মানুষের ঈশ্বর তো পশু-পাখিরও ঈশ্বর! যিনি আপনার বা আমার ঈশ্বর, তিনিই তো সমস্ত জীবের ঈশ্বর!
অর্থাৎ ঈশ্বর, মানুষ হিসেবে আপনাকে যতটা কৃপা করেন বা ভালোবাসেন একটা হাতি, গরু, পাখি, সাপ তাদেরকেও ততটাই কৃপা করেন, ভালোবাসেন। ঈশ্বর কখনো পক্ষপাতিত্ব করেন না।
এখন কেউ বলবে, মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে বেশি বুদ্ধিমান। তাই ঈশ্বর মানুষকেই বেশি ভালোবাসেন। মানুষ ঈশ্বরের খোঁজ করতে পারে, ঈশ্বরকে স্মরণ করতে পারে, ঈশ্বরজ্ঞান লাভ করে ঈশ্বরকে উপাসনা করতে পারে। তাই ঈশ্বর মানুষকে বেশি ভালোবাসেন। যদি তাই হয়, তবে মানুষের মধ্যে যে মানুষটা বোকা বা ঈশ্বর চিন্তার ক্ষমতা হারিয়েছেন তাঁকে কী ঈশ্বর কম ভালোবাসবেন বা কম কৃপা করবেন? উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয় তবে আলোচনা আর সামনে আগানোর দরকার নেই। আর যদি উত্তর “না” হয় তবে আমাদের আরও কিছু চিন্তা করার আছে।
মানুষের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্বলদেরকেও যদি ঈশ্বর সমান কৃপা করে থাকেন বা ভালোবেসে থাকেন তবে প্রতিটা জীবকেই তিনি সমান ভালোবাসেন, সমান কৃপা করেন। সে অনুযায়ী প্রতিটা জীবেরই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। মানুষের যেমন বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, বাসস্থানসহ বিভিন্ন উপযুক্ত পরিবেশের দরকার। ঠিক অন্যান্য জীবের বা প্রাণীরও একইভাবে খাদ্য এবং বাসস্থানের মত ব্যাপারগুলোকে নিরাপদ করতে হবে। ঈশ্বর নিশ্চয় মানুষদের কাছে এই পৃথিবী লিজ দেননি। মানুষ বনের পর বন উজাড় করছে। বন্যপ্রাণী হত্যা করে শতশত প্রজাতিকে পৃথিবী হতে বিদায় দিয়েছে। নদী, সাগরেরমত জলাশয়গুলোর প্রাণীরাও মানুষের অত্যাচারে বিলুপ্তির পথে।
ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী: সমস্ত জীবের মধ্যেই ঈশ্বর আত্মারূপে বিরাজ করে। মানুষ, পশু-পাখি, গাছ-পালা সমস্ত চেতন বস্তুতেই তিনি আছেন। এমনকি বিভিন্ন জড়বস্তুতেও তিনি আছেন। “সর্বং খল্লিদং ব্রহ্ম” বা “বাসুবেদ সর্বমিতি” ইত্যাদি দ্বারা তিনিই সমস্ত কিছু বলে প্রতীয়মান হয়ে থাকে।
যুক্তি বা দর্শন যাইহোক না কেন, আমাদের উচিত জীববৈচিত্র রক্ষা করা। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। মানুষ যদি অন্য মানুষের জন্য মানবিক আচরণ প্রত্যাশা করে তবে আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহের অন্যান্য প্রাণীদের প্রতিও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে।
তথ্যসূত্র: