দু’দিন আগে কথা বলেছি বাংলাদেশের এক মুফতি-মৌলানা-ইমাম- হাফেজ আবদুল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে । মাসুদ দীর্ঘকাল কোরান হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার পর ইসলাম ত্যাগ করেছে। কিছু লোককে জানি ইসলাম থেকে বেরিয়ে ইসলামের নিন্দে করে আবার ইসলামে ফিরে গেছে। মাসুদের অবিশ্বাস কতটা দৃঢ় তা জানারও আগ্রহ ছিল আমার।
মানুষকে নাস্তিক বানানো আমার উদ্দেশ্য নয়। সমতার সমাজ বানানো আমার উদ্দেশ্য। ধর্ম বদলানো যায় না, ধর্মগ্রন্থে যা লেখা আছে, তা মুছে ফেলা যায় না। কিন্তু সমাজকে বদলানো যায়। রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে মুক্ত করা যায়, মানুষকে সভ্য শিক্ষিত এবং বিজ্ঞানমনস্ক করা যায়। সেই চেষ্টাটিই আমি করছি।
মুসলিমরা চিরকাল কট্টর রয়ে যাবে এ আমি বিশ্বাস করি না। সরকার যদি মূর্খদের ভোট পাবার জন্য ধর্মকে ব্যবহার না করে , যদি মৌলবাদিদের প্রশ্রয় না দেয়, যদি ধর্মীয় আইন সরিয়ে সমতার আইন আনে — তাহলেই তো সমাজ বদলানো শুরু হবে, নারীরা সমানাধিকার পাবে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষ বাক স্বাধীনতার চর্চা করবে।
আমাদের দুষ্ট সরকারেরা তা করে না বলে সমাজ অন্ধকারে পড়ে আছে। কোনও ধর্মই নারীর সমানাধিকারের কথা বলেনি, কোনও ধর্মই মানবাধিকারের পক্ষে নয়। অন্য ধর্মের লোকেরা তাদের সমাজ বদলাতে পারে, কিন্তু ইসলাম ধর্মের লোকেরা কোনওদিনই সমাজ বদলাবে না, এ আমি বিশ্বাস করি না। ধর্মকে অক্ষরে অক্ষরে না মানলেই সমাজ বদলাবে, মানুষ সভ্য হবে। মুক্ত বুদ্ধির চর্চা চলতে থাকলেই তা সম্ভব হবে। ৮০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল মুতাজিলাদের যুগ, তাঁরা মুসলমান হলেও ছিলেন যুক্তিবাদি। তাঁরা বলেছিলেন, কোরান মানুষের লেখা, কোরানকে নয়, যুক্তিবুদ্ধিকে অনুসরণ করতে হবে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা মুসলমান সমাজেও সম্ভব। যেভাবে খ্রিস্টান ইহুদিদের অধিকাংশ তাদের ধর্মগ্রন্থকে অনুসরণ না করে সমতার সমাজ গড়ে তুলেছে, সেভাবে মুসলমানরাও গড়ে তুলতে পারবে।
মাসুদ বলছে, অন্য ধর্মে সম্ভব হলেও ইসলামে তা সম্ভব নয়। কোরান যেহেতু আল্লাহর লেখা, আইন কী হবে তা আল্লাহ বলে দিয়েছেন, তাই মুসলমান হলে ওগুলো মানতেই হবে।আমি বলছি ওগুলো মানার কথা, কিন্তু মানুষ ওগুলো মানবে না। উদারতা মানবে, মানবতা মানবে, সমতা মানবে, সমানাধিকার মানবে, বর্বরতা মানবে না, হিংস্রতা মানবে না । নিজেকে তারপরও মুসলমান যদি বলতে চায় বলবে। খ্রিস্টানদের অধিকাংশই বাইবেলের কিছুই মানে না, কিন্তু নিজেদের খ্রিস্টান বলে পরিচয় দেয়। সেরকমও তো হতে পারে মুসলিম সমাজেও। ধর্মগ্রন্থগুলো ঐতিহাসিক নথি ছাড়া আর কিছু নয়। মুসলমানরা যদি সত্যিই কোরান হাদিসের আদেশ মানতো, তাহলে অমুসলিমদের হত্যা করে রক্তের বন্যা বইয়ে দিত বিশ্বময়, নারীকে আক্ষরিক অর্থেই ঘরে বন্দি করতো।যেহেতু এসব তারা করছে না, তাই আশা করা যায় মুসলমানরা কোরান হাদিস না মেনেও জীবন যাপন করে, করতে পারে। তাই আশা করা যায়, সমাজ বদল হবে।
https://www.youtube.com/watch?fbclid=IwAR12ilQcNQ_NlZgvWOKruIEISjmHPmPzR7wTlE_sxDWWjbrlOPx4cEoaTbs&v=tv3HbnpZTtM&feature=youtu.be