রাস্তায় হোচট খেয়ে স্যান্ডেল জোড়া ছিড়ে গেলো। রিকশা নিয়ে কাছের একটা দোকান থেকে নতুন এক জোড়া কিনে পায়ে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাটা দিলাম। পুরনো জোড়া কাগজের প্যাকেটে মুড়ে একটা পলিথিনে নিয়েছিলাম। আলকরণের মোড় পেরিয়ে কিছুটা সামনে আসতেই আমাদের কয়েকজন টহল পুলিশ ভাই হঠাৎই থামতে হাত দেখালেন।
…… কি ব্যাপার ভাই?
জিজ্ঞেস করতেই একজন বেশ ভরিক্কি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ,
…… হাতে কি??
আমিও স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলাম
……… স্যান্ডেল ভাই।
মূহুর্তে পেছন থেকে একজন বেশ রাগান্বিত ভাবে বললেন ,
……… ওস্তাদ!!! আপনারে স্যান্ডেল ভাই ডাকছে!!!!!
কিসের মধ্যে কি!! পান্তা ভাতে ঘি!!!
“ওস্তাদ” সাহেবও ব্যাপারটা খেয়াল করেননি সম্ভবত। সাগরেদ সাহেবের কথাতে যেন সম্বিত ফিরে পেলেন। আরো বেশী ভরিক্কি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ,
…… কি বললেন আপনি?!! স্যান্ডেল ভাই বললেন কারে?? এতোবড় সাহস আপনার!!
আমি রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেলাম। কিছুটা রাগও হচ্ছিলো। তবুও যথাসম্ভব ভদ্রভাবেই বললাম ,
……… ভাই আমি আপনাকে কিছুই বলিনি। আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন হাতে কি? আমার হাতের ব্যাগে আসলেই পুরোনো স্যান্ডেল। আমি সেটাই বলেছি।
আমার কথা শুনে রীতিমতো শার্লক হোমস মার্কা একটা ভাব এনে ওস্তাদ বললেন ,
……… হাতের মধ্যে কেউ পুরনো স্যান্ডেল নিয়ে হাটে? আমাদের বোকা মনে করেছেন নাকি? এখনই প্যাকেট খুলে দেখান। অন্যকিছু হলে আজ মজা বের করছি!!
উপায়ান্তর না দেখে আমিও বিরসবদনে প্যাকেট খুলে আমার জীর্ণছিন্ন পাদুকাদ্বয় তুলে ধরলাম ওস্তাদের মুখের সামনে।
অন্যকিছু না পেয়ে ওস্তাদ বেশ বিব্রতই হয়েছেন বোঝা গেলো। তারপর গলার সুর বেশ খানিকটা বদলেই বললেন ,
…… চট্টগ্রামে পোস্টিং এর পর থেকেই দেখছি এখানকার বেশীরভাগ মানুষই বিটলা। পায়ে নতুন স্যান্ডেল পড়ে হাতে পুরনো স্যান্ডেল ব্যাগে নিয়ে হাটতে আর কাউকে দেখিনাই কখনো। যত্তোসব। যান যান। রাস্তা মাপেন।
আমিও রাস্তা মাপতে যাবো , এমন সময় কি ভেবে জানি জিজ্ঞেস করলাম ,
………ওস্তাদ ভাই , কিছু মনে না করলে জানতে পারি কি , আপনার নিজের হোম ডিস্ট্রিক্ট কোথায়।
বেশ গর্ব ভরেই উত্তর এলো
“”বি . বাড়িয়া””
আর কথা বাড়ানো সমীচীন হবেনা বুঝতে পেরে আমিও দ্রুত পদে নিজ গন্তব্যে ফিরে এলাম।
বছরের শেষ প্রান্তে এসে ভালোই অভিজ্ঞতা হলো বটে।
( যাপিত জীবন)