
পবিত্র কুমার ঘোষ
তিন দশক ধরে ভারতের ভিতরে চলছে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ। বক্তৃতার বন্যা বয়ে গিয়েছে, শত্রুকে দমন করার জন্য প্রতিজ্ঞা ও পাঁয়তারা হয়েছে যথেষ্ট। তবু ভারতের কালসর্পযোগে কাটেনি। ইন্দিরা গান্ধী বেঁচে থাকতেই যা শুরু হয়েছিল, তার শেষ দেখা যায়নি। শুধু অসার বাক্যই ভারতের সম্বল।
সর্বশেষ সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ হয়েছে ২৫ আগস্ট, হায়দরাবাদে। সন্ধ্যাবেলায় শহরের লুম্বিনী পার্ক ও গোকুল চাটে মানুষের ভিড়ের ভিতর দুটি বিস্ফোরণে মানুষ মরেছিল ৪০ জনের বেশি, আহত অনেক। একইশহরের মক্কা মসজিদে ১৯মে একই ধরনের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিল ১৬ জন। হায়দরাবাদে শহরে ও তার আনাচে কানাচে জঙ্গিরা কিলবিল করছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা। তাদের অভিযাগে, রাজনৈতিক নেতারাই তাদের পৃষ্ঠপোষক।
পুলিশের এই ধারণা, কতটা সত্য, তা ২৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ১৬দিন আগে হায়দরাবাদেই বোঝা গিয়েছিল। সেদিন ওই শহরে তসলিমা নাসরিন গিয়েছিলেন তাঁর একটি বাংলা উপন্যাসের তেলগু অনুবাদ প্রকাশের অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল প্রেক্লাবে।
তসলিমার বক্তৃতা শেষ হতেই রাজনৈতিক পার্টি মজলিস ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের বিধায়কদের নেতৃত্বে একদল জঙ্গি প্রেসক্লাবে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে দেয়। আক্রমণ করে, অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ঝাপিয়ে না পড়লে তসলিমা খুন হতেন। পুলিস এসে জোর করে তসলিমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে এসে সোজা কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়। সেকুলারবাদী কংগ্রেস এখন অন্ধ্রপ্রদেশের ক্ষমতায়। তাদের আচরণই সবচেয়ে অদ্ভুত, প্রায় অবিশ্বাসযোগ্য। তারা তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছে, জঙ্গিদের কিছুই বলেনি। তারপর সংবাদপত্রগুলিতে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস আর রেড্ডি ভালো মানুষের মতো মুখ করে দু-একটি নিন্দাবাক্য খরচ করেছেন।
সেদিনই বোঝা গিয়েছিল, সরকার জঙ্গিদের রক্ষক। লুম্বিনী পার্ক-গোকুল চাটে রক্তবন্যা বওয়ার পর পুলিশ বলেছে, এরকম ভয়ংকর ঘটনা আরও ঘটবে, যখন তখন ঘটবে।
দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই কারণ রাজনীতির খেলা এখনই এমনই যে, জঙ্গিদের হাতে মানুষ বলি হলেও রাজনৈতকি কর্তাদের কিছু এসে যাবে না, জঙ্গিদের তারা খুশ রাখবেনই।
ইন্দিরা গান্ধী এইভাবেই পাঞ্জাবে উগ্রপন্থী ভিন্দ্রেনওয়ালাকে খুশি রাখতে রাখতে পরিণামে ওই জহিগ নেতার অনুগামীর হাতেই খুন হয়েছিলেন। রাজীব গান্ধী শ্রীলঙ্কার এলটিটিউকে মদত দিয়ে পরে তাদের আত্মঘাতী জঙ্গির ঘটনা বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিলেন।
সরকার বা সরকারের ভিতরের কোনও কোনও চক্র নিজেদের স্বার্থে জঙ্গিদের ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে বাতাদরে আনুকূল্য পাওয়ার আশায় দুমুখো মনোভাব নিয়ে চলেছে। তারা মুখে সেকুলারবাদ আওড়ায়, কিন্তু আড়ালে মৌলবাদী জঙ্গিদের পৃষ্ঠরক্ষা করে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ। বামফ্রন্ট সরকারের মহান কর্তারা ত্রিশ বছর ধরে এই খেলা খেলতে খেলতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে ভারতের মধ্যে মৌলবাদী জহিগদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন। ভারতে যেখানে যত বিস্ফোরণ জঙ্গিরা ঘটাচ্ছে সেসবের জন্য মানুষ ও মাল পশ্চিমবঙ্গ থেকেই যায়। একথা দিল্লির গোয়েন্দারা জানেও জানিয়ে দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের গোয়েন্দারা চোখে ঠুলি, কানে তুলো গুঁজে থাকে। তারও কারণ, সরকারের কর্তারা সেরকমটাই চান। এ বিষয়ে জ্যোতি বসুর রেকর্ডই ছিল সর্বোত্তম। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতেন, বাংলাদেশ থেকে কোনওরকম অনুপ্রবেশই বন্ধ করা যাবে না, কারণ সীমান্তের দু’দিকের মানুষের চেহারা এক, পোশাক এক, ভাষা এক, কালচারও এক। তিনি নিশ্চিত কণ্ঠে একথাও বলতেন, পশ্চিমবঙ্গে কোনও জঙ্গি নেই, পাকিস্তানের আইএসআই-এর কোনও চক্র নেই, মৌলবাদী চক্রান্ত নেই।
কর্তার ইচ্ছাতেই কর্ম করা হয়ে থাকে। বিশেষত, সিপিএমের শাসনকালে। সরকারের বড়কর্তা যা ইচ্ছা করেন, প্রশাসন ও পুলিশ সেভাবেই চলে।ওই দুই বস্তুর ওপর সিপিএমের ছোট কর্তাদেরও অপ্রতিহত প্রভাব। এই ছোট কর্তারা নিজেদের স্বার্থ ও সুবিধা ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। “দেশ’ বলে তাঁদের কাছে কিছু নেই, টাকা ও ভোটই তাদের একমাত্র বিবেচ্য। অনুপ্রবেশকারীদের বৈধ নাগরিকের স্বীকৃতি দিতে তাদের আগ্রহ অপরিসীম। সেই অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে যদি জঙ্গিরা লুকিয়ে থাকে, তাহলেও।
জ্যোতি বসুর আমলে বড়পুলিশ কর্তারা অনায়াসে বলে দিতেন, এ রাজ্যে কোনও জঙ্গি সমস্যা নেই। দিল্লী থেকে গোয়েন্দাসূত্রে সতর্ক করে দেওয়া হলেও এখানকার মহাপ্রভুরা গা করতেন না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যমুখ্যমন্ত্রী হয়ে কিছুটা নড়েচড়ে বসতে চেয়েছিলেন হয়তো, কিন্তু তাঁর পার্টির আশু লাভ যেখানে জড়িত, সেখানের হাত চলে না।।
ফরওয়ার্ড ব্লক আবার সিপিএমের চেয়েও বড় সেকুলার। তাদের নেতাদের একটা প্রধান কাজ হল, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকে উঠতে-বসতে গালমন্দ করা। এই বাহিনী অনুপ্রবেশ রুখতে কড়া হলেই ফরওয়ার্ড ব্লক চেঁচায়, সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমান্ত এলাকার লোকদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। একবার দিল্লী থেকে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের একটি দলকে ট্রেনে করে পশ্চিমবঙ্গের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছিল, সীমান্ত পার করিয়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্যে। খড়্গপুরের কাছে ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মীরা তাদের নামিয়ে নিয়ে মুক্ত করে দিয়েছিল। কলকাতার এই ইমাম, তসলিমা নাসরিনের মুণ্ডু দাবি করার পর ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ভক্তিপদ ঘোষ লখনউয়ে নয়টি মুসলিম সংগঠনের নেতাদের বলেছেন, তার পার্টি কেন্দ্রকে বলবে তসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশে বিদায় করে দিতে। কারণ এই ভদ্রমহিলা ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে মৌলবাদী মুসলিমদের কৃত হিন্দু নিধন যজ্ঞের বিবরণ প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ‘লজ্জা’ উপন্যাসে। ওই বই মুসলমান ভাইদের বড়ই লজ্জার কারণ হয়ে আছে। সেজন্য সেকুলার ভারতে তাকে থাকতে দেওয়া চলবে না; যদিও সবাই জানে, তসলিমাকে ধরে-বেঁধে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে তাকে হায়নাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ছোট ও বড় রাজনৈতিক দলগুলির এবং তাদের সরকারের রক্ষাকবচ পেয়ে জঙ্গিরা ভারতকে রক্তে স্নান করিয়েই চলেছে। ২০০৪ সালের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৪ জন নির্দোষ নাগরিক। কিন্তু জঙ্গিদের হাতে প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৫৫ হাজার জন ভারতীয়। ভারত-চীন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এর ভগ্নাংশমাত্র মানুষ মরেছিল। জঙ্গিদের আক্রমণে মানুষ মরলে সরকার শুধু দুঃখপ্রকাশ করে, মন্ত্রীরা ‘দেখে নেব’ ভাব দেখান। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পুলিশ ঘটনা ঘটার পর কতগুলি লোককে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু প্রমাণ জোগাড় করতে পারে না বলে আদালত তাদের ছেড়ে দেয়। সরকার যেসব আইন করেছে তাতে ফাঁকফোকর রেখেই তা করেছে। পোটা আইন তারা তুলেই দিল। পুলিশের দাবি, উপযুক্ত আইনের অভাবে তারা জানা জঙ্গিদেরও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। হায়দরাবাদে পুলিশ বলেছে, কমপক্ষে একহাজার জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি ওই শহরে রয়েছে। তাদের সাহায্যকারী গুপ্ত সেলও অনেক আছে। তাদের পাকড়াও করলেই পুলিশের কাছে উঁচুমহল থেকে ফোন আসে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। একজন মৌলবাদীকেও গ্রেপ্তার করলে নাকি ভোটবাক্সে ধস নামবে। পুলিশের মতে, মৌলবাদীদের একটি বৈশিষ্ট্য আছে। তাদের মধ্যে যাদের গায়ে যত বেশি, দাগ, তাদরে কাছ থেকে তত বেশি লাভ পাওয়া যায়। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তাদের ব্যবহারমূল্য তত বেশি। বিনিময়ে তাদেরও স্বাধীন অপারেশন চালাতে দিতে হয়।
কলকাতার চার যুবক, আমির রেজা খান, খুম খৈয়াম, নিয়াজ হুসেন এবং সাদাকত হুসেনের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ জারি করেছে, ইন্টারপোল। কোনও জঙ্গি পাকিস্তানে আশ্রয় পেলে ইন্টারপোলের তোয়াক্কা রাখার দরকার তার পড়ে না। আমির রেজা ছিল কলকাতার বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা। সে এখন পাকিস্তানে হুজির প্রধান।
পশ্চিমবঙ্গে এটাই নাকি শান্তি বজায় রাখার সরকারি ফরমুলা। এই রাজ্যকে জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় করে দেওয়া হয়েছে বলেই জঙ্গিরা নাকি এখানে শান্তি বজায় রাখে। সারা ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গিদের নিরাপদতম স্থান। তাই অন্যান্য রাজ্যের মতো বিস্ফোরণ এখানে তারা ঘটায় না। এখানে তারা নাকি স্থানীয় রাজনৈতিক কমরেডদের মাসতুতো ভাই। এই একটি ব্যাপারেই এ রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির মত অভিন্ন, পথও এক। তাদরে সকলের সহযোগিতায় এ রাজ্যে ‘মৌলবাদী জঙ্গি পালন প্রকল্প’ হেসে খেলে চলছে। কোনও জেলা প্রশাসক বা পুলিশ অফিসার যদি এই প্রকল্পে খোঁচা দিতে যান, তাহলে তার বদলি হয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী।
হায়দরাবাদে বিস্ফোরণের আগেই ওইরকম ঘটনা ঘটতে পারে বলে দিল্লির গোয়েন্দারা অন্ধপ্রদেশের পুলিশকে জানিয়েছিল। সেই সতর্বাতা পেয়ে অন্ত্রের পুলিশ পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জেহাদি (হুজি) এবং কুখ্যাত লস্কর-ই-তেইবারখাটিও এজেন্টদের খুঁজতেই তারা এখানে এসেছিল। অন্ত্রের পুলিশ খবর পেয়েছে, হায়দরাবাদ, বিজেয়ওয়াড়াসহ তাদের রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় বড়সড় হাঙ্গামার ছক পশ্চিমবঙ্গে বসেই তৈরি করেছে হুজি ও তোইবার জঙ্গিরা। | অন্ধ্রের পুলিশ টিম কলকাতার বড়বাজার মেছুয়াবাজার, বনগাঁ, বাগদা, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ ছাড়াও আরও কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়েছিল। তারা এ রাজ্যের গোয়েন্দাদের জানিয়ে গিয়েছে, এ রাজ্য থেকে কিছু মুসলিম যুবক এবং বাংলাদেশি জঙ্গি অন্ত্রে গিয়ে সেখানকার ‘দারুল-উলুম-আল-মাহদি-উলআলিয়ান-ইসলামি’ নামক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জেহাদি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এর মধ্যে ২২ আগস্ট দুজন বাংলাদেশি যুবক বনগাঁ দিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যায়। তারা হুজির লোক। হায়দরাবাদ পুলিশ মনে করে, ২৫ আগস্ট হায়দরাবাদ বিস্ফোরণের মূল পাণ্ডা হুজির মদম্মদ শাহিদ ওরফে বিলাল। সে পাকিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আইএসআই তাকে বাংলাদেশে হুজির কর্তা করে দিয়েছে। ভারতে বিলালের প্রথম অপারেশন হয়েছিল ২০০৫ সালে ১২ অক্টোবর, দশহরার দিন। সেদিন সে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল হায়দরাবাদের পুলিশ কমিশনারের অফিসেই। তার পরবর্তী অপারেশনগুলির মধ্যে আছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেকার সমঝোতা এক্সপ্রেস, হায়দরাবাদেইমা মসজিদে বিস্ফোরণইত্যাদি। যে দুজন যুবকবনগাঁ সীমান্তে ধরা পড়েছে, তারা এক বছর ধরে হায়দরাবাদের উপরোক্ত দারুল-উলুমে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
কলকাতার চার যুবক, আমির রেজা খান, খুম খৈয়াম, নিয়াজ হুসেন এবং সাদাকত হুসেনের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ জারি করেছে, ইন্টারপোল। কোনও জঙ্গি পাকিস্তানে আশ্রয় পেলে ইন্টারপোলের তোয়াক্কা রাখার দরকার তার পড়ে না। আমির রেজা ছিল কলকাতার বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা। সে এখন পাকিস্তানে হুজির প্রধান।
ঠ্যালায় পড়ে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এখন বেশ কিছু মাদ্রাসার ওপর নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের কাছে রিপোর্ট আছে এই রাজ্যের ১৯টি জেলায় ২৪৭৭টি স্বীকৃতিহীন মাদ্রাসা আছে সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশের জমিতে মাদ্রাসার মালা সাজানো হয়েছে। এইসব মাদ্রাসার টাকার অভাব নেই। তারা বিনা পয়সায় ছাত্র পড়ায়, বইপত্র দেয়, আবাস ও খাদ্য জোগায়। পশ্চিমবঙ্গের অবৈধ মাদ্রাসাগুলির সঙ্গে স্থানীয় মাতব্বররা জড়িত। এইসব মাদ্রাসা জঙ্গি উৎপাদনের কারখানা বলে ব্যাপক ধারণা আছে। এতকাল পরে সেগুলির ওপর পুলিস নজর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছে। তবে মাতব্বররা পুলিশের প্ল্যান ভেস্তে দিতে চাইবেনই।
রাজ্যের গোয়েন্দাদের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকাগুলিতে হুজিবড় ধরনের জাল বিস্তার করে ফেলেছে। আইএসআইয়ের পুরানো নেটওয়ার্ক তারা কাজে লাগাচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর মনে করছে, হায়দরাবাদের বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগ আছে। অন্য কয়েকটি রাজ্যের পুলিশ অভিযোগ জানিয়েছে, বাংলাদেশি জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গকে মরূদ্যান’রূপে বেছে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদপ্তরের অফিসারদের মতে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে এ রাজ্যে জঙ্গিদের পাকড়াও করতে পুলিশ অভিযান হয় রাজ্য পুলিশের ডিজি অনুপভূষণ ভোরা উলটো কথা শুনিয়েছেন। তবে উলটো কথা তাকে বলতেই হবে। এ রাজ্যের কোনও পুলিশ অফিসারেরই সত্য বলার সাহস নেই। সেজন্যই রাজ্যের পুলিশকর্তারা ভুলেও স্বীকার করেননি, ভিন্ন রাজ্যের উর্দুভাষী ইমামরা এখানকার সীমান্তবর্তী বহু খারিজ মাদ্রাসা ও মক্তবে গেড়ে বসেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর বামফ্রন্ট সরকারকে জানিয়েছে, ওই মাদ্রাসা ও মক্তবগুলি থেকেই জঙ্গি প্রশিক্ষণ ২৭ দেওয়া হচ্ছে ও জেহাদি উৎপাদন করা হচ্ছে। ওই মাদ্রাসা ও মক্তবগুলি থেকেই জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ও জেহাদি উৎপাদন করা হচ্ছে। ওই মাদ্রাসা ও মক্তবগুলির এটাই প্রধান কাজ। ওই খারিজি মাদ্রাসাগুলির জন্য ট্রাস্ট বা হাওলার মাধ্যমে পেট্র-ডলার আসে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিরা এসে এইসব মাদ্রাসায় আশ্রয় নিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর বামফ্রন্ট সরকারকে আরও বলেছে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা। আটটি জেলায় প্রতি মাসে একটি করে ইসলাম শিক্ষণ আসর গজিয়ে উঠছে। বেশ কিছু মাদ্রাসা হঠাৎ বিশাল বিশাল বাড়ি বানাচ্ছে। সরকার এসব দেখেও দেখে না। মাদ্রাসাতে থেকেই শত শত মুসলিম যুবক জঙ্গি ইসলামের শিক্ষা ও দীক্ষা নেয়। মাদ্রাসার পাঠ্য বইয়ে পাকিস্তানের মানচিত্র ছেপে তার নীচে লেখা হচ্ছে; “চিনে নাও, এই তোমাদের দেশ।” এইসব মাদ্রাসার ওপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
যদি সরকার এইসব মাদ্রাসা ও মক্তবের ওপর বিন্দুমাত্র নজর দিতে যায়, তাহলে বড় বড় রাজনৈতিক পাণ্ডা রে রে করে তেড়ে আসবেন। এবিষয়ে সিপিএম., কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস একই পন্থী। কংগ্রেস নেতৃত্ব মুসলিম জঙ্গিবাদকে কীভাবে উসকানি দিচ্ছে তার প্রতি সাম্প্রতিক একটি নজির দিচ্ছি।
গত রবিবার, ২সেপ্টেম্বর বর্ধমান জেলার সংখ্যালঘু সম্মেলনে ভাষণ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের মাইনরিটি সেলের চেয়ারম্যান এসএমএস হায়দার জিজ্ঞাসা করেছেন, বামফ্রন্ট সরকার তসলিমা নাসরিনকে আশ্রয় দিয়েছে কেন? ওই ইসলাম অপমানকারিণী মহিলাকে এখনও এ রাজ্য থেকে বিতাড়িত দেওয়া হোক। সরকার যদি তা না করে, তাহলে রাজ্যের তিন কোটি মুসলমান মহাকরণ ঘেরাও করবে। সোনিয়া গান্ধী নিজে জনাব হায়দারকে কংগ্রেসের নেতা করে এ রাজ্যে পাঠিয়েছেন। বর্ধমান জেলার পারাজ-পুরুষ গ্রাম পঞ্চায়েতের সভাঘরে ওই সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান এবং নুরুল ইসলাম হায়দারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছে। হায়দরাবাদের মজলিস ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতাদের সঙ্গে এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের পার্থক্য কোথায়? ইমাম বরকতির সঙ্গেই বা তাদের তফাত কোথায়? তারাও তো তসলিমা নাসরিনকে খুন করতে চেয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের গোয়েন্দারা জানিয়েছে, মজলিস উত্তেহাদুল মুসলিমিন সন্ত্রাসবাদীদের রক্ষা করে, পুলিশের হাত থেকে তাদের বাঁচায়। তাদের সঙ্গে এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা সুর মেলান কেন?