#অম্বুবাচী :
💓২২ জুন (৭ আষাঢ়) সকাল ৭টা ৫৪ মিনিটে অম্বুবাচী আরম্ভ।
🔴২৫ জুন (১০ আষাঢ়) রাত ৮টা ১৮ মিনিটে অম্বুবাচী সমাপ্ত।
#প্রথমত জেনে নেওয়া যাক অম্বুবাচী কী?
অম্বুবাচী হিন্দুধর্মের বাৎসরিক উৎসব। অম্বুবাচীকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতীও বলে। হিন্দুদের শাস্ত্রে পৃথিবীকে মা বলা হয়ে থাকে। বেদেও একই রকম ভাবে তাঁকে মা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার পৌরাণিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আষাঢ মাসে রবি মিথুন রাশিস্থ আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথমপাদে অর্থাৎ এক চতুর্থাংশ স্থিথিকালে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুময়ী হন। সেই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়। অর্থাৎ এই প্রচলিত আচারের পিছনে রয়েছে পৃথিবী আমাদের মা, এই বিশ্বাস৷
পৃথিবীতেই তো মানুষের জন্ম। শুধু মানুষ নয়, ফুল, পাখি, প্রকৃতি এক কথায় সবাই তো পৃথিবীর সন্তান। মহাজাগতিক ধারায় পৃথিবী যখন সূর্যের মিথুন রাশিস্থ আর্দ্রা নক্ষত্রে অবস্থান করে, সে দিন থেকে বর্ষাকাল শুরু ধরা হয়। পাশাপাশি আমরা জানি, মেয়েরা ঋতুকাল বা রজঃস্বলা হন এবং এক জন নারী তার পরই সন্তান ধারণে সক্ষম হন। ঠিক তেমনই প্রতি বছর অম্বুবাচীর এই তিন দিনকে পৃথিবীর ঋতুকাল হিসেবে ধরা হয়।
#ধর্মীয় আচার হলেও এর সঙ্গে প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থা জড়িয়ে থাকায় এটির একটি সামাজিক প্রভাবও রয়েছে। ফলে অম্বুবাচী একটি কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানও। এর অর্থ ধরিত্রীর উর্বরাকাল। এই তিন দিন জমিতে কোনও রকম চাষ করা হয় না। উর্বরতাকেন্দ্রিক কৃষিধারায় নারী এবং ধরিত্রী সমার্থক বলে গণ্য করা হয়। সেই ধ্যানধারণা থেকেই আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী বা মাতা বসুমতী যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন তখন তাঁকে ঋতুমতী নারী রূপে গণ্য করা হয়৷
তখন শুরু হয় অম্বুবাচী প্রবৃত্তি। ঠিক তিন দিন পরে যেটা শেষ হয়, সেটা হল অম্বুবাচী নিবৃত্তি। প্রাচীন কাল থেকেই এই নিবৃত্তির পরই ফের জমিতে চাষাবাদ করতেন কৃষকেরা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন। একই ভাবে পৃথিবীও এই অম্বুবাচী বা অমাবতির তিন দিন অশুচি থাকেন বলে ধরে নিয়ে চাষিরা আর মাঠে যান না। এখনও বিভিন্ন জায়গায় এই নিয়ম মেনে চলা হয়।
#দেখে নেওয়া যাক অম্বুবাচী কারা পালন করেন:
ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই অম্বুবাচী রজঃউৎসব নামেও পালিত হয়। আবার এ সময় যাঁরা ব্রহ্মচর্য পালন করেন, যেমন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলা— কেউই ‘অশুচি’ পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না করা কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে এই তিন দিন কাটান। এই কারণে এখনও পরিবারে বয়স্ক বিধবা মহিলাদের তিন দিন ধরে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে ব্রত পালন করতে দেখা যায়৷
#বিধিনিষেধ :
অম্বুবাচীর তিন দিন পর্যন্ত কোনো ধরনের মাংগলিক কার্য করা যায়না। চতুর্থ দিন থেকে মঙ্গলিক কাজে কোনো বাধা থাকেনা। অম্বুবাচীর সময় হাল ধরা, গৃহ প্রবেশ, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ থাকে ও এই সময়ে মঠ-মন্দিরের প্রবেশদ্বার বন্ধ থাকে।যেহেতু এই সময় শুভ কাজ করতে নেই। তাই জমি বাড়ি ক্রয় বা বিক্রয় করাও নিষেধ রয়েছে।বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া যাত্রাও নিষেধ।
এই চার দিন গ্রাম-বাংলার মহিলারা এই অনুষ্ঠান পালন করেন। চাষ বাসের কাজ এই সময় বন্ধ থাকে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে পিঠা-পায়েস বানাবার রীতি আছে। এই অনুষ্ঠানে বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে ব্রত রাখে। অম্বুবাচীর আগের দিন রান্না করা খাবার তারা তিন দিন ধরে খান। ঐ তিন দিন তারা কোন গরম খাবার খান না।
#আসামের কামাখ্যা মন্দিরে এই উপলক্ষ্যে দেবীর ঋতুকাল সমাগত মনে করে উৎসব পালন করা হয়। সূর্যের দক্ষিণায়নের দিন থেকে তিন দিন অর্থাৎ আষাঢ়ের ৭ তারিখ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই পার্বণের পালন কাল।
আম্বুবাচী সময় অসমের কামাক্ষ্যা মন্দিরে বিশেষ উৎসব পালন করা হয়। সতীপিঠের অন্যতম কামাক্ষ্যা মায়ের মন্দির তন্ত্র সাধনার অন্যতম পীঠ। এই স্থানে দেবী সতীর গর্ভ এবং যোনি পড়েছিল। অম্বুবাচীর এই তিন দিন এই মন্দিরে বিশেষ উৎসব পালন করা হয়।এই তিন দিন কামরুপ কামাখ্যায় পূজা হয়। সমস্ত দেবী মন্দির বন্ধ থাকে। কামরুপ কামাহ্মায় মন্দিরের গর্ভ গৃহ থেকে লাল রং এর তরল (ভক্ত রা বলে মা এর রজস্রাবের রক্ত) বের হয়। এই তিন দিন দেবীর মন্দির বন্ধ থাকলেও চতুর্থ দিনে দেবীর মন্দির সর্বসাধারণের দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। অম্বুবাচী নিবৃত্তির দিন পান্ডারা ভক্তদের রক্তবস্ত্র উপহার দেন। দেবী পীঠের এই রক্তবস্ত্র ধারণ করলে মনোস্কামনা পূর্ণ হয় বলে ভক্তেরা বিশ্বাস করেন। এই রক্তবস্ত্র পুরুষেরা ডানহাত বা গলায় ও মহিলারা এই বস্ত্র বাওহাত বা গলায় পরিধান করে থাকেন। রক্তবস্ত্র পরিধান করে শশ্মান বা মৃতের ঘরে যাওয়া নিষিদ্ধ। কামাখ্যা ধামের অম্বুবাচী মেলা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।🙏
#ওড়িশায় এই পার্বণকে সরাসরি ‘রজ উৎসব’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
সুত্র : ইন্টারনেট
লেখনী: আকাশ ✒✒
©collected