জেনে নিন জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিবৃত্ত

Uncategorized
জেনে নিন জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিবৃত্ত
মহিষাসুরকে দেবী দুর্গা বধ করার পর’ই দেবতারা শান্তি পেয়ে ভেবেছিলেন এবার আর তাঁদের কোনও সমস্যা রইল না। 
তাই তাঁরা আবার পুরনো গর্বে অভিভূত হয়ে গেলেন। মানে, তাঁরাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তাঁরা ছাড়া আর কারও কোনোও শক্তিই নেই আর কী! এই দেখে ভারী রাগান্বিত হয়ে যান আদ্যাশক্তি। 
তিনি যক্ষরূপ ধারণ করে আহ্বান করেন দেবতাদের। প্রথমে ডেকে পাঠান পবনদেবকে,আর বলেন, একটি ঘাসকে হাওয়া দিয়ে নাড়িয়ে দেখাতে।  
শত চেষ্টা করেও সফল হতে পারে না পবনদেব। 
একই অবস্থা হয় বরুণ দেবের। তিনিও একটিমাত্র
ঘাসকে ভেজাতে সক্ষম হন না।  
আর অগ্নিদেবও একটি মাত্র
ঘাসকে পোড়াতে পারেন না। 
এইদিকে তাঁরা অত শক্তিশালী সব দেবতারা, 
দরকার পড়লে সারা বিশ্বে প্রলয় এনে দিতে পারেন, অথচ সামান্য তৃণ কেউ সরাতে পারছেন না!
তখন দেবী নিজ রূপ ধারণ করে তাঁদের বোঝান যে, আসলে সবার উপরে ওই পরম ব্রহ্মই সত্য এবং
দেবতাই হোন কিংবা মানব অথবা দৈত্য,
এই জগতে সবচেয়ে বড় একটি অসুরের বিরুদ্ধে 
তাঁদের লড়াই করতেই হবে আর সেটি হল তাঁদের মানসিক অহংয়ের অসুর। এই অসুরকে বধ
করতেই পরম ব্রহ্ম যেই দেবীর রূপ নেন, তিনিই “জগদ্ধাত্রী”। 
শুনতে অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি যে- দেবীর ঐতিহাসিক গল্পের সঙ্গে  চন্দন নগরের কোনো 
যোগ নেই, বরং মিল আছে কৃষ্ণ-নগরের..!! 
নবাব সিরাজউদ্দৌলা একবার কৃষ্ণনগরের
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও তাঁর ছেলে কুমার শিবচন্দ্রকে, 
বন্দি করেন।
নবাব জানতো যে, মনেপ্রাণে দুর্গাভক্ত কৃষ্ণচন্দ্রকে যদি তিনি দুর্গাপুজোর সময়ে বন্দি বানিয়ে রাখতে পারেন, তবেই রাজা নবাবের পায়ে নিজের রাজ্যটি সমর্পণ করবেন। 
সে জন্য তাঁকে বহুদিন কারাগারে বন্দি রেখে 
অবশেষে ছেড়ে দেওয়া হল দুর্গাপুজোর নবমীর দিন।রাজা ব্যাকুল হয়ে খালি পায়ে ছুটতে লাগালেন তাঁর রাজ্যের দিকে।
যদি সময়ে পৌঁছে দেবীর আরাধনা করা যায়।
কিন্তু ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত রাজা কিছুদূর গিয়ে  
অজ্ঞান হয়ে যান।
ভক্তের এই করুণ অবস্থা দেখে দেবী
তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং বলেন যে- 
“”দেবীর পুজো শরতে করতে না পারার দুঃখটুকু’কে রাজা ভুলতে পারবেন আগামী কার্তিক মাসের শুক্লা অষ্টমীতে”  দেবীর পুজো করলে। 
জ্ঞান ফিরলে ঘোরের মধ্যে রাজা পৌঁছে নিজ রাজ্যে। এরপর
সেখানে পণ্ডিতদের ডেকে তিনি তাঁর স্বপ্নের কথা খুলে বলেন
এবং জানতে চান তাঁর স্বপ্নে দেখা দেবী আসলে কে.?? তখন
পণ্ডিতেরা তাঁর কথা শুনে বলেন যে, তিনি দেবী জগদ্ধাত্রীকে
দেখেছেন,যাঁহাকে এককালে পুজো করতেন দ্রাবিড়েরা। সেই
মত ১৭৫৪ সালে কৃষ্ণনগরে বাংলার প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর
প্রচলন করেন তিনি,যা এখনো চলছে।রাজার পরম মিত্র ইন্দ্র
নারায়ণ চৌধুরী তাঁকে দেখেই নিজ বাসস্থান চন্দননগরে শুরু
করেন এই পুজোর, ১৭৫৫ সালে!
শাক্ত-তান্ত্রিক দেবী জগদ্ধাত্রী সম্পর্কে চতুর্দশ শতকে পন্ডিত
মহামহোপাধ্যায় শূলপাণি তাঁর ‘ব্রতকালবিবেক’ নামক গ্রন্থে
বলেছেন:
         “কার্তিকেই মল পক্ষাস্য ত্রেতাদৌ নবমেয় হনি
          পূজয়েত্তাং জগদ্ধাত্রীং সিংহপৃষ্ঠে নিষেদুষীম।।”
অর্থাৎ, কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতেই মাতা ‘জগদ্ধাত্রী
দেবীর পুজো হয়। বৌদ্ধতন্ত্র ও হিন্দুতন্ত্রে মা জগদ্ধাত্রী পূজার
উল্লেখ আছে। কাত্যায়ণী তন্ত্র মতে,
           “সিংহস্কন্ধাধিরুঢ়াং নানালঙ্কার ভূষিতাম।
            চতুর্ভুজাং মহাদেবীং নাগযজ্ঞোপবিতিনাম।।
            শঙ্খ-চক্র- ধনুর্বানলোচনত্রিতয়ান্বিতাম।
            রক্তবস্ত্র পরিধানাং বালার্কসদৃশীংতনুম।।
            নারদাদৈমুনির্গ নৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীম।
            ত্রিবলী বলয়োপেত নাভিলাল মৃণালিনীম ।।
            রত্নদীপে মহা দীপে সিংহাসন সমান্বিতে।
            প্রফুল্লকমলারুঢ়াং ধ্যায়েত্তাং ভবগেহিনীম ।। “
জগদ্ধাত্রীর এই বিবরণই সব থেকে প্রাচীন। 
মার্কন্ডেয় পুরাণ মতে দুর্গা ও জগদ্ধাত্রী অভিন্ন দেবী। “জগদ্ধাত্রী দুর্গায় নমঃ” মন্ত্রে শ্রী জগদ্ধাত্রী পূজিতা হন। জগতকে যিনি ধারণ করে আছেন তিনিই তো জগদ্ধাত্রী।  জগদ্ধাত্রী চতুর্ভুজা। চারটি হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনু ও বাণ।দেবী সিংহবাহিনী, রক্তাম্বরা, গাত্র বর্ণ উদিত সূর্যের আভার মতো। গলায় ঝুলছে নাগ’যজ্ঞোপবীত। 
পুরাণে আছে, দেবী বধ করেছিলেন করিন্দ্রাসুরকে। সে অসুর হস্তীর রূপ ধারণ করে থাকতো।  দেবী হস্তী রূপী অসুরকে বধ করেন। এই প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের চমৎকার এক উক্তি করেনঃ 
               “মানুষের চঞ্চল মন ক্ষ্যাপাটে হাতির মতন।
                হাতির বিনাশ মানে চঞ্চল মনের বিনাশ।”
সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *