গান্ধীজী ও হিন্দুত্ববাদ

অনিমিত্র চক্রবর্তী ভারত

৩০শে জানুয়ারি – শ্রী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর মৃত্যুদিবস বা গান্ধী হত্যা দিবস – ওনার জীবন দর্শন, কর্মে মধ্যে মহত্ত্বের কোন প্রকাশ পাইনি তাই মহাত্মা বলার কোন প্রশ্নই নেই – বিশেষত এই পর্যায়ের আদ্যন্ত, প্রকাশ্য বাঙ্গালী হিন্দু বিরোধী ব্যক্তি বিরল, অবশ্যই তাঁর একনিষ্ঠ শিষ্য জওহরলাল ব্যাতিরেকে। কিন্তু তবুও তাঁর প্রশস্তিতে পঞ্চমুখ হন ভারতবর্ষের এক বিশেষ গোষ্ঠী যাঁরা ধর্মনিরপেক্ষত বলে পরিচিত – যাঁদের হিন্দুর ওপর অত্যাচারে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়না, এঁরা একমাত্র তখনই উৎকন্ঠিত হয়ে ওঠেন যখন হিন্দু ভোট ব্যাংক সরে যাওয়ার প্রকৃষ্ট সম্ভাবনা থাকে।

তবে, আজ আর গান্ধী হত্যার প্রহেলিকা নিয়ে প্রশ্ন নয়, আজ প্রত্যয়ের দিবস, শ্রী নাথুরাম বিনায়ক গডসের আত্মনিবেদনের দিবস। ১৯৪৬-এর ১৬ই আগস্ট থেকে পাকিস্তান সংগ্রামের লক্ষ্য পূরণের জন্য হিন্দুর ওপর অকথ্য অত্যাচার তাঁকে ক্ষুব্ধ করে, ‘৪৭-‘৪৮-এর সন্ধিক্ষণে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসা হিন্দু-শিখ উদ্বাস্তুরা আশ্রয়ের জন্য জামা মসজিদে আশ্রয় নিলে শাহী ইমামের অনুরোধে ও গান্ধীর নির্দেশে দিল্লির সেই ভয়ংকর শীতের রাতে পুলিশের লাঠিচার্জ করে উদ্বাস্তুদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা তাঁকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে তোলে। ফলতঃ গান্ধী হত্যা।

অবশ্যই এর আগেই কলকাতায় গান্ধীর ওপর মারণ আঘাত ঘটে গেছে, হায়দরি মঞ্জিলে বোমা আছড়ে পড়েছে, বেলেঘাটা মেন রোডে গ্রেনেড চার্জ হয়েছে, ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের কাছে গান্ধী হত্যা পরিকল্পনার নির্দিষ্ট তথ্যের জন্য রাতের অন্ধকারে বেলুড় স্টেশন থেকে দিল্লি মেলে গান্ধীকে কলকাতা থেকে পালাতেও হয়েছে। একথা বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন শ্রী নির্মল কুমার বসু, শ্রী প্যারেলাল, শ্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ, শ্রী শঙ্কর ঘোষ তাঁদের লেখায় – অতএব প্রামাণ্য তথ্যের অপ্রতুলতা নেই কোনভাবেই।

অর্থাৎ প্রস্তুতি অনেক স্থানেই ছিল গান্ধী নামক দুষ্ট গ্রহকে হিন্দুর জাতীয় জীবন থেকে সরানোর – গডসে সেই হিন্দু চরমপন্থার শ্রেষ্ঠতম প্রতিনিধি মাত্র। এবং অবশ্যই এরকম একই দেহে শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ অভিনেতার মিলন জাতি তো দূরে থাক, নাট্যমঞ্চেই বিরল অথচ গান্ধী তার বিরল প্রতিভা প্রকাশ করেছেন সাফল্যের সাথে, তাই তাঁর প্রশংসা অবশ্যই প্রাপ্য।

তাঁর সমগ্র জীবনই নাটকের, গৃহাশ্রমে বসবাস করে তিনি সর্বত্যাগী দন্ডী সন্ন্যাসীদের নকল করার চেষ্টা করেছেন, ভগত সিংহের প্রাণদন্ড থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত তাঁর জীবন নাটকময়। নোয়াখালীতে হিন্দুদের উদ্ধার গান্ধীর সুমহান নাটকের জন্য হয়নি, হয়েছিল যে ধর্মের প্রণম্য মহামন্ডলেশ্বর, মহামহোপাধ্যায় ও আচার্যদের জন্য তা নিয়ে কোন প্রশ্নই নেই।

গান্ধীর উত্থান হয়েছিল হিন্দু জাতির চরমপন্থী চিন্তাকে encumber/বিভ্রান্ত করার জন্য, যেভাবে ভারতবর্ষে মার্কসবাদী আন্তর্জাতিকতাবাদের উত্থান ঘটানো হয়েছিল সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী চিন্তাকে ধ্বংস করার জন্য। এবং দুক্ষেত্রেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এক অত্যন্ত দক্ষ ভূমিকা পালন করেছে।

গান্ধী ধর্মীয় শ্লোকের অপব্যবহারও করেছেন – মূলের অর্ধেক “অহিংসা পরমো ধর্ম” – এর ব্যবহার করে। বাকি অর্ধাংশ “ধর্মহিংসা তথৈবচা” প্রমাণ করেছেন তাঁর নিজের বুলেট বিদ্ধ, রক্তাপ্লুত দেহের মাধ্যমে।

৩০শে জানুয়ারি প্রমাণ করে – যতোধর্মঃ স্ততজয়ঃ।

প্রণাম গডসেকে – শ্রীমদ্ভাগবদগীতায় বর্ণিত আদর্শ ক্ষত্রিয়ের “যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্” – এর বলিষ্ঠতম প্রতিমূর্তি তিনি।

পরিশেষে, মতান্তর প্রয়োজন, মনান্তর নয়, কুৎসা যুক্তিহীন, ধর্ম যুক্তির উপরেই প্রতিষ্ঠিত।

লেখক: অনিমিত্র চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *