জীবন সুন্দর। সুন্দর এই বেঁচে থাকা।

Uncategorized
গিয়েছিলাম আমাদের নাখালপাড়া’র রেল গেটের পাশের এক রেস্তরাঁয়। অর্ডার করেছি একটা দোসা, একটা নান এবং কোল্ড কফি। পাশের টেবিলে অনেক ক্ষণ ধরেই দেখছি ক্লাস নাইন/টেন কিংবা কলেজে পড়ুয়া চার পাঁচটা ছেলে আড্ডা দিচ্ছে। 
বিশাল সাইজের দোসাটা আমার টেবিলে দেয়ার সময় অন্য পাশে বসে থাকা ছেলে গুলো অবাক হয়ে নিজেদের মাঝে কথা বলছে- এতো বড় একটা “জিনিস” একাই খাবেন! আমি ওদের কথা কিছুটা শুনে ফেলেছি। 
আমি ছেলে গুলোর দিকে খানিক তাকিয়ে ভাবছিলাম- স্কুলে পড়ার সময় আমরাও বন্ধুরা মিলে এভাবে রেস্টুরেন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতাম। কয়েকটা ডাল পুরি’র অর্ডার করে এক ঘণ্টা কাটিয়ে দিতাম। উঠিয়ে দিলে পাড়ার আরেক রেস্তরাঁয় গিয়ে বসতাম। হঠাৎ কেন যেন মনে হলো- এক কাজ করলে কেমন হয়- এই ছেলে গুলোর জন্য বেয়ারাকে বলে একটা বিশাল সাইজের দোসা অর্ডার করে দেই। সঙ্গে সঙ্গে বেয়ারা’কে ডেকে বললাম 
– একটা দোসা ওই পাশের টেবিলে দিবেন। 
বেয়ারা ছেলেটাকে দেখে মনে হলো আকাশ থেকে পড়েছে। পাড়ার মাঝে রেস্তরাঁতে কাজ করে। মনে হয় না এক জীবনে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন এর আগে হয়েছে। আমি আবার বললাম 
– দোসা’টা নিয়ে এসে সোজা ওই টেবিলে দিয়ে দিলেই হবে। 
আমি খাচ্ছি আর অপেক্ষা করছি। বেয়ারা খানিক বাদে বিশাল সাইজের দোসা’টা ছেলে গুলোর টেবিলে রাখতেই ওরা রীতিমত রেগে-মেগে বলছে 
– আমরা তো এটা অর্ডার করিনি। এটা আমাদের কেন দিচ্ছেন?  
এবার বেয়ারা আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে। আমি উঠে গিয়ে বলেছি 
– আপনারা বোধকরি স্কুল কিংবা কলেজে পড়েন, তাই না? আপনি করে বলবো নাকি তুমি করে? 
– আপনি “তুমি” করে বলতে পারেন। 
– আমি বিদেশে থাকি। এই এলাকাতেই আমি বড় হয়েছি। স্কুলে পড়েছি। তোমাদের দেখে হঠাৎ আমার স্কুল জীবন আর স্কুলের বন্ধুদের কথা মনে হয়ে গিয়েছে। তোমরা নিশ্চয় এই দোসা’টা নিজদের মাঝে ভাগ করে খেতে কিছু মনে করবে না। 
ছেলে গুলোর মুখের দিকে বার বার করে তাকাচ্ছিলাম। ওরা বোধকরি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন এর আগে কখনো হয়নি। চেহারায় অবাক হবার অনুভূতি। সেই সঙ্গে এক ধরনের সঙ্কোচ ও আনন্দ। ওরা বলছিল 
– না না, আপনি কেন অর্ডার করলেন আমাদের জন্য। 
– কেন তোমাদের কি আপত্তি আছে খেতে? 
এরপর অবশ্য আর কিছু বলেনি ওরা। আমি আমার টেবিলে ফেরত এসছি। এবার লক্ষ্য করালাম ছেলে গুলো নিজেদের মাঝে আর একটা কথাও বলছে না। সামনে বিশাল দোসা। কিন্তু কেউ হাতও দিচ্ছে না। ওরা অনেকটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছে। ঠিক বুঝতে পারছে না কি করা উচিত। 
আমি দ্রুত’ই বিল’টা পে করে রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে চলে এসছি। পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম- আমার সামনে খেতে ওরা সঙ্কোচ-বোধ করছে। রেস্তোরাঁর দরজা দিয়ে চলে আসার সময় সব গুলো ছেলে অনেক জোরে চিৎকার করে বলেছে 
– অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। 
আহা, কি স্বতঃস্ফূর্ত সে আওয়াজ। জীবন সুন্দর। সুন্দর এই বেঁচে থাকা।
আমিনুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *