শচীন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে ব্যাডপ্যাচ বা অফফর্ম বলতে আসলে কিছু ছিল কিনা জানি না। পরপর ২/৩ টি ইনিংসে রান আউট বা এক্সট্রা অর্ডিনারি কোন আউট হয়ে গেলে পরের ইনিংসের শুরুতে তার চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা দেখা যেত। ব্যাটে বলে পারফেক্ট ম্যাচিং না হলেও ৬০/৬৫ বলে ফিফটি করে ফেলতেন, এর পরে আবার স্বাভাবিক শৈল্পিক ছন্দ। টি-২০ এর আগের সে যুগেও ওডিআইতে তার ৮৫+ স্ট্রাইকরেট্র ৪৫+ এভারেজ থাকত।
২০০৩/৪ সালে প্রথম তার কিছুটা খারাপ সময় দেখা গেল। অফসাইডের ড্রাইভ শটগুলো, যা ছিল তার সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও শক্তির জায়গা, একদম ছেড়ে দিলেন। আমার পাকিস্তান সমর্থক এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাজে মন্তব্য করে বাজি ধরল যে শচীন জীবনে আর কখনো সেঞ্চুরী পাবে না। ভার্সিটির রুমমেট এই বন্ধুর সাথে শুধু এই ইস্যুতে ১ বছর কথা বলা বন্ধ ছিল। উল্লেখ্য পরবর্তীতে শচীন আরো অন্তত ৩০/৪০ টি সেঞ্চুরী পেয়েছে এবং ঐ ২০০৪ সালেই শুধু অনসাইডে খেলে ২৪৮ নট আউট করল ( যদিও বাংলাদেশের বিপক্ষে)। পরবর্তীতে অসংখ্য পরিপূর্ণ ডমিনেটিং ইনিংস বিশ্বকাপ ও সব বড় আসরে বড় দলের বিপক্ষে।
তো যা বলতে চাচ্ছিলাম। কোন হঠাৎ দেখা নতুন দর্শক তখন শচীনের খেলা দেখলে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিত, শচীন ওয়ান সাইডেড অসম্পূর্ণ ব্যাটসম্যান, বাতিলের খাতায় ফেলে দিত।
বয়সভিত্তিক বিভিন্ন একাডেমির সকল ক্রিকেট কোচ, ক্রীড়া সাংবাদিক, সহখেলোয়াড়, ক্রিকেটবোদ্ধারা জানত লিটন দাশ টেকনিকালি অসাধাধরণ এবং দৃষ্টিনন্দন ব্যাটসম্যান। প্রথম দিকে নানা মনস্তত্বে আমজনতা মোটেই সময় দিতে চায়নি, অযথা গালাগালি, ট্রল করেছে। অনেকগুলো ভালো ইনিংস পাওয়ার পরে এখন অনেকে চুপচাপ আছে।
এবারের বঙ্গবন্ধু টি-২০ এর শুরুর ধারাবাহিক পার্ফরম্যান্স এর পরও শেষ দুই ম্যাচে তাকে স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যায়নি। শেষ দুই ম্যাচের লড়াইর ধরণ নতুন কতে দেখে অনেকেই আবার তাকে ওভাররেটেড, বাতিল ভেবে বসতে পারে।
ক্রিকেট ব্যাটিংয়ে নৈপূণ্য, ব্যক্তিগত মনস্তত্ব টিম ম্যানেজমেন্টের প্লানের বাইরে শুরুর দিকের ভাগ্যও আসলেই একটি বিষয়। ৮/১৯ বছরের নানা ধাপ পেরিয়ে যারা উঠে আসে তাদের অধিকাংশের প্রাথমিক যোগ্যতা থাকে। আনজনতার পক্ষে ২/৪ টি ম্যাচ দেখে কারো শক্তি, দুর্বলতা নিয়ে সিদ্ধান্তে চলে আসা যায় না।
তামিম ইকবাল এখনও টেস্ট ক্রিকেটে অপরিহার্য ব্যাটসম্যান। কিন্তু চাচার জোর এবং নিশ্চিত নির্ভরতা না থাকলে ওডিআই এবং টি-২০ কখনই সে টানা এতদিন জাতীয় দলে থাকতে পারত না।
মাহমুদুল্লাহ ক্যারিয়ার শুরুর ৪০/৫০ ম্যাচে ১৫/২০ করে নট আউট থাকাটাকেই নিজের ক্যারিয়ার প্লান করেছিলেন। দিন শেষে মানুষ দেখে মোট রান ও গড়। অনেক ডেব্যু খেলোয়াড় ৭/৮ এ নেমে হয়ত ২/৪ বল পেয়ে হিট করতে গিয়ে আউট হয়ে হারিয়ে গেছে। মাহমুদুল্লাহ দলে কিছুটা পঞ্চপান্ডব ভেটো ক্ষমতার রাজনীতি ও ভায়রা ভাই ফ্যাক্টরে দলে সেটেল্ড হয়েছে, প্রথম বিপিএলের পর হতে নিজের হিটিং এবিলিটির কিছুটা উন্নতি করেছে। এখন অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতায় টি-২০ ক্যাপ্টেন। অনুকূল পরিস্থিতি না পেয়ে তার মানের অনেকে ‘স্যার’ ট্রল পেয়ে হারিয়ে গেছে।
অনেকগুলো উঠটি খেলোয়াড় আছে যারা ২১ শতকের মননে গড়ে ওঠা। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে বর্তমানের প্রতিষ্ঠিত সকলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আছে তাদের।
বিভিন্ন এজড গ্রুপ, লিগের খোঁজ না রাখা, হুট করে জাতীয় দলের খেলা দেখা দর্শকদের জনমত ও বিপ্লব ক্রিকেটের জন্য সহায়ক নয় কখনোই। ১/২ ম্যাচের কোন সিচুয়েশনাল পারফর্ম্যান্স আর মাছের ঘেউ দেখেই বড়শি নিয়ে ছুটলে প্রত্যাশিত ফল নাও আসতে পারে।
তবে ক্রিকেট যতটা টেকনিকাল ততটাই মনস্তাত্বিক ও গেম প্লানের খেলা। সাথে সর্বোচ্চ ভিশনে স্থায়ী অবকাঠামো ও সংস্কৃতি বিনির্মাণ, যার দায়িত্ব অবশ্যই বিসিবির।
আব্দুল করিম