জায়েদ রবিনের লেখা

Uncategorized

২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত ছিলাম৷ আমার ছয় বছর প্রবাস জীবনে বেশকিছু প্রাপ্তি আছে৷ ২০১৫ সালে আবুধাবি ন্যাশনাল মিউজিয়ামে স্থায়ী ভাবে আমার একটি চিত্রকর্ম স্থান পায়। ২০১৬ তে দুবাই ৫২ টা দেশের চিত্রশিল্পীর চিত্রপ্রদর্শনীতে আমি নবমতম চিত্রশিল্পী হিসাবে নির্বাচিত হই৷ এবং দুবাই সরকার থেকে শিল্পী মর্যাদা পাই। তাছাড়া আরো ছোট ছোট বেশকিছু প্রাপ্তি আছে। চলতি বছর ইকো গ্যালারি থেকে দুবাই আমার একটি চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি হয়৷  ২০১৭ তে বাংলাদেশে আসি। নাড়ীর টানেই একেবারে থেকে যাই৷ প্রবাসে  বিলাসী জীবন থেকে আমার দেশের মায়াটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়৷ সত্যি বলতে আরব দেশে আমি যতটা স্বাধীন চিন্তা প্রকাশ করতে পারতাম৷ নিজের জন্মভূমিতে আমি সেটা পারছিনা। দেশে ফেরার পর আমি দুই দুইবার মামলা খেয়েছি চিত্রকর্মের জন্য। ভাবা যায়?  কিছুদিন পর পর ফেসবুকে হামলা। এই আইডিটা নতুন। কিছুদিন আগে আমার একটা চিত্রকর্ম অপব্যাখ্যা করে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দেয় তারপর  আইডি ডিজেবল করে৷ যদিও ফেসবুক আমাকে আই ডি ফেরত দিয়েছে। কিন্তু কেন এমন হয়রানি মাঝেমধ্যে ভাবি৷  খুব ভাবি৷ হতাশ হই। যে দেশের টানে থেকে যাওয়া, দেশের প্রতিই আমার বিরক্ত জন্মাচ্ছে। অন্ধকার থেকে সত্যকে টেনে প্রকাশ করলেই একদল ধর্মান্ধ নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে হয়রানি করছে৷ অথচ আমার প্রতিটি ধর্মের প্রতিই আমার শ্রদ্ধা আছে৷
রাষ্ট্র থেকে ধর্ম স্বাধীন হওয়া উচিৎ,  ধর্ম থেকে শিল্প।
এখন প্রশ্ন,
আমি একজন মুসলিম নারীর গর্ভে জন্মেছি বলে আমি মুসলিম??
আমি মাগরিব, এশা, জুম্মা,ইফতারের সময়, তাহাজ্জত  এঁকেছি বলে আমি ধার্মিক? 
আমার শিল্পে নারীর দেহ সৌন্দর্য কে  পবিত্র বলে আখ্যায়িত করেছি তাই আমি পাপী?
মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ রাধা এঁকেছি বলে আমার জাত গেছে? 
যিশুখ্রিস্টের স্বশরীরে প্রথম আকাশ অতিক্রম করে চার আসমানে যাওয়ার কথাটি আমার মস্তিষ্ক বিশ্বাস করেনি তাই বিজ্ঞান নিয়ে আমি রচনা করেছি “যুগের ঘড়ি “,  এখন আমি নাস্তিক??
আমি এঁকেছি হজ্জ্ব,  সেহেরীর সময়, এখন আমি আস্তিক??

আমি নাস্তিক,আস্তিক হতে আসিনি। আমি দেশ পরিবার ভালোবাসি, ওদের কাছে থাকতে এসেছি৷  মানুষের কাছে থাকতে চেয়েছি! আমি মানুষ হতে চেয়েছি! শিল্পের কর্মী হতে চেয়েছি, সত্যকে টেনে প্রকাশ করতে চেয়েছি। শিল্পের নানামুখী রস নিতে চেয়েছি, রসে সিক্ত করতে চেয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *