কেমন আছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনির রেখে যাওয়া একমাত্র ছেলে- মেঘ।

Uncategorized

বাবার কবরের পাশে বসে অশ্রু ঝরানো এই শিশুটির নাম মেঘ। সাংবাদিক দম্পতি সাগর  রুনির  রেখে যাওয়া একমাত্র ছেলে। মেঘ এখনো প্রতীক্ষায় থাকে বাবা মায়ের জন্য তারা হয়ত অলৌকিকভাবে ফিরে আসবেন আল্লাহ’র কাছে থেকে। কবরের ঘটনাটিকে সে মনে করতে চায় কোন দুঃস্বপ্নের মতো, যার কোন অর্থ নেই। কেউ হয়ত তাকে বলেছিল তোমার বাবা-মা আল্লাহ’র কাছে চলে গেছেন, আবার ফিরে এলে দেখা হবে। মেঘ তাই তার মামাদের কাছে আল্লাহর ফোন নম্বরটা চায়।

কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে নিহত বাবার ছোট্ট ছেলের সঙ্গে এক সেনা সদস্যের স্নেহের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন সে ঐ সেনা সদস্যের কাছে জানতে চেয়েছিল আমাকে আল্লাহ’র ফোন নম্বরটা দিতে পারবেন। আমি আল্লাহ’র সঙ্গে আর আব্বার সঙ্গে কথা বলব। পিতৃত্ব স্নেহ বঞ্চিত একটি শিশুকে নিরাশ করতে চায়নি ঐ লোকটি। সে নিজের টেলিফোন নম্বরটাই দিয়ে দেয় ছেলেটিকে। নিজেই আল্লাহ সেজে তার সঙ্গে কথা বলতে থাকে। নেটফ্লিক্সে এমন ছবি দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। আমি জানিনা মেঘকে এমন শান্তনার কথা কেউ কখনো শোনায় কি না। মেঘ তার বাবা মা’কে ফেরত পেতে অপেক্ষারত কিন্তু আমরা অপেক্ষায় আছি বিচারের। গত আট বছরে পুলিশের তদন্ত বিভাগ মোট ৭৫ বার এই হত্যাকাণ্ডের ফাইনাল রিপোর্ট বা চার্চশিট দেবার তারিখ পরিবর্তন করেছেন। শত আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। এখন আগামী ২৪ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার হবে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকদূর এগিয়েছে। মানুষের মধ্যে স্বচ্ছলতাও এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে আইনের শাসন অনুপস্থিত। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে। কোন দেশে যখন মানুষের বিচার চাওয়া বা পাওয়ার কোন অধিকার থাকে না তখন সেই দেশ সভ্য মানুষের বসবাসের যোগ্য বলে বিবেচিত হয় না। বর্তমান সরকারকে এই দিকটা ভেবে দেখতে হবে। মানুষ তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়। এটা তাদের মৌলিক অধিকার। আমরা যত উন্নয়নের কথা বলি না কেন , দেশে বিচার ব্যবস্থা ভাল না  হলে সেখানে অপরাধীদের অভয় অরণ্যে পরিনত হয়। সাগর রুনিকে যারা হত্যা করেছে তারা কোন চুনোপুটি নয় , সরকারের মধ্যেই তাদের জন্য প্রটেকশন আছে। এরা সব সরকারের সময়ই সমান শক্তিশালী। বিএনপির আমলেও আমরা দেখেছি ভূমি দস্যুরা লুটপাট দখল চালাচ্ছেন, ১০ তলার উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে  কাউকে হত্যা করছেন কিন্তু বিচার নেই। সাগরকে যারা হত্যা করেছে তারা এরাই। দেশের সব রাজনৈতিক দলের তারা খরচপাতি যোগায়। নেতৃবৃন্দদের গাড়ি বাড়ি উপহার দিয়ে নিজেদের অপকর্মগুলোকে আইন ও বিচারের উর্ধে নিয়ে যায় । উপমহাদেশের বহু হত্যাকাণ্ডের এমন বিচার না হওয়ায় বিচারের বাণী নিভৃতেই কাঁদে।

মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা চাই তিনি দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি দেবেন। অপরাধী সে যেই হোক , তার যেন বিচার হয়। সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই তিনি এই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *