশ্যে (পর্ব ২):

Uncategorized

ঈমান নিয়ে যারা টানাটানি করেন তাদের উদ্দেশ্যে (পর্ব ২):
আমি ভাস্কর্য নিয়ে ইদানিং কিছু পোস্ট করেছি। কিছু কমেন্টও করেছি পত্রিকার খবরে। এতেই আমার বিরুদ্ধে খেপেছে মগজ ধোলাই করা মৌলবাদী চক্র। এর আগেও তারা আমার আইডি খেয়ে দেয়, প্রায় ২০ হাজার ফলয়ার সহ। যা হোক, আমি নতুন করে এ আইডি থেকে শুরু করি। আমার পোস্টের কারনে আমার কাছের কিছু বন্ধুও আমার ঈমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমি আমার ঈমান প্রমান করতে যাচ্ছি না কারও কাছে, আর আমি মনে করি কারও কাছে আমার ঈমান প্রমান করার কিছু নাই। এটা একান্তই আমার নিজস্ব ব্যাপার । আমার ঈমান প্রমান করতে হলে আমি শুধু স্রষ্টার কাছেই করব। অন্য কার কাছে নই । আমি শুধু আমার বক্তব্য আরেকটু পরিষ্কার করে বলতে চাইঃ
প্রথমে আসি ভাস্কর্যের কথায়। ইসলামের মূলনীতি অনুসারে প্রাণীর ছবিও কিন্তু নিষিদ্ধ হওয়ার কথা এবং একটা সময় পর্যন্ত কিন্তু নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে অনেক মুসলিম স্কলার প্রাণীর ছবিকে কিন্তু বৈধতা দিয়েছেন। যদি ও এখনও অনেকে মনে করেন ছবি নিষিদ্ধ। যদি আমরা ইসলামের সেই মূলনীতিতে ফিরে যাই, ছবিকে কিন্তু এখনও নিষিদ্ধ বলেই ধরা যায়। আমি জানি না, আমি, আপনি বা যে সকল ব্যক্তিগন ভাস্কর্য নিয়ে অনেক কথা বলছেন, তারা এগুলো মানেন কিনা । বাংলাদেশের অনেক দোকানে অনেক প্লাস্টিকের মডেল আছে, এগুলো তো নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। আবার ছোট কালে একটা শিশু যে পুতুল নিয়ে খেলে, সেটা ও তো নিষিদ্ধ হওয়ার কথা।
তাছাড়া অনেক মুসলিম দেশে, মুদ্রায় অনেক সম্রাট বা রাজার ছবি খোঁদাই করা ছিলো, এখনও আছে, এটাও তো নিষিদ্ধ তাহলে । কিন্তু এগুলোত নিয়ে তো কখনও কোন সমস্যার কথা শুনি নি। আমার মনে হয়, অনেক বড় বড় মুসলিম দেশের স্কলার রা কিন্তু বোকা না । ওনারা ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন বলেই এগুলো নিয়ে আমাদের মত বিতর্কে ওনাদের কে কখনও জড়াতে দেখি নি। আসলে বেপারটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমার মনে করি, কুরআনেএকজন মুসলমানের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা সত্য। কিন্তু একটা ছোট শিশু পুতুল নিয়ে খেললে কোনো সমস্যা নাই, তার কারন সে ওই পুতুল টাকে শুধু তার খেলার জন্যই ব্যবহার করে, তার স্রষ্টা হিসাবে নই। আবার মুদ্রায় যে রাজা সম্রাটদের ছবি খোঁদাই আছে, তাতেও সমস্যা নাই কারন কেউ মুদ্রার ছবিকে ইবাদাত করে না।
কয়েকটা উদাহরণ তুলে ধরছি। যখন আমাদের ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশরা ইংরেজি শিক্ষা শুরু করলো, তখনকার সময়ের তথাকথিত কিছু মাথা মোটা মাওলানারা মানুষকে বোজাল এই বলে যে “ইংরেজি খ্রিষ্টানদের ভাষা, মুসলমানদের জন্য হারাম”। মানুষ ওনাদের কথা শুনে ভারত মহাদেশে মুসলিমরা ১০০ বছর পিছিয়ে গেছে জ্ঞান বিজ্ঞানে । স্যার সইয়াদ আহামাদ মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষার জন্য আলীগড় ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে ওনাকে কাফের বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছিলো। ওনাকে “ইংরেজদের দালাল” বলে গালি দেয়া হয়েছিলো। অথচ এই ভারত উপমহাদেশে বড় বড় অনেক মুসলিম স্কলার কিন্তু ওই আলীগড় ইউনিভার্সিটি থেকেই পড়া লেখা করে মানুষের অধিকারের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে।
আবার যখন টেলিফোনে সহ অনেক টেকনোলজি এলো, অনেক মাথা মোটা মাওলানা বলেছিলোঃ “এগুলো এহুদি খ্রিষ্টানদের পণ্য, মুসলমানদের জন্য হারাম”। এর ফলে আজকে কি দেখছি, মুসলমানেরা জ্ঞান বিজ্ঞানে সবার চেয়ে পিছিয়ে আছে। পৃথিবীর গরিবদের মধ্যে একটা বিশাল অংশ মুসলমান। একসময় যে মুসলমানেরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় অবাধ বিচরণ করত, সেই মুসলমানদের অবস্থা আজকে কি আমরা সবাই দেখেতে পারছি। এগুলো হচ্ছে উপযুক্ত জ্ঞানের অভাবে।
আজকেও সে ভণ্ড মাওলানারা আছে। তারা আজকেও সভ্যতার সব আধুনিক জিনিসের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে যাচ্ছেন। আজকে কেউ ওনাদের এমন উলটা-পাল্টা ফতওয়া সমালোচনা করলেই তাকে “ইসলাম বিরোধী”, “ঈমান নাই” এমন কথা বলে নাজেহাল করা হচ্ছে।
সবশেষে বলতে চাই, আমার কাছে বড় হচ্ছে মানুষের জীবন; যেটা ভাস্কর্যের চেয়েও বড়। কিন্তু সেই সাথে মনে রাখতে হবে শিল্প-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভাতেরও দরকার আছে, গানেরও দরকার আছে এবং ভাস্কর্য শিল্পেরও দরকার আছে। আজকে যারা ভাস্কর্যের নিয়ে কথা বলে মানুষকে খেপিয়ে তুলছেন, এর বলি কিন্তু নিরিহ মানুষ হবে। তাই আমার দৃষ্টিতে ভাস্কর্য নিয়ে, বিতর্ক করার চেয়ে, আরও অনেক ভাবে কিন্তু মুসলিম সমাজ উন্নয়ন করা যেতে পারে । আজকে যারা উস্কানি দিচ্ছে, আজকে যারা উলটা পাল্টা ফতুয়া দিচ্ছেন, এরকম ফতুয়া আমাদের দেশে আগেও দেওয়া হয়েছে। যখন পুলিশ আক্রমন করে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হকরা পালিয়ে যায়, পুলিশের লাঠি পড়ে গরীব অসহায় মাদ্রাসার ছাত্রদের উপর। আমি ছাত্রদের দোষ দেইনা, যারা তাদেরকে ব্রেইন ওয়াশ করেছে, মগজ ধোলাই করে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তারাই মূলত অপরাধী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *