জাস্টিন বিবারের এগিয়ে চলা

Blog অনুপ্রেরণা জীবনী

মাত্র ১৬ বছর বয়সে কেউ বিশ্ব বিখ্যাত সেলিব্রেটি হতে পারে জাস্টিনের জন্ম না হলে আমাদের অজানাই থেকে যেত। এই ভিডিওতে জাস্টিনের, জাস্টিন বিবার হয়ে ওঠার গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। আর জাস্টিনের ব্যাপারে এমন কিছু অজানা তথ্য আপনাদের কাছে শেয়ার করব, যা জানলে হয়ত আপনিও অবাক হয়ে যাবেন।

জাস্টিন বিবার, ১৯৯৪ সালের ১ মার্চ, কানাডার অন্টারিওর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। জাস্টিনের মা প্যাটি ম্যালেট এবং বিবারের বাবা জেরিমি বিবার।

জাস্টিন যখন ছোট তখন, জাস্টিনের বাবা জাস্টিনের মাকে ছেড়ে চলে যায়। জাস্টিনের মা ছোট্ট একটা চাকরি করতেন। অনেক কষ্টে চলছিল তাঁদের দিন।

ছোট্ট বিবার হকি, সকার এবং দাবায় আগ্রহী ছিলেন। সে সময় তিনি সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিবার নিজে গিটার, ড্রাম ও পিয়ানো বাজানো শেখেন। তিনি মোট চারটি বাদ্য যন্ত্র বাজাতে পারেন – ট্রাম্পেট, গিটার, পিয়ানো ও ড্রামস। তিনি ছোটবেলা থেকেই এগুলো বাজানো রপ্ত করেন। আসলে, জাস্টিনের রক্তেই ছিল সংগীত।

জাস্টিন, ২০০৭ সালে স্থানীয় এক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। মা ম্যালেট, সেই গানটি ভিডিও করে ইউটিউবে প্রকাশ করেন। ম্যালেট, বিবারের অন্য গানগুলোও ইউটিউবে আপলোড করতে থাকেন। ইউটিউবে ভিডিওগুলোর জন্য বিবারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সত্য হলো, জাস্টিন বিবার প্রথমে একজন ইউটিউবার ছিলেন। তিনি বিভিন্ন গানের ‘কাভার’ করে তা ইউটিউব এ আপলোড দিতেন।

এরপর জাস্টিন বিবারের সংগীত প্রতিভা সর্বপ্রথম নজরে আসে স্কুটার ব্রাউনের। সেটা ২০০৮ সালের কথা। পরে স্কুটার ইউটিউবে জাস্টিন বিবারের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঘটনার পরিক্রমা শেষে জাস্টিন বিবার আইল্যান্ড রেকর্ডের সঙ্গে চুক্তি করে ও তার প্রথম একক সংগীত ‘ওয়ান টাইম’ ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয়। গানটি কানাডায় শীর্ষস্থান দখল করে। বিবার ২০০৯ সালের শেষের দিকে তার প্রথম এক্সটেন্ডেড প্লে ”মাই ওয়ার্ল্ড” মুক্তি দেয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্লাটিনাম স্বীকৃতি লাভ করে। বিবার-ই প্রথম শিল্পী যার প্রথম অ্যালবামের সাতটি গান বিলবোর্ড হট ১০০ তালিকায় স্থান করে নেয়।

বিবারের প্রথম পূর্ণ অ্যালবাম “মাই ওয়ার্ল্ড ২.০” ২০১০ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটি বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য অর্জন করে এবং বেশ কয়েকটি দেশে শীর্ষ দশে স্থান করে নেয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্লাটিনাম সনদে ভূষিত হয়। এবং কানাডাতে গোল্ড সার্টিফিকেট পায়।  এই অ্যালবামের বেবি গানটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। ইউটিউবের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সর্বাধিক প্রদর্শিত, আলোচিত এবং পছন্দনীয় ভিডিওগুলোর একটি হলো এই গানটির মিউজিক ভিডিও। অস্ট্রেলিয়াতেও অ্যালবামটির সবক’টি গান দীর্ঘদিন টপচার্টে অবস্থান করে।

আমেরিকা ও কানাডায়ই নয়, সমস্ত পৃথিবীতে সমান জনপ্রিয় জাস্টিন বিবারের গানগুলো। আমেরিকা ও কানাডিয়ান টপচার্টে জাস্টিন বিবারের এ পর্যন্ত প্রকাশ হওয়া গানগুলোর সবক’টিই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। অথচ তাঁর এই বিশ্ব জয়ের শুরু মাত্র ১৬ বছর বয়সে!  তারপর থেকে এ পর্যন্ত জাস্টিন বিবার জয় করেছেন খ্যাতির সমুদ্রসহ কয়েক ডজন অ্যাওয়ার্ড।

বয়স শুনে যারা ভ্রূ কুঞ্চিত করে ফেলেছেন, তাদের তার সম্পর্কে শুধু এইটুকু জানলেই হবে যে, ২০১০ সালে সংগীতের অস্কারখ্যাত গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের দুটি বিভাগে জাস্টিন বিবার মনোনয়ন পেয়েছিল। ২০১০ সালের আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে জাস্টিন বিবার বর্ষসেরা শিল্পীর পুরস্কার অর্জন করেন। জাস্টিন বিবারের ‘বেবি’ ও ‘ওয়ান টাইম’ গান দুটির জনপ্রিয়তা এতই বেশি যে, ইউটিউবে গান দুটির হিট সংখ্যা অবিশ্বাস্য।  জাস্টিন বিবারের পরবর্তী অ্যালবাম ‘নেভার সে নেভার-দ্য রিমিক্স’ প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম ছিল “আন্ডার দ্য মিসলটো” যা মুক্তি পায় ২০১১ সালের নভেম্বরে। আর প্রকাশের পর পরই এটি ‘বিলবোর্ড-২০০’-তে প্রথম স্থানটি দখল করে নেয়। বিবারের পরবর্তি অ্যালবাম নেভার সে নেভার – দ্য রিমিক্সেস। এটি প্রকাশিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ।

২০১২ সালের জুন মাসে প্রকাশ হয় বিবারের ‘বিলিভ’ অ্যালবামটি। আমেরিকাতে এটি ৪র্থ স্থান ও ‘বিলবোর্ড-২০০’-তে প্রথম স্থানটি দখল করে। এছাড়া দুই সপ্তাহেই অ্যালবামটির ১ লাখ ১৫ হাজার কপি বিক্রি হয়। তার চতুর্থ অ্যালবাম পারপাস ২০১৫ সালের নভেম্বরে মুক্তি পায়। যুক্ত্রাষ্ট্রে তার অ্যালবাম ও গানের মোট বিক্রি সংখ্যা ৪৪.৭ মিলিয়ন। তিনি সংগীতের রাজপুত্র, তার প্রতিটা সৃষ্টিই মানুষের হৃদয় কেড়ে নিয়েছে, নিচ্ছে এবং নিবে।

এরকম শোনা যায় যে, একসময় আমেরিকান শিল্পী, অভিনেত্রী ও প্রযোজক- সেলেনা গোমেজ আর জাস্টিন বিবার প্রেমিক যুগল ছিলেন। পরবর্তীতে মডেল হেইলি ব্যাল্ডউইনের সঙ্গে পরিচয় হয় মার্কিন রকস্টার জাস্টিন বিবারের। শুভ সংবাদ হচ্ছে, জাস্টিন বিবার ও আমেরিকান মডেল ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হেইলি ব্যাল্ডউইন ২০১৮ সালে বিয়ে করেছেন।

জাস্টিন বিবার বিগত কয়েক বছরে অসংখ্য পুরস্কার ও সাধুবাদ অর্জন করেছেন। ২০১০ অ্যামেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-এ বিবার বর্ষসেরা শিল্পীর পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ৫৩তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস-এ শ্রেষ্ঠ নবীন শিল্পী ও বেস্ট পপ ভোকাল অ্যালবাম পুরস্কার দুইটির জন্য মনোনীত হন। বিবারের সঙ্গীত, চিত্র ইত্যাদি বিশ্বব্যাপী আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

তিনি মূলত একজন সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার এবং সঙ্গীত প্রযোজক। সংগীত ছাড়া বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছে জাস্টিন বিবার। এছাড়া উপস্থাপনাতে সমান পারদর্শী তিনি। এই বয়সেই যে ছেলের এতটা উত্থান, বাকি দিনগুলোতে তার কাছ থেকে আরো কী বিস্ময় পাওয়া যাবে, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।

তথ্যসূত্র:

প্রথম আলো

আনন্দবাজার

উইকিপিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *