এদের ছাড়া শহরের পর্যটন মুল্য কি?

Uncategorized

ছবিটি ১৯৭৮ সালে ঢাকা রমনা পার্কের কোন এক স্থানের যেখানে দেখা যাচ্ছে এক লোক ভ্রাম্যমান সার্কাস প্রদর্শনীতে মুখে একটি টেবিল ও তিনটি চেয়ারকে শূণ্যে ধারন করেছেন । সত্তরের দশক এমনকি আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রামে গন্জের হাটে বাজারে পার্কে মাঠে এমন সব সার্কাস ওয়ালাদের দেখা মিলতো। তাদের এইসব প্রদর্শনী বা মজমা’তে সন্তুষ্ট হয়ে দর্শকরা দর্শনী দিতেন যে যার সাধ্য মতো। আজকাল মানুষকে নির্মল বিনোদন যোগাতে এদের আর দেখা যায় না। দর্শকদের বিনোদন দেয় এখন ফাত্রা ধর্ম ব্যবসায়ীরা ওয়াজ মাহফিলে।

মনে পড়ে প্রতি হাটবারে আমার নেশা ছিল বাড়ির সংলগ্ন বাজারে ঘুরে ঘুরে এইসব মজমা ওয়ালাদের নানা রকমের প্রদর্শনী দেখা। অথচ অবাক ঘটনা উন্নত বিশ্বের দেশ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বড় শহরে আমি এখনো এদের দেখা পাই। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল আইল্যান্ডে স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে ফেরির জন্য লাইন ধরেছি হঠাৎই দেখি এক লোক পিয়ানো একোর্ডিয়ান গলায় ঝুলিয়ে আমাদের সামনে এসে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজাতে লাগলেন। আনন্দে আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল তখন, এই লোকটি কি করে জানলেন আমরা বাংলাদেশের মানুষ! পকেট থেকে পাঁচ ডলারের একটি নোট দিতেই সে পরিস্কার বাংলায় বললেন ..  জয় বাংলা। টাইম স্কয়ারের সামনেও দেখেছি বেশ কিছু পাথরের মুর্তি স্থির দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎই নড়েচড়ে উঠল সেইসব মুর্তি। আমরা তো অবাক! টরন্টোর ডান্ডাস স্কয়ারেও আমি নানা ধরনের প্রদর্শনী দেখি, মজমা দেখি, গান ও বাদ্যযন্ত্র শুনি তন্ময় হয়ে। খুশি হয়ে দর্শকরা তাদের উল্টো করে পেতে রাখা টুপিতে ডলার  রেখে দেন। এটাই তাদের জীবিকা। এরাই এক একটি শহরের সাংস্কৃতিক আবহকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরেন। এরাই আমাদের এমব্যাসেডর। সরকারের সংস্কৃতি বিভাগ থেকে তাদের জন্য ভাতা বরাদ্দ আছে। সবাই হাসিমুখ ধরে রেখেছেন। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে কত ভাল লাগে তাদের দেখতে। আমাদের বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য পর্যটন বিভাগের এসব একটু ভেবে দেখা দরকার। ভারতের রাজস্থান, দিল্লী, আগ্রা এমনকি কলকাতার রাস্তাতেও আমি এমন স্ট্রীট সিংগারদের গান গাইতে দেখেছি। 
এদের ছাড়া শহরের পর্যটন মুল্য কি? আমরা বিষয়টি একটু ভেবে দেখতে পারি না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *