এরা কাঠবিড়ালির মতো অবলীলায় উঠে পড়েন জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায়! জানেন কি, কারা এই সেবক?
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় প্রত্যহ নতুন নিশান বাঁধার নিয়ম দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। প্রতি একাদশীতে একটি প্রদীপও জ্বালানো হয় সেখানে। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মন্দিরের চূড়ায় নিয়মিত রং করাও হয়। প্রশিক্ষণ ছাড়া ২১৪ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মন্দিরের চূড়ায় উঠে এই কাজগুলি করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। জগন্নাথ মন্দিরের এই বিশেষ কাজগুলি যারা করেন, তারা গরুড় সেবক বা চুনর নিয়োগ নামে পরিচিত।
৮০০ বছর পূর্ব্বে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাজা অনন্তবর্মণ চোড়গঙ্গা দেব স্থানীয় চোল বংশের এক পুরুষকে মন্দিরের চূড়ায় এই ত্রিকোণ নিশান বাঁধার দায়িত্ব দেন। সেই থেকে এই চোল বংশের সদস্যেরাই বংশানুক্রমিকভাবে নিশান বাঁধার কাজ করে আসছেন।
চোল বংশোদ্ভূত নির্বাচিত পুরুষদের ছোটবেলা থেকেই মন্দিরে আরোহনের বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলা হয়। মন্দিরে এদের ভীষণ গুরুত্ব, কারণ প্রতি সন্ধ্যায় এরাই মন্দিরের চূড়ায় উঠে ভক্তদের উৎসর্গকৃত পতাকা বেঁধে দিয়ে আসেন নীলচক্রের গায়ে।
প্রতিদিন বিকাল পাঁচটায় রেশম বস্ত্রে সজ্জিত গরুড় সেবক সমস্ত পতাকা নিজের কোমরে জড়িয়ে মন্দিরে চড়তে শুরু করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে গরুড় সেবক পৌঁছে যান নাটমন্দিরের উপরে। এরপর নীলচক্র পর্যন্ত প্রায় ১০০ ফুট খাড়া দেওয়াল। এক বিশেষ ভঙ্গিতে পিছনের দেওয়ালে পিঠ দিয়ে খাঁজের দুদিকে বেরিয়ে থাকা দেওয়ালে হাত ও পায়ের চাপ দিয়ে উঠতে থাকেন সেবায়েত। খাড়াই অংশটি পার হলে আসে মন্দিরের চূড়ার অংশের কমলালেবুর আকৃতির আমলক। মন্দিরের মাথায় ঝোলানো কাছির সাহায্যে এই অংশে উঠে পড়েন তারা। গোটা ব্যাপারটা ঘটতে সময় লাগে মিনিট কুড়ি মতো।
নীলচক্রের সঙ্গে বাঁধা খুঁটি থেকে পুরনো নিশান নামিয়ে বাঁধা হয় নতুন নিশান। পুরনো নিশান কোমরে জড়িয়ে নেমে আসেন গরুড় সেবকেরা। এই পুরনো নিশান বিক্রি হয়, কেনার জন্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায় ভক্তদের মধ্যে।
© 2022 Temples with Atanu
https://www.youtube.com/c/TempleswithAtanu