পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আমাদের বাংলাদেশের কক্সবাজার। আকারে দীর্ঘতম হলেও পর্যটন সুবিধা ও নিরাপত্তার দিক থেকে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম সমুদ্র সৈকতের নাম কক্সবাজার। নব্বইয়ের দশকে এক বিদেশী পর্যটক সেখানে ধর্ষিত হবার পর ইউরোপ ও এশিয়ার কোন পর্যটক কক্সবাজারে যাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকের পর নিজ দায়িত্বে দেশীয় পর্যটকরাই সেখানে মুল ভরসা। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক দম্পতি সেখানে স্থানীয় কিছু লোকের হাতে শ্লীলতাহানির পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে কক্সবাজার কি আসলেই কোন পর্যটন কেন্দ্র না ধর্ষক ও ড্রাগ মাফিয়াদের অভয় অরণ্য?
তিন বছর আগে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে দেখি সেখানে সমুদ্র সৈকত জুড়ে হোটেল আর হোটেল। শহর থেকে বীচ পর্যন্ত দখল আর দখল। অমুক নেতা তমুক নেতা এমপি’র মালিকানার জমির সাইনবোর্ড এখানে সেখানে। ফলে সৈকতের সৌন্দর্য্য ঢেকে গেছে সিমেন্টের প্রাচীরে। পাঁচ তারা হোটেলের সুইমিং পুলে এক বোতল বিয়ার চাইলাম দেখি হোটেল এটেনডেন্ট দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে বলেছেন ‘ তওবা তওবা স্যার, মুসলিম কান্ট্রিতে মদ নিষেধ ‘
বললাম . বলেন কি? বিদেশী পর্যটকরা আসেন এখানে?
হ, স্যার গতবছর একজন আইছিল।
কাছে এসে কানে কানে বলল , দুই নম্বরি সাপ্লাই আছে স্যার । টাকা বেশি দিলে পৌঁছে দেবে আপনার রুমে।
শুনে আমি হতভম্ব।
তাহলে কোন বিদেশী আসবেন আপনাদের এই লুকোচুরি খেলা খেলে এখানে অবকাশ যাপন করতে!!তারপর নিরাপত্তার বালাই নেই সন্ধ্যার পর। কোন রিয়েক্রিয়েশন সেন্টার নেই, বিচ- বার, স্পা সেন্টারের বালাই নেই, ক্যাসিনো নেই , শুধু শুধু সমুদ্রের বাতাস খেয়ে আর বিচ চেয়ারে বসে আকাশের চাঁদ দেখে তাঁরা গুণবার জন্য তো এখানে কেউ আসবেন না!
. স্যার ,মুসলিম কান্ট্রি তো , কি আর করবেন?
কানাডা থেকে মাত্র দুই ঘন্টার আকাশপথ দুরত্বের মধ্যে পৃথিবীর স্বনামধন্য পর্যটনের দেশের নাম কিউবা। দীর্ঘদিনের সমাজতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র তাদের দারিদ্রতা ছাড়া আর কিছু দিতে না পারলেও তাদের জাতীয় আয়ে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার যোগ হয় শুধুমাত্র পর্যটন থেকে। টোটাল জিডিপির ১০.৬% হলো পর্যটন আয়। কানাডার অন্যতম প্রতিবেশী মেক্সিকোর অবস্থাও এমন । সেখানেও জিডিপির নয় ভাগ আসে পর্যটন থেকে। কেন এমন হয় , কারন কিউবার লোকজন মনে করেন এক একজন বিদেশী পর্যটক তাদের কাছে মা লক্ষ্মী । তারা আসেন বলেই তাদের উপার্জনের একটা পথ খোলা আছে। কিউবাতে কোন পর্যটক স্থানীয়দের দ্বারা নিগৃহীত হলে তার দশ বছরের জেল জড়িমানা হয়। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সরকার খুব কঠোর আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। ড্রাগ কার্টল মাফিয়াদের দেশ মেক্সিকোতেও পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তার বলয় আছে। মুসলিম কান্ট্রি ইন্দোনেশিয়ার কাছে থেকেও বাংলাদেশের শেখার আছে, বালী দ্বীপে কি বার ক্যাসিনো নাইট ক্লাব নেই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বলেন কাতার বলেন সব জায়গাতেই পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ব্যবস্থা আছে, নাইট ক্লাব আছে বার আছে । তাহলে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে?
কিছুদিন আগে আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু পর্যটনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তাকে আমি বলেছিলাম বাংলাদেশের অমিত সম্ভবনা আছে পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য। কিভাবে কক্সবাজার সহ সেন্টমার্টিনকে বিদেশী পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত নিরাপদ জোন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তার একটা ধারনা আমি দিয়েছিলাম। কিভাবে সেখানে ক্যাবল কার, গান্ডলা বসিয়ে আরো আকর্ষণীয় করে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন সম্ভব সেটা বলেছিলাম। যেখান থেকে আমাদের অর্থনীতি উপকৃত হবে। কিন্ত কিছুদিন পরেই বন্ধুটি বদলী হয়ে গেলেন। কানাডাতে ভ্রমণকারী সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বলার পর তিনি বললেন ‘আমরা তো দেশের সংস্কৃতি বিরোধী কিছুই করব না। পর্যটনের সুবিধার জন্য সেখানে সমুদ্র সৈকত বরাবর রাস্তা নির্মাণ ও ওয়ান স্টপ বিমান বন্দরের ব্যবস্থা করা, নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা কিংবা বিদেশী পর্যটকদের জন্য বার ক্যাসিনো বানালেই যে দেশের সংস্কৃতির ধ্বংস হয় সে দেশ থেকে পর্যটন শিল্পের বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়াই বরং উচিত কাজ হবে । বাংলাদেশের নীতি নির্ধারক ও পরিকল্পনাবিদদের ধর্মীয় অনুভূতি ও সংবেদনশীলতা এখন দুবাই ,ইন্দোনেশিয়া,তুরস্ক গেলেও বিনষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে। কারন বাংলাদেশেই একমাত্র খাঁটি মুসলমানদের দেশ বাকি সব তেজপাতা।