ইংরেজ শাসনামল ব্যাপারে একটা রিউমার আছে, যে তারা ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসি অবলম্বন করে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু মুসলমান দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়ে গেছে।
এই ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসি আসলে কি??
ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসি বুঝতে হলে আগে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক এবং হিন্দু মুসলমান বিশ্বাস অবিশ্বাস বিষয়গুলো বুঝতে হবে।
ভারতের যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু সেখানের হিন্দুদের মনোভাব এবং যেখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু সেখানের মুসলমানদের মনোভাব বোঝাটা এই বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদতে ইংরেজরা ভারতের ক্ষমতা দখলের পরে, হিন্দু মুসলমানের এইযে মানসিক দ্বন্দ্ব এবং একে অন্যকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে না পারার যে চরিত্র সেটা খুব সহজেই ধরে ফেলেছিলেন। আপনারা খেয়াল করে দেখে থাকবেন এই অঞ্চলে কোন শীর্ষপদে বা নেতৃত্বে কে আছে, এবং সেই লোকের ধর্মিয় পরিচয় কি, এটা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অন্তত একটা বড় অংশের মানুষের কাছে বিষয়গুলো এমনই।
তো ইংরেজরা সহজেই বুঝে গেলো যে, একইসাথে একই ফোরামে বা শাসনব্যবস্থায় হিন্দু ও মুসলমানদের একত্রে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নিয়ে আসাটা অনেকটাই কঠিন। অতঃপর তারা হিন্দুদের জন্য হিন্দুদের চাওয়া পাওয়া ও মুসলমানদের জন্য মুসলমানদের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েই সামনে এগোনোকে সঠিক ও সহজতম পথ হিসেবে দেখলো।
কালক্রমে এটাই ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসিতে গিয়ে দাঁড়ালো। ইংরেজরা হিন্দু ও মুসলমান আলাদা করে দেয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে ব্যাপারটা নিয়েছিল, তেমন কোন তথ্য প্রমাণ আসলে নেই। অঞ্চলভেদে আলাদা সংস্কৃতি আলাদা শাসনব্যবস্থাই ছিল। সে কারনেই অঞ্চলভেদে আলাদা আলাদা রাজা, জমিদার, সুবাদার, নবাব ইত্যাদি ইত্যাদি ছিল।
১৯৪৭ সালে ইংরেজরা যখন চলে গেলো, হিন্দু ও মুসলমান আলাদা রাষ্ট্র হবে, এই বিষয়টাও ইংরেজদের মাথা থেকে আসেনি। এসেছে এই ভারতের হিন্দু ও মুসলমানদের মাথা থেকেই। এবং এক পর্যায়ে ইংরেজরা দুটো আলাদা রাষ্ট্র গঠনে বাধ্যও হয়েছিলেন।
তাছাড়া ভারতের মাটিতে উল্লেখযোগ্য যতগুলো হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হয়েছে, তার সিংহভাগই ইংরেজরা আসার পূর্বে এবং চলে যাবার পরেই হয়েছে। হিন্দু ও মুসলমান বিভেদগত সমস্যা এখনো আছে, অথচ ইংরেজরা গেছে প্রায় একশো বছর হতে চললো।
যেসমস্ত ঐতিহাসিকগণ, ইংরেজদের ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসিকে এই উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক সমস্যাগুলো উত্থানের কারন হিসেবে দেখেন, তাদের কাছে ইংরেজদেরকে কেন ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসি ফলো করতে হলো, সে ব্যাপারে কোন বাস্তবভিত্তিক ব্যাখ্যা নেই। এমনকি ইংরেজদের আগমনপূর্ব এবং প্রস্থান পরবর্তীও কোন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারন ও সংখ্যার হিসেব নেই।
সব দোষ ইংরেজদের উপর দিয়েই নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করা যায় না। নিজেদের হিন্দু মুসলমান সম্পর্কের টানাপোড়েনগুলো ঢেকে দেয়া যায় না।