উনারা ১৯৬৫ সালে আয়ূব খানের রায়টের সময় দেশত্যাগ করেছিলেন।

Uncategorized

নীচের ছবিটি নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কেউ চিনবে না। আমি  সাত /আট বছর আগে নদীয়ার রানাঘাট স্টেশনে বসে চা পান করছিলাম।উনি সন্নিকটে স্টেশনের কনক্রিটের বেঞ্চে বসে আছেন।আভিজাত্যের দ্যূতি ঠিকরে পড়ছে। আমার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছেন। উনার কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি কাউকে খুঁজছেন? একটু লজ্জা পেয়ে ইতস্ততঃ করে বললেন,না! তারপরে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম যশোর। একটু নড়েচড়ে বসে বললেন যশোরে কোথায়? আমি ঠিকানা বললাম। এবার উনি আমার হাত দুটো ধরে বললেন,বাবা আমি তো জালালপুরের বোস বাড়ির মেয়ে। আহারে কতদিন পরে আমার গ্রামের তোমাকে পেলাম।শুরু হলো তার মাতৃভূমি ত্যাগের অশ্রুঝরা কাহিনীর ইতিহাস।উনি খোকা বোসের মেয়ে। আমাদের মাঠের জমির পাশের জমি এখনও খোকা বোস,পাগলা বোস, রাধাধরের জমি হিসাবে চিহ্নিত। উনারা ১৯৬৫ সালে আয়ূব খানের রায়টের সময় দেশত্যাগ করেছিলেন। আর কোনদিন দেশে ফিরে আসেন নি। কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলেন,আমাদের পুকুর, বাড়ির কাছের কালিতলা,আমগাছ, নারিকেল গাছ,তালগাছ এসব এখনও আছে? আমিও দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় হ্যা,হু করে জবাব দিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে ফিরে এসে দেখলাম সে সবই আছে কেবল মালিকানা বদল হয়েছে।  কালিতলার বটগাছ আছে সেটা খাসজমি সেটাও অন্যের দখলে। পুকুরটা প্রাক্তন চেয়ারম্যান  রফিকউল্লাহর কাছে হাতবদল হয়েছে। জমিজমা জালালপুরের মছিলা গাজী আর নূরু মাতব্বরের কাছে নামমাত্র দামে বিক্রি করেছিলেন। বিনিময়ে উনার দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সংগে গরুর গাড়ি করে ঝিকরগাছা (নামটা মনে রেখেছেন)  হয়ে বেনাপোল দিয়ে রাতের আঁধারে বর্ডার পার করে দিয়ে এসেছিলেন। আর কোনদিন স্বদেশের মাঠিতে পা দেন নি। বর্তমানে ছেলেমেয়েরা কোনদিন বাবা দাদার ভিটে দেখতে আসতে চাই নি।অনেক ব্যাথা বুকে নিয়ে বর্ডার পার হওয়ার দুঃস্বপ্নের কাহিনী বুকে চেপে রেখেছিলেন।অাষাঢ়ের অজস্র ধারার মত সে করুন কাহিনী আমাকে বলে বৃদ্ধা যেন মেঘ মুক্ত আকাশের মত পরিশুদ্ধ হলেন।সে কাহিনী লিখতে চাইলেও লেখা যাবে না। উনি বর্তমানে গাংনাপুর বাজারের পাশেই থাকেন।আমি বললাম আমারও আত্মীয় স্বজনের অনেকেই ওখানে থাকেন যদি সময় পাই আমি আপনার সংগে দেখা করবো। ভিটেছাড়া,দেশছাড়া মানুষের নাড়িপোতা ভিটের প্রতি যে কি টান সেদিন এ বৃদ্ধানারীর মুখে শুনেছিলাম। আরো শুনেছিলাম কোন সে অদৃশ্য সম্মান হানি চাবুকের  কশাঘাতে এসব মানুষ রাতের আঁধারে এক বস্ত্রে দেশান্তরী হয়েছিল। এখন যারা বর্তমানে এদের জমি জায়গা অবৈধভাবে ভোগ দখল করছে,কিংবা শত্রু সম্পত্তি হিসাবে কাগজপত্র ঠিক করে নিয়েছে, একবারের জন্যে হলেও জীবদ্দশায় তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসুক। নইলে মহাকাল কিন্তু কাউকেই ক্ষমা করবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *