কানাডায় বাঙালি নারী নির্যাতন
======================
আজ বন্ধু মাহাবুবুব ভাইয়ের কাছ থেকে মন্ট্রিলের এক বাঙালি মহিলার নির্যাতনের গল্প শুনছিলাম !
নারী নির্যাতনের কথা প্রচুর ফেইসবুকে খবরে পড়েছি কিন্তু কানাডার মতো সভ্য দেশে নারী নির্যাতনের গল্প প্রথম শুনলাম !
ঘঠনাটি ঘটেছে মন্ট্রিল শহরেই ! সদ্য বিবাহিত এক বাঙালি দম্পতির মধ্যে !
অপরাধ ?
গৃহবধূ স্বামীকে না বলে জিন্সের প্যান্ট আর টাইট গেঞ্জি ক্রয় করে সেটা পরিধান করে রাস্তায় বাহির হয়েছিল ! মহিলার স্বামীকে কে বা কাহারা স্বামীর কাজে স্ত্রীর আধুনিক পোশাক সম্পর্কে ফোনে জানিয়েছে !
স্বামী কাজ থেকে এসে স্ত্রীকে বেদম প্রহার করে ঘর থেকে বের করে দিলো !
অসহায় স্ত্রী মন্ট্রিল বাঙালি কমুনিটির কিছু নেতার কাছে বিচার দিলেন !
যথাসময়ে বিচার শুরু হলো ! বিচারের রায়ে গৃহবধূকে শরিয়া মোতাবেক দোষী সাব্যস্ত করে তার সেই অতি শখের জিন্স এবং টাইট গেঞ্জি পুড়িয়ে ফেলতে বলা হলো ! এবং স্বামীর বাধ্যগত হতে আদেশ দিলো !
মাহাবুব ভাইয়ের কাছে গল্পটা শুনে অবাক হলাম !
আধুনিক এই সভ্য সমাজে অসভ্য বর্বর পঞ্চায়েত নামে বিচার বসে কিভাবে ?
কেউ কি পুলিশকে এই সম্পর্ক কোন অভিযোগ করেনি ?
আমার জানি বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ নারী তার নিজ গৃহে তারই অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত। আমরা নির্যাতন বলতে মূলত শারীরিক নির্যাতনকেই বুঝি। কিন্তু শারীরিক নির্যাতনের চেয়ে মানসিক নির্যাতন অনেক অনেক বেশি ক্ষতিকর এবং এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। এতে ক্ষতির পরিমাণও সুদূরপ্রসারী। দাম্পত্য জীবনে স্বামী বা স্ত্রীর কোন্ কোন্ আচরণগুলো মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে, সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে প্রবাসে ! স্ত্রীদের হিজাবের ভিতর রেখে দিয়েও অনেক স্বামী সন্দেহপ্রবণতায় ভুগে ! এটি মানসিক রোগ এবং নির্যাতন।
অনেকেই আছে স্ত্রীর বাহ্যিক সৌন্দর্য আর পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে , বাহ্যিক রূপ, সৌন্দর্য নিয়ে কটাক্ষ করাও মানসিক নির্যাতন। এ পোশাকে তোমাকে মানাচ্ছে না, এটা পরতে পারবে না, হিজাব বা সংক্ষিপ্ত পোশাক পরতে হবে- এগুলো সবই মানসিক নির্যাতন।
অনেকেই মনে করে তার স্ত্রী এককভাবে স্বামীর নিয়ন্ত্রনে থাকবে , সেটাও মানসিক নির্যাতন। এতে স্ত্রীর চাহিদা ও অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়।
চলাফেরায় স্বাধীনতা না দেয়া এটিও মানসিক নির্যাতন। স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোথাও যেতে পারবেনা এটি তার মানবাধিকারের পরিপন্থী। স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার যেকোনো মানুষের মৌলিক অধিকার।
স্বামীর অনুমতি ছাড়া কিছু করতে না দেয়া এটিও মানসিক নির্যাতন। এজন্য স্ত্রীর সৃজনশীলতা থাকলেও স্বামীর অনুমতি না পাওয়ার কারণে তা প্রকাশ পায় না। ধীরে ধীরে সে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে না, সারাজীবন পরনির্ভরশীল থেকে যায়।
মন্ট্রিলের সেইসময় এই হতভাগী মহিলার পঞ্চায়েত যারা বসিয়েছিলো তাদের নাম আমি প্রকাশ করবো না ! কিন্তু তাদের জানিয়ে দিতে চাই তারা যা করেছে সম্পূর্ণ অনৈতিক , অমানবিক এবং আইনের পরিপন্থী এবং অপরাধ !
আমাদের মা বোনরা মধ্যযুগে বসবাস করছেনা ! প্রবাসে আত্মীয় স্বজনহীন স্ত্রীদের মারধর করতে সম্ভবত বেশ মজা। সেই মজার কাজটা অনেকে করেন। এই কাজটিকে তারা শরিয়া সম্মত বলেই মনে করেন। তাদের জিজ্ঞেস করলে তাদের কাছে এই বিষয়ে কিছু আয়াত ও হাদিসের রেফারেন্স সব সময় প্রস্তুত থাকে ! যেমন সুরা নিসা আয়াত ৩৪ ! সেখানে লিখা আছে ….
” আর যাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কোন অবাধ্যতা খুঁজে পাও তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না।”
হযরত আয়শা হতে বর্ণিত, তিনি (মুহাম্মদ) আমাকে বুকের ওপর আঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। [সহি মুসলিম, বই -৪, হাদিস -২১২৭]
স্ত্রীকে কেন প্রহার করা হলো সে বিষয়ে শেষ বিচারের দিন তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে না। [আবু দাউদ , বই নং- ১১, হাদিস -২১৪২]
আসলেই কি ইসলামে স্ত্রীদের মারার নির্দেশ আছে? সাহাবাদের মধ্যে কেউ কি কখনো স্ত্রী প্রহার করেছেন? ইসলামে কি স্ত্রী প্রহারের জন্য পরকালে শাস্তির বিধান আছে?
যদি না থাকে তাহলে এই সভ্য পৃথিবীতে শাস্তির বিধান আছে !
কানাডায় স্ত্রী প্রহার অত্যন্ত মারাত্মক অপরাধ !
যদি দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তরা কারাগারের সময় ভোগ করতে হবে !
স্ত্রীকে যৌন নিপীড়ন বা শারীরিক ক্ষতি করার জন্য লাঞ্ছনার মতো অভিযোগের জন্য অভিযুক্তকে ১০ থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
অতয়েব
” ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না ” হ