কেমন হবে পুরোহিত প্রশিক্ষণ একাডেমি?

Uncategorized
# কেমন হবে পুরোহিত প্রশিক্ষণ একাডেমি?
(প্রথম কিস্তির পর)
হিন্দু জাতির নবনির্মাণে পুরোহিতদের বাস্তবিক অর্থেই ‘পুরোহিত’ হয়ে উঠতে হবে। আমরা জানি, ‘ব্রাহ্মণ’ হতে হলে নিজের কঠোর সাধনায় ব্রহ্মজ্ঞানী হতে হয়। কিন্তু পুরোহিত হওয়া অতটা সাধনার বিষয় না, বরং প্রশিক্ষণের বিষয়। তাই ‘ব্রাহ্মণ’ কনসেপ্ট বাদ দিয়ে আমরা ‘পুরোহিত’ কনসেপ্টকে পারফেক্টলি প্রয়োগ করার চিন্তা করছি। 
আদর্শ পুরোহিত তৈরি করতে প্রশিক্ষণ একাডেমি আবশ্যক। একাডেমি থেকে সনদপ্রাপ্ত একজন পুরোহিতের কী কী দায়িত্ব থাকবে? দেখে নেওয়া যাক-
* মন্দিরের পূজার্চনা সুচারুভাবে সম্পন্ন করা
* মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা
* মন্দিরের আওতাধীন এলাকার হিন্দুদের ডাটাবেজ মেইনটেন করা
* এলাকার হিন্দুদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ানো, সুপরামর্শ প্রদান
* হিন্দু কর্তাব্যক্তিগণ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন
* সালিশ বিচারে ধর্মরাজের ন্যায় বিচারকের ভূমিকা পালন ও ন্যায়সঙ্গত মিমাংসা করা
* হিন্দুদের পারিবারিক দশবিধ সংস্কার পালনে যাবতীয় সহযোগিতা 
* মন্দিরে সনাতনী বিদ্যাপীঠ বা গীতাস্কুল পরিচালনা
* সবাইকে শুদ্ধ সংস্কৃত পাঠ শেখানো
* প্রতিদিন সকালে সকলের জন্য যোগচর্চার আয়োজন
* কিশোর-কিশোরীদের মার্শাল আর্ট শিক্ষাদান
* সপ্তাহে একদিন হরিসভায় ধর্মের আলোকে হিন্দুদের কাণ্ডজ্ঞান শিক্ষাদান 
* ভক্তদের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় লা*ভ জি-হা+দ এবং মরু সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে প্রতিরোধ ও সুরক্ষার শিক্ষাদান
* প্রতিটি পূজায় অঞ্জলির আগে ওই পূজার তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিক তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করবেন
* অপপ্রচারকারীদের সকল প্রশ্নের উত্তর ও পাল্টা প্রশ্নাবলি ভক্তদের শেখাবেন
* প্রাচীন ভারতে হিন্দুদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় হিন্দুদের মহান অবদান বিষয়ে ভক্তদের মাঝে আলোচনা করবেন
* প্রতিটি হিন্দুকে একেকজন ‘গর্বিত হিন্দু’ হিসেবে গড়ে তুলবেন
* প্রতিটি হিন্দুকে সাহসী, কর্মবীর, ধর্মবীর হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করবেন
* স্থানীয় হিন্দুদের বিপদে-আপদে পূর্বনির্দেশিত উপায়ে ঊর্ধ্বতন কার্যকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবচেয়ে সুষ্ঠু সমাধান করতে ব্যবস্থা নেবেন
* সাহায্যকারী স্বদেশী হিন্দু সংগঠনসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন
* হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি প্রভৃতি বিবেচনা করে পরিবার পরিকল্পনায় সহায়তা করবেন। যার সম্পদ ও সামর্থ্য বেশি তাকে অবশ্যই অধিক সন্তান নিতে উৎসাহিত করবেন। যেতেতু দেশে সরকারী কোনো জনসংখ্যা নীতি নেই, এই সুযোগে ‘তিনটি সন্তানের কম নয়, বেশি হলে ভালো হয়’ এই নীতি নিরবে হিন্দুদের মাঝে প্রচার করবেন।
* পুরোহিতকে তান্ত্রিক এবং জ্যোতিষ বিদ্যায় পারদর্শী হতে হবে। স্থানীয় মানুষেরা যারা তন্ত্র ও জ্যোতিষ বিদ্যায় আস্থা রাখেন ও বিশ্বাস করেন তাদেরকে সেবা দেবেন হিন্দু পুরোহিত। অনেক অহিন্দুও এই সেবা নিতে আসেন। তবে মূল লক্ষ্য, কোনো হিন্দু যেন কোনো **দের কাছে তান্ত্রিক সহায়তা নিতে না যায়। হিন্দুদের তন্ত্র এখন হিন্দুদের দখলেই নেই। এটা পুরোহিতদের করায়ত্ত করতে হবে। তবে বিজ্ঞানবিশ্বাসীদের সাথে এ নিয়ে কোনো তর্ক হবে না। যে যেমন তার সঙ্গে তেমন শ্রদ্ধাই রাখতে হবে। 
বন্ধুগণ, একজন পুরোহিতকে যদি এইসব কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তাকে মাসিক বেতনও দিতে হবে। সেটা মন্দির কমিটির সামর্থ্য অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। বিভিন্ন উৎস থেকে এমন পুরোহিতের নিজস্ব আয়ও থাকবে প্রচুর। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: পুরোহিতকে মন্দিরের সঙ্গেই আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। মন্দির এবং তার আবাসনে অবশ্যই সিসি ক্যামেরা থাকবে। 
এবার এই পুরোহিতদের তৈরি করার প্রসঙ্গে আসি। ‘পুরোহিত প্রশিক্ষণ একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেহেতু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বেশ কয়েকবছর যাবৎ পুরোহিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, সুতরাং উক্ত ট্রাস্ট এখন যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করে সহজেই একটা ‘পুরোহিত প্রশিক্ষণ একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তাহলে সরকারী একাডেমি সরকারের খরচেই পরিচালিত হবে। 
যদি তারা না পারে তবে কোনো হিন্দু সংস্থাকেই এগিয়ে আসতে হবে এমন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে। ভারতীয় হাই কমিশন এ বিষয়ে সহযোগিতা করতেও পারে। দেশে বহু মন্দিরে বহু একর জমি অব্যবহৃত কিংবা বেদখল হয়ে আছে। এমনই কোনো দেবোত্তর ভূমিতে একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন কাজ হবে না। তবে অবকাঠামো ও একাডেমিক খরচটা অনেক হবে।
**কারা পুরোহিত প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ভর্তি হতে পারবেন?**
আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল যেকোনো শিক্ষিত হিন্দুই পুরোহিত হওয়ার অধিকার রাখেন। সকল হিন্দুই কোনো না কোনো ঋষির গোত্রভূক্ত। সুতরাং ঋষির বংশধর হিসেবে যে কোন হিন্দু পুরোহিত হওয়ার জন্য একাডেমিতে ভতি হতে পারেন। প্রচলিত ব্রাহ্মণসন্তান তো বটেই, অব্রাহ্মণ সন্তানেরাও অধিকারী। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অধিকারী হবেন। 
**একাডেমিতে কী শেখানো হবে?**
* এটা ডিপ্লোমা কোর্স হতে পারে। 
* মেয়াদ ৬ মাস অথবা ১ বছর। 
* সম্পূর্ণ আবাসিক। 
* কোর্স চলাকালীন ক্যাম্পাসেই নিবিড় পরিচর্যার মধ্যে থাকতে হবে শিক্ষার্থীদের। 
* ক্যাম্পাস হবে পবিত্র আশ্রমের মতো। 
* অভিষেক হবে সকলের উপনয়নের মাধ্যমে। 
* ৬ মাস কঠোর ব্রহ্মচর্য্য পালন করতে হবে সবাইকে। রাত ১০টায় ঘুমানো। ভোর ৫টায় উঠা। ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যবহার সীমিত থাকবে। 
* যোগাসন, প্রাণায়াম, মার্শালআর্ট/তায়কোয়ান্দো, খেলাধুলা, সমবেত প্রভাতী প্রার্থনা ও সান্ধ্য প্রার্থনা, সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা, পূজা ও যজ্ঞ শিক্ষা, বিশ্বসভ্যতায় হিন্দুদের অবদান, গৌরবের বিষয়াবলি, ইতিহাস শিক্ষা: বৈদিক যুগ, পৌরাণিক যুগ, মধ্য যুগ, বিগত ১০০ বছরে বাঙ্গালী হিন্দুর ইতিহাস, জ্যোতিষ ও তন্ত্র, পুরোহিত দর্পণ, শ্রুতি ও স্মৃতি শাস্ত্রসমূহ, ষড়দর্শন, বাংলাদেশ অধ্যয়ন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান – আরও বিবিধ বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে কোর্স সাজানো হবে। 
* যুগোপযোগী ধর্মপ্রচার প্রশিক্ষণ, কুটিল প্রশ্নের উত্তর, অন্যান্য ধর্ম বিষয়ে সম্যক ধারণা দান, সন্তানদের ধর্মশিক্ষা পদ্ধতি, গীতাস্কুল পরিচালনা পদ্ধতি, মন্দির ব্যবস্থাপনা, টিম ও টাইম ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এটা নিতান্তই আমার কাঁচা মাথা থেকে বের হওয়া খসড়া আইডিয়া। স্রেফ একটু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আপনারাও আপনাদের মতামত জানান। দেশের শীর্ষ পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে উক্ত একাডেমি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, কারা ব্যবস্থাপনা করবেন, ফান্ড কোথা থেকে আসবে, কারিকুলাম কারা তৈরি করবেন ইত্যাদি বিষয়ে অনেক কাজ করার আছে। 
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট নিজস্ব কায়দায় এই একাডেমি প্রতিষ্ঠা করলে সবচেয়ে ভালো হয়। অন্যথায় কোনো হিন্দু সংস্থা করুক এটা। যে সংস্থা এটা বাস্তবায়ন করবেন, তারা নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বলে প্রতিপন্ন হবেন।
[সমাপ্ত]
প্রথম কিস্তির লিংক:  https://www.facebook.com/groups/hindueco/posts/1270045966829587
আগামীতে আইডিয়া শেয়ার করবো: **তৃণমূল পর্যায়ের বিচ্ছিন্ন হিন্দু পরিবার পর্যন্ত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বলয় যেভাবে তৈরি করা সম্ভব**

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *