কোন ধর্ম বিশ্বাসীর পক্ষেই বস্তুনিষ্ঠ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ ধর্মীয় চরিত্রগুলোর প্রতি আপনার থাকবে অগাধ দুর্বলতা। খোদ দেশভাগ নিয়েই হিন্দু মুসলমান নাস্তিকরা স্বধর্মীয় পক্ষপাত করে ফেলেন। অথচ তারা কেউই ধর্ম বিশ্বাস করেন না! হিন্দুরা আগে গরুর মাংস খেতো এটা বলেই কত হিন্দু শাস্ত্র পন্ডিতি করে গেলো! বলে, ভালো করে বেদ পড়ে আসেন! সংস্কৃত ভাষা শিখে আসেন। আপনার হিন্দু ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা নেই। বললাম, আমি হিন্দু ধর্মের পন্ডিত এরকম দাবী কখনও করিনি তবে বিবেকানন্দ একজন বড় হিন্দু পন্ডিত ছিলেন। তিনি এখানে (The Complete Works of Swami Vivekananda | Volume 3 | Lectures from Colombo to Almora) বলেছেন হিন্দুরা গোমাংস খেতো।… হেঃ হেঃ হেঃ দাদা, মহিষ আর গরু কি এক হলো?… এইসব হিন্দুদের সঙ্গে আর কি বলব? এদেরকে যদি এখন বলি বৈষ্ণব শ্রীকৃষ্ণ আর রাধার সঙ্গে মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণের কোন যোগ নেই- তারা হয়ত আমাকে পাগল বলবে! এই যে মহাভারতের মহান যুদ্ধের কথা বলা হয় সেখানে মহত্ব কেবল ধার্মীক ছাড়া আর কে খুঁজে পাবে? কোন ধার্মীক কি মহাভারতে কর্ণের প্রতি অবিচার করা হয়েছিলো সেটা মানবে? কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠিকই কর্ণকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত রাবনকে নিয়ে মহাকাব্য লিখলেন নায়ক করে। একজন ধার্মীক হিন্দু পাওয়া যাবে রামের চেয়ে রাবনকে জ্ঞানী শিক্ষিত বলে মেনে নিবে? তাদের কি কোনভাবে এখানে বস্তুনিষ্ঠ হওয়া সম্ভব?
চিন্তা করুন ইসলামে বিশ্বাসী একজন মানুষ কি করে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে প্রশংসা করবেন যেখানে তাকে ইসলামে ‘মুনাফেক’ বলা হয়েছে? এই মানুষ যতদিন বেঁচেছিলো ততদিন মদিনার ইহুদীদের প্রাণে মারার সুযোগ পাওয়া যায়নি। মুহাম্মদের কাধ খামচে ধরে ইহুদীদের প্রতি কঠরতা থেকে বেরিয়ে আসার চাপ দিতে পারত কবল সে। নিজে ইহুদী না হয়েও প্রতিবেশী ইহুদীদের প্রতি তার দরদ থাকার মত মানবিকতাকে কোন ধর্ম বিশ্বাসী মুসলিম তাকে মানবিক বলে প্রশংসা করতে পারবে না। অতিতে যখন এই আবদুল্লাহ উবাইকে নিয়ে লিখেছি সেখানে ঠিক এভাবেই মুসলিম ধার্মীকরা এসে আমাকে ভালো করে কুরআন হাদিস পড়ে ইসলাম জেনে আসতে বলেছিলো। আজকের আমার আদর্শের জন্য হত্যার বিরোধী করা লেখাটায় মহাভারত থেকে উদাহরণ দিয়েছিলাম যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরব বংশের বিধবা নারীদের আহাজারিতে ভরে গিয়েছিলো, আর এসবের জন্য কেবল কৌরব পক্ষের শকুনি মামা নয়, পান্ডব পক্ষের শ্রীকৃষ্ণ সমান দায়ী। ধার্মীক হিন্দুরা প্রবলভাবে যুদ্ধের পক্ষে কথা বলতে থাকলেন। এরাই দেখবেন ইসলামের যুদ্ধগুলোর বিষয়ে সুন্দর মানবিক হয়ে উঠছে। মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ!
নুন্যতম ধর্ম বিশ্বাস কিংবা স্বধর্মীয় পক্ষপাত থাকলে মানুষ কখনই এই ধর্মীয় ও পৌরাণিক কাহিনীগুলোর সত্যিকারের নায়ক নায়িকাদের দেখতে পাবে না।
#সুষুপ্ত_পাঠক