কে ছিলেন ইংরেজ আমলের প্রথম বাঙালি ম্যাজিস্ট্রেট

Uncategorized

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ইংরেজ আমলের প্রথম বাঙালি ম্যাজিস্ট্রেট। ম্যাজিস্ট্রেট হতে গিয়ে আর সবার মতো তাকেও ইন্টারভিউ দিতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই পরীক্ষক ছিলেন একজন ইংরেজ। ইংরেজ মহাশয় ইন্টারভিউয়ের এক পর্যায়ে বঙ্কিমচন্দ্রকে প্রশ্ন করলেন, ‘হোয়াট ইজ দ্য ডিফারেন্স বিটুইন আপদ অ্যান্ড বিপদ?’

বঙ্কিমচন্দ্র উত্তর দিলেন, ‘ধরুন, আমি নৌকায় চড়ে নদী পার হচ্ছি এমন সময় প্রচণ্ড ঝড় উঠল, এটা হচ্ছে বিপদ। আর এই যে আমি একজন বাঙালি হয়েও ইংরেজের কাছে বাংলার পরীক্ষা দিচ্ছি এটা হচ্ছে আপদ!’

একবার বঙ্কিমচন্দ্র স্ত্রীকে নিয়ে ট্রেনে করে যাচ্ছেন। এক যুবক অনেকক্ষণ ধরে তার স্ত্রীকে দেখার চেষ্টা করছিল। বিষয়টা বুঝতে পেরে বঙ্কিমচন্দ্র ছেলেটিকে ডেকে বললেন, ‘কী করা হয়?’
ছেলেটি বলে ‘ত্রিশ টাকা রোজগারে একটি চাকরি করে।’

হেসে বঙ্কিম বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি সঙ্গে বইও লিখি। হাজার দুয়েক রোজগার। সবই আমার স্ত্রীর চরণে দিই। তবুও মন পাইনে ভাই। ত্রিশ টাকায় সে মন কী তুমি পাবে?’
কথাটি শুনে ছেলেটি কামরা থেকেই নেমে যায়।

অনেক পুরোনো দিনের কথা | ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার এক কর্মী ছোট একটি কবিতা খুঁজছিলেন | পত্রিকার এক পাতায় গল্প ছাপার পর নীচে খানিকটা খালি জায়গা রয়ে গিয়েছে । একটি ছোট কবিতা বা গান পেলে শূন্য স্থানটি ভরাট করে দেওয়া যায় | সম্পাদকের দেরাজ হাতড়ে পাওয়া গেল তাঁর লেখা একটি গান | কর্মী জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটি ওখানে দিই?’ সম্পাদক সঙ্গে সঙ্গে সেটি ছিনিয়ে নিলেন, “ও ভাবে ছাপা যাবে না। এক দিন দেখবে, দেশ এই গানে মেতে উঠেছে। সে দিন আমি থাকব না, কিন্তু তুমি দেখে যেতে পারবে।”

কয়েকবছর পর সম্পাদক এই বঙ্গদর্শনেই ‘আনন্দমঠ’ লিখতে শুরু করলেন | সেখানে তিনি প্রায় পাঁচ বার ব্যবহার করলেন সেই গান | উপন্যাস পড়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মৃদু অনুযোগ তুলেছিলেন, ‘সংস্কৃত আর বাংলা মেশানো এই গানে ব্যাকরণের ভুল আছে।’ আত্মবিশ্বাসী লেখকের উত্তর, ‘বেশ। ইচ্ছা হলে পড়বে, নইলে না।’ ততদিনে অবশ্য ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্তে দোলা লাগিয়েছে সেই গান | দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছে সেই গান |

১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি। নতুন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানসভার শেষ অধিবেশন। সভার শেষে প্রেসিডেন্ট রাজেন্দ্রপ্রসাদ জানালেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জনগণমন’ হবে জাতীয় সঙ্গীত | কিন্তু এর পাশাপাশি আরেকটি গানও পাবে সমান মর্যাদা | শেষমেশ ‘জনগণমন’ এবং সেই গানটি গেয়েই শেষ হল অধিবেশন | সেই গানটি ছিল বন্দেমাতরম | আর সেই গানের স্রষ্টা ছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | আজ সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন | জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করা সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *