জাত বৈষম্য:
বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসাহিত্যের বাইরে লোকসাহিত্য এবং বাংলার সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস পড়াচ্ছি দীর্ঘদিন ধরে। ফলে সমাজবিজ্ঞান, সাধারণ মানুষ এবং রবীন্দ্রসাহিত্যের লোকজনের সঙ্গে আমার একটা ভালো পরিচয় গড়ে উঠেছে। এছাড়া আমার গ্রন্থগুলোর অধিকাংশই নানা বিতর্কিত বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত বিধায়, পাঠক বুঝতে পেরেছেন, বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে মানুষের কাছে ভালো থাকার চেয়ে, এবিষয়ে নিজের উপলব্ধ মতামত জানাতে আমি বেশি আগ্রহী। আর সম্ভবত একারণেই অনেকে আমাকে অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়েও কথা বলতে বলেন।
বছরের শেষ দিকে তাই জাত প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছি, তবে এবিষয়ে শীঘ্রই প্রকাশ পেতে যাওয়া গ্রন্থে বিস্তৃত ব্যাখ্যা থাকবে।
সমাজ বিজ্ঞান ব্রাহ্মণ বলতে বোঝে প্রাচীনকালের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং তাঁদের বংশধর। সব শিক্ষক বুদ্ধিজীবী নন, তাই সব ব্রাহ্মণের নেই সমান পদবি। সব ব্রাহ্মণ নন, সমান মর্যাদার। মূলত প্রশাসনের উচ্চ স্তরের ব্যক্তিবর্গ ও তাদের বংশধরগণ ক্ষত্রিয় এবং বড় ব্যবসায়ী ও তাদের বংশধররা বৈশ্য। এক্ষেত্রে শ্রমজীবীরা শূদ্র এবং তার বাইরেও কিছু সম্প্রদায় আছে। এই পরিচয় আসলে প্রাচীন কালের। কয়েক হাজার বছর আগে থেকে শুরু করে বৃটিশ শাসন আমলের প্রথম পর্যন্ত ধরে নেয়া যায়।
যদি মানুষ তার কোনো পরিচয়ের কারণে প্রাপ্য বিষয় থেকে বঞ্চিত হয়,অর্থাৎ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পড়তে, গাইতে, খেলতে, চাকরি করতে না পারে, তবে সেটা বৈষম্য। আমাদের দেশে তেমনটা চোখে পড়েনা বলেই, জাতবৈষম্য আছে, স্বীকার করা যায় না। ভারতে বরং উল্টো হয়। সেখানে কথিত নিম্ন শ্রেণির জন্য কোটা আছে। পড়া ও চাকরির সুবিধে এরা বেশি পায়। বিয়ের ক্ষেত্রটা আলাদা। কে কোথায় বিয়ে করাবে এটা তার পরিবার বা ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব বিষয়। এখন পর্যন্ত বিয়ে পরিবারের উদ্যোগে হলেও, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মে এমন নাও হতে পারে। সমাজ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কাজেই ৩য় প্রজন্মে যে সমাজের উচ্চ স্তরে পারিবারিক বিয়ে ওঠে যাবে, তা একরকম নিশ্চিতই বলা যায়। এক্ষেত্রে উভয় পরিবার মিলে হয়তো বিবাহোত্তর আনন্দ উৎসব পালন করবে।
নিশ্চয় সেটা ভবিষ্যত বলবে।