চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের কথা আমরা হয়ত ভুলে যেতে বসেছি।

Uncategorized
চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের কথা আমরা হয়ত ভুলে যেতে বসেছি। তিনি ঢাকার রাজপথের সাংবাদিক ছিলেন না , ছিলেন পথ থেকে পথের সাংবাদিক। উত্তর জনপদ থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার  বিস্তীর্ণ জনপদ ছিল তাঁর সংবাদ সংগ্রহের বিশাল ক্ষেত্র। দেশের অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থার সেই সময়ে প্রিন্ট মিডিয়ার সেই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে জনপদ থেকে সংবাদ সংগ্রহ এবং রাজধানী ঢাকায় ছবি সহ প্রেরণ ছিল অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। সংবাদ পত্রের প্রতি গভীর ভালবাসা, নিষ্ঠা ও দেশজুড়ে তাঁর খ্যাতির নেশায় তিনি ছিলেন পাগলপারা এক সংবাদ কর্মী। নিজের আর্থিক অসচ্ছলতা তাকে বিরত করতে পারেনি কখনো । মাটি ও মানুষকে ভালবেসে  ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে তিনি চষে বেড়িয়েছেন গ্রামের পর গ্রাম, জনপদ থেকে জনপদ। ঘুম নেই,  খাওয়া নেই রংপুর থেকে নাইট কোচের বাসে, ট্রাকে, নৌকায় , স্টিমারে লঞ্চে যেভাবে পেরেছেন নিউজ কন্টেন্ট ক্যামেরার রোল সহ পৌঁছে দিতেন ঢাকার বংশাল রোডের সংবাদ অফিসে। পরেরদিন লিড নিউজে তা ছাপা হতো। দেখে কি প্রশান্তি পেতেন একবার আমার কাছে বিস্তারিত বলেছিলেন। 

 কাজের সুত্রে পথে প্রান্তরে, থানা সদর থেকে সদরে কত মানুষের সঙ্গে তার সখ্যতা হয়েছিল তার হিসেব নেই। প্রশাসনের লোকজনের কাছে তিনি যে সমীহ ও সমাদর পেয়েছেন তার বর্ননা তাঁর অজস্র লেখার মধ্যে আমরা পাই। একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ কি করে পাঠক প্রিয় বা সুখপাঠ্য করে তোলা যায় আমরা মোনাজাত উদ্দিনের কাছে শিখেছিলাম। তিনি ছিলেন মফস্বল সাংবাদিকতার অন্যতম লিজেন্ড। গোবিন্দগন্জে মফস্বল সাংবাদিক আমার ছোট ভাই বিষ্ণু নন্দীর সঙ্গে তার  পরিচিতির সুবাদে রংপুর-ঢাকা হাইওয়ের পাশে আমাদের বাড়িতে তিনি মাঝে মাঝেই আসতেন। আমার মায়ের হাতের রান্না খেয়ে প্রস্বস্তি করেছিলেন সেটা আমাদের মনে আছে। 
১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর এই দিনে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় যমুনার বাহাদুরাবাদ ড্রেজিং পয়েন্টে ফেরির উপর থেকে পা পিছলে নদীতে পরে গিয়ে তিনি মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সেদিন আমি  সেই সংবাদে আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। এত সতর্ক ছিলেন জীবনের পদে পদে , সাঁতার জানা এমন মানুষ কি করে এমন দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে!! তার মৃত্যুর ২৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও সেই রহস্যের কোন কিনারা হয়নি।
 তাঁর মৃত্যুর আগের ক’বছর যখনই তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল দেখতাম তিনি অনেকটাই বিমর্ষ থাকতেন। দীর্ঘ ২০ বছর দৈনিক সংবাদে চাকুরির পর জনকন্ঠে চলে আসাটাকে তিনি হয়ত স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। ছেলেটা বুয়েটে ভর্তি হয়েছে, মেয়েটা মেডিকেল কলেজে, সেই খরচ, তার নিজের আর্থিক অনটনের বিষয়টা বুঝতে পেতাম। আজকাল কত কত সাংবাদিকদের ঢাকায় বাড়ি গাড়ি কিন্তু মোনাজাত উদ্দিন একদিকে জীবিকার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যেমন যুদ্ধ করেছেন অন্যদিকে সংবাদ  তৈরি ও লেখালেখির নেশার পিছনে জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু উৎসর্গ করে গেছেন নিদারুণ আর্থিক কষ্টের ভেতর দিয়ে। 
তার মৃত্যুর ২৬ বছর পর আজও প্রশ্ন জাগে মোনাজাত ভাই কি সেদিন আত্মহত্যা করেছিলেন অথবা প্রতিপক্ষের কেউ তাঁকে হত্যা করেছিল?? 
আমার প্রিয় সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের এই ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। সংবাদ পত্র জগতের সকলের কাছে  তিনি চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *