কনটেন্ট মার্কেট একতরফা ভাবে দখল করে রেখেছেন আমাদের হুজুররা।

Uncategorized

ফেসবুকে এখন আমার একটা বিনোদন হচ্ছে ওয়াচ এ গিয়ে নানান কিসিমের ভিডিও দেখা। দেখেটেখে যা বুঝলাম, এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ভিডিও কন্টেন্টের চাহিদা আকাশচুম্বি।

এই কনটেন্ট মার্কেট একতরফা ভাবে দখল করে রেখেছেন আমাদের হুজুররা। কোনো ওয়াজই পেলাম না যেখানে হাজারের নিচে কমেন্ট আছে, দশ হাজারের নিচে লাইক আছে। এতেই বুঝা যায় কী বিপুল সংখ্যক মানুষ অনলাইন ভিডিতে অভ্যস্ত হয়েছেন।

গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে যা বুঝলাম, হুজুরদের মধ্যে এই কনটেন্ট মার্কেট দখল নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলছে। যার কারনে অনেকেই একে ওপরের বিরুদ্ধে লেগে আছেন, ট্রল করছেন। যেমন আজহারী বলেছেন রাসুল ( সাঃ ) এর সিক্সপ্যাক শরীর ছিল, এটা নিয়ে তাকে গালাগালি করে ওয়াজ করতেছেন আরো কয়েক হালি হুজুর। তাহেরি হুজুর ( বিখ্যাত চা খাবেন, ঢেলে দেই…ডায়লগের জন্মদাতা) এর বিরুদ্ধেও অনেকে আছে, আবার তাহেরি হুজুর নিজের পক্ষেও জোরদার ভুমিকা রেখে চলছেন।  ইন্টারেস্টিং একজন আছেন, উজানির পীর সাহেব, উনার ওয়াজের সময় কিছু লোক পাগল হয়ে যায়। পরম জজবায় তারা পীর সাহেবকে জড়িয়ে ধরে চুম্মাচাটি খাইতে চায়, কাপড়চোপড় ধরে টানাটানি করে। কীএক্টাঅবস্থা!   এই ভক্তরা আসলেই বাতেনি ভক্ত নাকি ভন্ড সেটা নিয়ে কমেন্টের পর কমেন্ট ঝগড়াঝাটি চোখে পড়ে। সব মিলিয়ে একটা উত্তেজনাকর অবস্থা। ফেসবুকের পোস্ট থেকে এই উত্তেজনা পাওয়া সম্ভব নয়, সেটা একমাত্র ভিডিওই দিতে পারে।

তবে এর মাঝে একটি সুক্ষ রাজনীতি চোখে পড়ল। সেটি হচ্ছে ওয়াজের সিজন ঘিরে জামাতি  বক্তারা ধীরেধীরে মানুষকে উত্তেজিত করার একটা চেষ্টা করছে সারাদেশ জুড়ে। এরা যে কাজটি করছে সেটি হচ্ছে প্রথমে কোরান হাদিস থেকে ভালোভালো কথা বলে ওয়াজ করছে। যখন লোকজনের জজবা তৈরি হচ্ছে, তখনই কৌশলে সাঈদীর কথা বলা শুরু করে। সাঈদীর কথা বললে অবধারিত ভাবেই সেখানে ঐ এলাকার নেতা টাইপের যারা আছে তারা প্রতিবাদ করে। কারন এখন তো নেতা বলতেই আওয়ামী লীগ, এলাকার প্রভাবশালী মানেই সবাই আওয়ামী লীগ, সুতরাং তারা তাদের রাজনীতির জন্যই এখানে আপত্তি তুলে। কিছু কিছু জায়গায় লোকাল থানার পুলিশ এসেও বাঁধা দিচ্ছে।
এই বাঁধার সাথে সাথেই বক্তারা অত্যন্ত জোশে, ‘কোরানের কথা বলতে বাঁধা দেয়া যাবে না। যারা বাঁধা দেয়, তারা আল্লাহর দুশমন, নবীর দুশমন’- এরকম করে বড় করে হাউকাউ তৈরি করে মঞ্চে। তখন ওয়াজ শুনতে আসা জনগনও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে।

অনেকগুলো ভিডিও দেখে বুঝলাম যে এই রাজনীতি বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছে। ‘দেখুন কীভাবে প্রশাসন বাঁধা দিল ওয়াজ মাহফিলে’ এমন শিরোনামের ভিডিওতে অনলাইন সয়লাব। জামাতি কিছু নতুন নতুন বক্তা দেখলাম, এরা ভালোই বলে। সম্ভবত জামাতি নেতা তারিক মুনওয়ারও এই সিজনে দেশে এসেছে, একটা ওয়াজ দেখে মনে হলো এটা এবছরের ওয়াজ সম্ভবত, পুরোনো নয়।

তো এই যে কনটেন্ট মার্কেট টেক্সট থেকে ভিডিওতে শিফট হয়ে যাচ্ছে, এটি কয়জনের চোখে পড়েছে জানি না। প্রগতিশীলদের মধ্যে সুলতান মির্জাকে দেখেছি অনেকদিন ধরে ভিডিও কনটেন্ট বানাতে,আর কাউকে তেমন চোখে পড়েনি।

অনলাইনে বাংলা আসার পরপর এর প্রভাব সম্পর্কে প্রথমে যে রাজনৈতিক শক্তিটি সচেতন হয়, সেটি হচ্ছে জামাত। তারা বাংলা ব্লগে একচেটিয়া দাপট দেখানো শুরু করে।
এর বিপরীতে আমরা প্রবল বেগে নেমেছিলাম। সুবিধা ছিল, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেনী মোটাদাগে জামাত বিরোধী। এবং টেক্সট তৈরি বা লেখালেখিতে মধ্যবিত্ত শ্রেনীই এগিয়ে আছে। তাই ব্লগ জগতে জামাতিরা আমাদের সাথে পেরে উঠেনি। সেই ধারাবাহিকতায় শাহবাগ এসেছে। ২০১৫/১৬ সাল পর্যন্ত রাজাকারদের ফাঁসি দেয়ার ক্ষেত্রে সেই অনলাইন এক্টিভিজম বড় আকারে ভুমিকা রেখেছে।

কিন্তু ভিডিও কনটেন্টের বেলাতেও দেখা যাচ্ছে যে জামাতিরা এটিকে বেশ ভালোভাবে ব্যবহার শুরু করেছ। ভিডিও কনটেন্টের শক্তি টেক্সটের চাইতে অনেকগুন বেশি। লেখালেখি দিয়ে একেবারে তৃণমূলের গ্রামেগঞ্জে পৌঁছানো যতটা কঠিন, ভিডিও কনটেন্ট দিয়ে ততটাই সহজ। সুতরাং ভিডিও সুনামি আরো বড় আকারে আসবে।

ভিডিও কনটেন্ট তৈরির এই রাজনীতিতে জামাতিদের পাল্টা বয়ান তৈরির জন্য কি এই প্রজন্মের এক্টিভিস্টরা প্রস্তুত ? দেখে তা মনে হলো না।
অবশ্য টেক্সটের রাজনীতি যখন নির্মিত হয়, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। রাজাকার বিরোধী আন্দোলনটা জনগনের আন্দোলন ছিল। সেই নিঃস্বার্থ প্রেমটা বোধহয় এখন আর নেই।

এখন অনলাইনে সব আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। সবাই ক্ষমতাসীনদের সহমততুতো ভাই।

গ্রামেগঞ্জে জামাত যে নতুন জাল বিছানো শুরু করেছে, এই সহমততুতো বলদরা সেই জালে প্যাচ খেয়ে পুটি মাছের মতো তড়পাবে, আমার কেন জানি তেমনই মনে হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *