‘একদিন মাটির ভেতর হবে ঘর,
কেন বান্ধো দালান-ঘর?’
-গানটা যারা গায় আর যারা শোনে, তারা কি কথাগুলো অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করে? করে না। করলে তো ভাই-দেবরের লাশ দাহ করে এসেই প্রতিবেশীর গাছ কেটে জায়গা দখল করে ঘর করতো না কেউ; মৃতের জন্য শোক না করে, তার আত্মার শান্তিকামনায় কাজ না করে অভিজাত বিল্ডিং বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো না কেউ।
.
শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাদের গেছে শুধু তারাই কাঁদে। স্ত্রী-সন্তানের বাইরে শরীক ও প্রতিবেশীরা যদি হাসাহাসি করে সেটা অবশ্যই দৃষ্টিকটু লাগে। না দেখেও উপায় থাকে না অনেক সময় ঘরে ও উঠানে পর্যাপ্ত জায়গা রেখে বাড়ির সামনের পাবলিক রাস্তায় কাজ হলে। খুব কষ্ট লাগে তখন মৃতের পরিবারের কথা ভেবে– এই স্বার্থপর জগতে মৃত মানুষটিকে ছাড়া কতটা বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। নিজের অভিজ্ঞতাগুলো বারবার স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।
.
এই পৃথিবীতে সবাই এসেছে একা, যাবেও একা। যাবার সময় এক গাছি সুতাও সাথে যাবে না। এটা জেনেও মানুষ অর্থের পিছে ছোটে, লোভ-লালসা করে অন্যের হক কেড়ে খায়, অন্যের জায়গা দখল করে মানুষ-ঠকানো ব্যবসা করে মর্তের আয়েশী জীবনের আয়োজন করে। এভাবেই অন্যকে কষ্ট দিয়ে যারা নিজেরা ভালো থাকে, মৃত্যুর পর ধর্মের দোহাই দিয়ে ‘মৃত মানুষ নিয়ে কিছু বলতে নেই’ বলে জীবিতদের মাঝে খারাপ প্রবৃত্তিগুলোকে উৎসাহিত করা হয়। অন্যদিকে ভালো মানুষ, যে বাঁচলে আরও দশজন ভালো থাকতো, তাকে অসময়ে নিয়ে যান বিধাতা খারাপদের রেখে। এভাবে পৃথিবীটা দিনদিন অসুরদের বাসস্থান হয়ে উঠছে। এর থেকে মুক্তি চাই।
.
যে নাবালকটি সদ্য বাবাহারা হলো, তাকে সবাই আগলে রাখবেন। তার বাবার ব্যবসা তাকেই সামলাতে দিন, নিজেরা দখল নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। সম্ভব হলে তাকে পড়ালেখায় উৎসাহ দিন। যে বিধবা নারী অল্প বয়সেই স্বামীহারা হলেন, পারলে তাকে বাজার করে দিয়ে মানসিক সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকুন। ছেলেকে তিনি কিভাবে মানুষ করবেন তা বাতলে দিয়ে উপকার করুন। ভুলেও তাকে শোষণ করবেন না। পরিবারের আপনরূপী শত্রুদের থেকে তাকে ও তার সন্তানকে নিরাপদ দূরত্বে রাখবেন। যে যাওয়ার সে গেছে, ছেলেটা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তা দেখে সকলের দায়িত্ব। তাকে নিয়েও নোংরা রাজনীতি শুরু করবেন না যেন।