কবি হলধর নাগ। যিনি মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে গিয়েছেন।

Uncategorized

#হলধর_নাগ। যিনি মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে গিয়েছেন। অথচ উনার লেখা কবিতা নিয়ে গবেষণা করে রীতিমতো পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন পাঁচজন। উনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পদ্মশ্রী পুরস্কার। মূলত প্রাচীন কোশলি ভাষায় কবিতা লেখেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো নিজের লেখা ২০টি মহাকাব্য এবং সব কবিতা হলধরের মুখস্ত। ৩১ শে মার্চ ১৯৫০ সালে উড়িষ্যার ‘বরগড়’ জেলার ‘ঘেস’ গ্রামে একটি হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান ব‍্যাক্তি। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ায় ক্লাস থ্রি পাস করেই পড়া ছেড়ে দিতে হয় উনাকে। পরিবারের মুখে ভাত তুলে দিতে সেই ঘেস গ্রামের হাই স্কুলের হোস্টেলে রাঁধুনি হিসেবে তিনি  জীবনসংগ্রাম শুরু করেন।
এই কাজের সময় উনার সঙ্গে পরিচয় হয় #মালতি নামে একটি মেয়ের।হোস্টেলের রান্নার কাজে হলধর নাগকে সাহায্য করতে আসতেন মালতি।ধীরে ধীরে মালতিকে ভাল লেগে যায় হলধর নাগের। মালতি বেশ সুন্দরী হওয়ায় মুখে ভালবাসার কথা বলতে না পারলেও রান্নাঘরের দেয়ালে কয়লা দিয়ে কবিতা লিখে মালতিকে ভালবাসার কথা বোঝাতে চাইতেন তিনি।
রান্না ঘরের দেয়াল ভরে উঠত শত শত কবিতায়। শেষে এই লাজুক প্রেমিকটির মনের গভীরতা ভাল লেগে যায় মালতির, বিয়েও করেন।
সংসার বড় হয়, আসে তাদের ভালবাসার প্রাপ্তি হিসেবে মেয়ে নন্দিনী। স্কুলের শিক্ষকদের পরামর্শে স্কুল গেটের পাশে একটি ছোট বইখাতার দোকান খোলেন তিনি, ছেড়ে দেন রান্নার কাজ। এই প্রথম কলম হাতে ওঠে তাঁর, আর সাদা পৃষ্ঠার তো কোন অভাব ছিল না দোকানে; শুরু হয় পুরোদমে কবিতা লেখা।
“কোশলি” ভাষায় কবিতা লিখতেন তিনি। সেই শুরু তার প্রথম কবিতা “ধোদো বড়গাছ” (বুড়ো বটগাছ) প্রকাশ পায় ১৯৯০ সালে। এরপর “ভাব”, “সুরত” একে একে শত শত কবিতা প্রকাশ পায় তার।
লিখে ফেলেন কোশলি ভাষায় ‘আচিয়া’, ‘বাছার’, ‘মহাসতী উর্মিলা’, ‘তারা মন্দোদরী’, ‘শিরি সামালাই’, ‘প্রেম পইচান’, ‘বীর সুরেন্দ্র সাই’, ‘শান্ত কবি বিমাভাই’, ‘র“শি কবি গঙ্গাধর’ ইত্যাদি ২০ টি মহাকাব্য।
তার লেখাগুলি নিয়ে দেশে বিদেশে এখনও পর্যন্ত ৫ জন মানুষ “পিএইচডি” করেছেন, এবং ১৪ জন স্কলার এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৪ সালে তিনি “উড়িষ্যা সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার” পেয়েছেন। তার সেই বইখাতার স্টলটি এখন তার গুণমুগ্ধ স্কলারদের কাছে মন্দির স্বরূপ।
উড়িষ্যা সরকার সংরক্ষণ করেছে সেটিকে।
সম্বলপুরী-কোশলি ভাষায় সাধারণ গ্রাম জীবনের মানুষের দুঃখবেদনার কথা, ভালবাসার কথা, প্রতিবাদের কথা, অতীত গৌরবের কথা, ধর্মের কথা এতো সুন্দর আঙ্গিকে এর আগে কেউ তুলে ধরতে পারেনি।
তাঁর লেখার কৌশল একটি নতুন কাব্য ধারা তৈরি করেছে যেটি তার নাম অনুযায়ী “হলধর ধারা” হিসেবে পরিচিত।
তার কাব্যগুলি সঙ্কলিত করে প্রকাশিত হয়েছে “হলধর গ্রন্থাবলী” এবং “হলধর গ্রন্থাবলি-২”।
এই বইগুলি সম্বলপুর ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স সিলেবাসের পাঠ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে।
(সুত্রঃ অনলাইন মিডিয়া)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *