চার্লস ডারউইন ও কিছু কথা

Uncategorized

ডারউইন লিখেছেন, ‘‘আমাদের এই পৃথিবীতে প্রতিমুহুর্তে নতুন প্রাণের জন্ম হচ্ছে। জীবের সংখ্যা ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে। কিন্তু খাদ্যের পরিমান সীমাবদ্ধ। সেকারনেই প্রতিনিয়ত জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে চলেছে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিরতিহীন প্রতিযোগীতা। যারা পরিবেশের সাথে নিজেদের সামঞ্জস্য বিধান করতে পেরেছে, তারাই নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে। কিন্তু যারা পারেনি তারা ধ্বংশ হয়ে গিয়েছে। এই ধারাটাকেই বলা হয় যোগ্যতমের জয় (Survival of the Fittest)।’’
.
মাত্র আট বছর বয়সে মা’কে হারিয়ে পৃথিবীর মধুরতম বন্ধন হতে ছিন্ন হয়েছিলেন। শৈশবে তরুলতা আর সবুজ গাছগাছালিই ছিল তার নিত্যসময়কার বন্ধু। শৈশব পেরিয়ে অন্য সবার মতই একদিন বড় হয়ে গেলেন। কিন্তু প্রকৃতির প্রতি এক দুর্বার টান যেন ডারউইনকে দূর্বল করে তুলেছিল। একদিন সুযোগ পেলেন জাহাজে করে দক্ষিন আমেরিকা অভিযানে যাবার। ১৮৩১ সালের ২৭ শে ডিসেম্বর ‘বিগল’ নামের একটি জাহাজে চড়ে বসলেন। জাহাজ ভেসে চললো পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। দীর্ঘ পাঁচ বছর জাহাজটি গালাপগোস দ্বীপপুঞ্জ তাহিতি অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড মালদ্বীপ সেন্ট হেলেনা দ্বীপে জাহাজ ঘুরে বেড়ালো। এই সময়ের মধ্যে ডারউইন ৫৩৫ দিন কাটিয়েছিলেন সাগরে, আর ১২০০ দিন মাটিতে। এই দীর্ঘ ভ্রমনে ডারউইনের শরীর স্বাস্থ ভেঙে যায়। কিন্তু নতুন এক উপলব্ধি তাকে পেয়ে বসলো। তিনি লিখলেন তার সমস্ত অভিজ্ঞতা। যা পরবর্তীতে ‘Origin of Species’ নামে প্রকাশিত হয়। ১৮৫৯ সালের ২৪ শে নভেম্বর বইটি প্রকাশের সাথে সাথেই ১৩৫০ কপি বই বিক্রি হয়ে গেল। বিবর্তনবাদের নতুন তত্ত্ব, প্রচলিত আদম ইভ (আদম-হাওয়া) ও পৃথিবীর সৃষ্টির কাহিনীকে বৈজ্ঞানিক তথ্যের বিশ্লেষণে সংশয়ের দিকে ঠেলে দিলো।
.
ডারউইনের বিবর্তনবাদ প্রসঙ্গে অনেকের ধারনা এই যে, মানুষের উৎপত্তি বানর থেকে। কিন্তু ডারউইন কখনো এই ধরনের মত প্রকাশ করেন নি। তার অভিমত ছিল মানুষ এবং বানর উভয়েই কোন এক দূরবর্তী অতীতের একই শ্রেণীর জীবন থেকে বিবর্তিত হয়েছে। বানর কোনভবেই মানুষ পূর্বপুরুষ নয়, তার চেয়ে দূর সম্পর্কের আত্নীয় বলা যেতে পারে। ডারউইনের মতে, মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। কারন, সমস্ত জীব জগতের মধ্যে মানুষ সকলের চেয়ে বেশি যোগ্যতম। প্রকৃতপক্ষে মানুষ কোন স্বর্গচ্যুত দেবদূত নয়, সে বর্বরতার অসংখ্য স্তর পেরিয়ে বর্তমানের অবস্থায় এসেছে।
.
চার্লস ডারউইনের বয়স তখন ৭৩ বছর। এক বন্ধুর বাড়িতে দরজার সামনে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বন্ধু বাড়িতে ছিলেন না। বন্ধুর বাড়ির চাকর ছুটে আসতেই ডারউইন বললেন, ‘তুমি ব্যস্ত হয়ো না, আমি একটা গাড়ি ডেকে বাড়ি চলে যেতে পারবো।’ কাজের লোককে কোনভাবেই বিব্রত না করে ধীরে ধীরে নিজের বাড়িতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। আর বিছানা থেকে উঠতে পারেননি তিনি। ক্রমশই অসুস্থতা বেড়ে চললো। ডারউইন বুঝতে পারছিলেন, পৃথিবীর সকল জীবের মত তারও সময় শেষ হয়ে আসছে। তিন মাস অসুস্থ থাকার পর ১৮৮২ সালের ১৯ শে এপ্রিল পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন চার্লস রবার্ট ডারউইন। জীববিজ্ঞানের নতুন দিক উন্মোচন করা এই বিজ্ঞানীর মৃত্যুতে দেশ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এল। কিন্তু শত্রুরা উল্লসিত হয়ে উঠল। বলতে লাগলো, ‘তার মত অবিশ্বাসী পাপীর স্থান হবে জাহান্নামে।’
.
এবং, আজকের পৃথিবীতে এখনো করে চলেছে উল্লাস, সমানতালে।
আজ ১২ই ফেব্রুয়ারী, ১৮০৯ সালের এই দিনেই চার্লস ডারউইন জন্মেছিলেন। এদিনে স্মরণ করছি কথিত সেই “পাপী জাহান্নামী” কে ❤

আনসারি তৌফিক(লেখক)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *