কোনো স্রস্টার পক্ষে “আমার” বিচার করা সম্ভব নয়
—————————————–
আমার বোধের বিকাশ নিশ্চিত করে আমি ভালো মানুষ হবো কিনা।
আমার মস্তিষ্কের বিকাশ যা যা জিনিস বা বিষয়ের উপর নির্ভর করে তা হলো:
১। আমার বাবা মায়ের জেনেটিক কোডের উপর যা দিয়ে আমার শরীর তথা মস্তিষ্কের নিউরনের বিন্যাস নিশ্চিত হয়েছে। আমার বোঝা বুঝির ক্ষমতা এ নিউরন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে।
২। আমার মা আমি গর্ভে থাকাকালীন যেমন পুষ্টি নিয়েছেন, সে পুষ্টির এভেইলএবেলিটি আমার মস্তিষ্কের ঘঠন দিয়েছে। যদি যথাযথ পুষ্টির অভাব থাকে তবে আমার আমার মস্তিষ্ক যা হওয়ার কথা তা হবে না। অজানা অনেক নিয়ামক আছে যা আমার মস্তিষ্ক তৈরীতে প্রভাব বিস্তার করেছে। এ পর্যায়টিও আমার বোঝার ক্ষমতাকে নির্ধারণ করে দিয়েছে।
৩। জন্মের পরপরও মানুষের মস্তিষ্ক যথেষ্ঠ অবিকষিত থাকে। যথাযথ পুষ্টি ২য় স্তরের মতই আমার মস্তিষ্কের ঘঠনকে রূপায়নের মাধ্যমে বোধের ক্ষমতাকে নির্ধারণ করে দিয়েছে।
৪। এ স্তরটি সবচে ইম্পোর্টেন্ট। এটা আমার পুরা জীবনের বোঝাপড়া ও জীবন যাপনকে ডিফাইন করে দেবে। এ স্তরটি হলো আমার শিক্ষা। আমাকে কি শেখানো হচ্ছে, আমার চারপাশে আমি কী কী দেখছি, আমি কিসে কিসে অভ্যস্ত হচ্ছি — এ সবকিছু আমার চিন্তা জগতকে ডিফাইন করছে। প্রতিটি জিনিসের অভিজ্ঞতা আমার পরবর্তি জাজমেন্টের জন্য ভিত্তি তৈরী করতেছে। এ ভিত্তিগুলো মানদন্ড আকারে আমার মস্তিষ্কে সেইভ হচ্ছে। এ শিক্ষাগুলো আমার ভবিষ্যতের প্রতিটা সিদ্ধান্ত তৈরীতে বিশাল ভূমিকা পালন করবে।
৫। আমার চারপাশ থেকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে পাওয়া কনসাস (১০%) ও সাবকনসাস (৯০%) স্টিমুলেশন ও অভিজ্ঞতা থেকে তৈরী হওয়া বৈদ্যুতিক পালসই হলো “আমার” নেয়া সিদ্ধান্ত। এ “আমি”টা হলো একটা মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের আইডেন্টিটি মাত্র। এ “আমি” মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ঘটনার সামষ্টিক রূপের একটা নাম মাত্র। এ জন্যই বলি, “আমি” বলে বিচার যোগ্য কোনো সত্তা নেই। “আমি” অর্থাৎ আমার মাথা ও তার কার্যকলাপ একসেট প্রাকৃতিক ঘটনা মাত্র। প্রাকৃতিক ঘটনার বিচার কেমনে হয়? যেহেতু বিচার করা সম্ভব না, তাই যে ধর্ম বলে বিচার হবে তাও সঠিক নয়।
উপরন্তু, আমি যা করছি তার জন্য উপরের প্রত্যেকটা জিনিস দায়ী। ফলে “আমি” নামক প্রাকৃতিক ঘটনাবলির কোনো বিচার করতে হলে উপরের প্রত্যােকটা স্তরে প্রত্যেক নিয়ামকের বিচার করতে হবে, যেখানে প্রচুর প্রকৃতিক নিয়ামক রয়েছে। কারণ আমার প্রতি মুহূর্তের প্রতিটা সিদ্ধান্তের কাঁচামাল উপরের স্তরগুলো থেকে প্রাপ্ত।
উপরের আলোচনা থেকে হয়তো বুঝতে পারা যায় যে আমাদের মেমরি ও অভিজ্ঞতা কী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
আপনের চিন্তাগত জ্ঞান তৈরির একটা উৎস হলো আপনের মেমরী ও অভিজ্ঞতা এবং আরেকটা হইলো আপনের ইন্দ্রিয়লব্ধ স্টিমুলেশন। তাই আপনের মেমোরিতে বা অভিজ্ঞতার ভিতরে যদি কোনো ধারণা মানদন্ড আকারে স্থাপন করা যায় তবে তা আপনে সিন্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখবে ও আপনাকে চালিত করবে। আপনের মেমরি ও অভিজ্ঞতা যত ঋদ্ধ হবে ততই সঠিক সিদ্ধান্ত আপনার মাথায় তৈরী হবে। এভাবেই কাউন্সিলিং ও ঔষধের মাধ্যমে আপনের চিন্তার পরিবর্তন করা সম্ভব। আর এটা হবে স্থায়ী। শাস্তির ধারণা অনেক ক্ষেত্রেই অকার্যকর যদি শাস্তি থেকে বাঁচার সম্ভাব্য উপায় থাকে।
পুলিশকে বোধে স্থাপন করুন, অপরাধ নির্মূল হয়ে যাবে।
মাহমুদ আহমেদ