একাত্তরে এক কোটি বাঙালি শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়ে ভারত এক অবিস্মরণীয় মানবতা দেখিয়েছিল বিশ্বকে।

Uncategorized
একাত্তরে এক কোটি বাঙালি শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়ে ভারত এক অবিস্মরণীয় মানবতা দেখিয়েছিল বিশ্বকে। কিন্তু তারও প্রায় পাঁচশো বছর আগে ❝সবার ওপর মানুষ সত্য❞ বলে বাঙালি বিশ্বকে দিয়েছিল মনুষত্ববোধের যুগোত্তীর্ণ সবক। সর্বস্ব হারিয়ে সেদিন যারা ওপারে আশ্রয় নিয়েছিল, তার মাত্র দুই দশক আগে তারাই ওপারের মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বৃটিশ ঔপনিবেশ থেকে স্বাধীন করেছিল সমগ্র ভারতবর্ষকে। সুতরাং আজ যে রোহিঙ্গা শরনার্থী নারী মিডিয়ার সামনে এসে বলেছে, বাংলাদেশ সরকার আমাদের মিয়ানমার সরকারের সামরিক জান্তাদের চেয়ে বেশি নির্যাতন করছে, তার সাথে একাত্তরের বাঙালি শরনার্থীদের একই মানদণ্ডে বিচার করলে ভুল হবে।
এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি যেমন রোহিঙ্গা, তেমনি পৃথিবীর অসভ্য, ধর্মান্ধ আর অকৃতজ্ঞ জাতির তালিকায়ও এরা প্রথম দিকে থাকবে। লেখার এই অংশটুকু পড়ে আমার কথাগুলো ছট করে মানবতা বিরোধী বলে বসবেন না। কারণ নিজভূম থেকে বিতাড়িত মজলুম রোহিঙ্গা জাতিটির অধিকারের পক্ষে শুরু থেকেই আমি লেখালেখি করে এসছি। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বৌদ্ধবাদের বর্বরতা যেমন সত্য, তেমনি এরা যে নিজেরাই একটা অকৃতজ্ঞ আর ভয়ংকর ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাতি এটাও সত্য। কী বর্তমান, কী অতীত রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাসটাই অপরাধ আর নৈরাজ্যে ভরা। 
এই আরাকানী রোহিঙ্গারা পর্তুগিজ জলদস্যুদের সাথে মিলে গড়ে তুলেছিল হার্মাদ বাহিনী। এরা তৎকালীন মুঘলশাসনাধীন বাংলায় অবাধ খুন, ধর্ষণ, লুঠতরাজ আর অপহরণ চালাতো। সেই সময় দাস প্রথার ব্যাপকতা লাভ করেছিল এই আরাকানী দস্যুদের হাত দিয়ে। এই আরাকানী হার্মাদরা লুঠতরাজের পাশাপাশি দাস ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়েছিল। গোটা বাংলার স্থলভূমিতে গিয়েও হার্মাদরা ব্যাপক লুঠতরাজ এবং অকথ্য অত্যাচার চালাত। তারপর পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে অপহরণ করে দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন বন্দরে বণিকদের কাছে গিয়ে বিক্রি করে দিত। এক সময় এই রোহিঙ্গা দস্যুদের ভয়ে বাংলার সমুদ্রতীরবর্তী দ্বীপ অঞ্চল জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল। ফরিদপুর থেকে নদীপথে চট্টগ্রাম ভ্রমণের পথে বাঙালি মহাকবি আলাওলের পিতাকে হত্যা করে এই রোহিঙ্গা হার্মাদরা আলাওলকে আরাকান রাজের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল দাস হিসেবে। 
জাতিগত ইতিহাসের প্রতি সুবিচার করে যাচ্ছে রোহিঙ্গা জাতি। শরণার্থী হিসেবে বসবাসের শুরু থেকে এরা গোটা কক্সবাজার, রামু, উখিয়া, টেকনাফসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে ত্রাস ছড়িয়ে চলেছে। ওখানকার বাঙালিরা রীতিমতো সংখ্যালঘুতে পরিনত হয়েছে রোহিঙ্গাদের দৌরাত্ম্যে। মাদক, ইয়াবা, চোরাচালানসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের শরণার্থী রোহিঙ্গারা। ব্যাবসায়ী, চাকুরে, ছাত্র, জনতা সর্বোপোরী সারা বাংলার মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল এদের জন্য। কিন্তু এদের চোখেমুখে সেসবের প্রতি ন্যুনতম কৃতজ্ঞতাবোধ আমি দেখিনি। এরা এসবকে বাংলাদেশের উদারতা ভাবতেও নারাজ। পরিবর্তে আমাদের এইসব সাহায্য সহযোগিতাকে তাদের ন্যায্য বলে ভাবছে। সেটারও একটা ঐতিহাসিক কারণ আছে। সে বিষয়ে আরেকদিন বলবো।
একবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে পুরানো কাপড়ের স্তুপ পড়ে থাকতে দেখে আমি একজন সেচ্ছাসেবীকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সেচ্ছাসেবী লোকটি আমাকে বললো “এগুলো সব ত্রাণের কাপড়। এরা পুরানো কাপড় নেবে না। তাই ফেলে দিয়েছে।” মনে পড়লো সে সময় তীব্র শীতে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, মারা যাচ্ছে। এই পুরানো কাপড়গুলো হলেও অন্তত তাদের জীবনটা বেঁচে যেতো। এক লক্ষ রোহিঙ্গা বছর ঘুরতেই দুই লাখে পৌঁছোয়। ধর্মের দোহায় দিয়ে এরা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করে না। অথচ এরা কোরআন শরীফের চারপাশ অক্ষত রেখে ভেতরে সুরঙ্গের মতো করে তার ভিতরে করে ইয়াবা পাচার করে। 
একাত্তরে জন্মযুদ্ধকালীন ভারত বাঙালি শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়ে যে মানবিকতা দেখিয়েছিল, বাঙালি আজো ভারতের সেই উদারতা ঋণ স্বীকার করে। কিন্তু যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছে, মিয়ানমার সামরিক জান্তাদের দ্বারা তারা যে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, বাংলাদেশে তারা তদোপেক্ষা বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। শরনার্থী হয়ে এসে থেমে নেই তাদের অপরাধ। ভয়ংকর মাদক ইয়াবা এরা নানান কায়দায় পৌঁছে দিচ্ছে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবা সহজলভ্য হয়ে উঠেছে দেশে। ফলে গোটা দেশের যুবসমাজ আসক্ত হয়ে পড়ছে এই মরন নেশায়। 
এই রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহল অসহনীয় একটা নীরবতা পালন করছে। শুরু থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থাগুলো মানবতার নামে ত্রাণের যে আধিক্য দেখিয়েছে, তাতে করে আমার সব সময় মনে হয়েছে মোড়ল রাষ্ট্রসমুহ রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফিরিয়ে নেয়ার তদবির করার পরিবর্তে বাংলাদেশ স্যাটেল্ড করে দেয়ার চেষ্টাটাই বেশি করছে। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মধ্যেও নিজভূমে ফিরে যাওয়ার কোন তাড়না নেই, ইচ্ছেটুকু দেখা যায় না। তারা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, সভাসমাবেশ করছে। তারা দাবি করছে মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা, চাকরি, মানসম্মত রেশন এবং উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। 
বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে এই মুহূর্তে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়া এই বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় সাতকোটি। এই সাতকোটি শরনার্থীর মধ্যে বার লাখ হচ্ছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা জনগোষ্ঠী। কিন্তু এরা পৃথিবীর আর আর বাস্তুচ্যুত শরনার্থীদের মতো সভ্য নয়। এরা ধর্মান্ধ, অশিক্ষিত, বর্বর এবং অপরাধপ্রবণ। বাংলাদেশ এদের আজীবনের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেও এরা আপত্তি করবে না। এদের মধ্যে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের কোন ইচ্ছে নেই। আজীবন পরজীবি হয়ে থাকলেও এদের জাতীয়তাবোধ তৈরি হবে না।
রহমান বর্ণিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *