দুই মাস ধরে মেয়েটি নিখোঁজ!

Uncategorized
দুই মাস ধরে মেয়েটি নিখোঁজ!
স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফেরেনি। নিখোঁজ হওয়ার আগে মায়ের মোবাইল ফোনে রাতভর কি কি সব করতো! তখন পাত্তা না দিলেও উধাও হওয়ার পর ওই ঘটনাকেই বড় করে দেখছে মেয়েটির পরিবার। 
মাত্র চৌদ্দ বছরের আদরের মেয়েকে উদ্ধারে থানায় অভিযোগ, র‌্যাবকে জানানোসহ সম্ভাব্য সব কিছুই করেছে বাবা-মা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। র‌্যাব মেয়েটির মোবাইল ট্রাক করে যে তথ্য পেয়েছে, তার সবটাই ভূয়া নাম-ঠিকানা। পরিবারের ধারণা, মেয়েটি কোনো খারাপ চক্রে পড়েছে। 
এক শিক্ষকের মারফত মেয়েটির চাচা আমার কাছে এলেন। স্যারের বিশ্বাস আমি কোনো সহায়তা করতে পারব। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় মেয়েটির আত্মীয়দের নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক অতিরিক্ত কমিশনারের দ্বারস্ত হলাম। এর আগেও নানা সামাজিক কাজে তাকে পাশে পেয়েছি। তিনি সব শুনলেন। তারপর কাগজপত্রগুলো ডিবির এক এডিসির কাছে দিলেন। মেয়েটির সঙ্গে যাই ঘটুক না কেন তা জানার অধিকার তার পরিবারের রয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বললেন যে, দ্রুতই খোঁজ বের করে ফেলবেন। 

ঘটলও তাই। তিনদিনেই ডিবি মেয়েটির অবস্থান ট্রাক করে ফেলল। তথ্যগুলো জানিয়ে দিল র‌্যাব-১৩ কে। কেননা শুরু থেকেই মামলাটি নিয়ে তারা কাজ করছিল। এরপর দিনাজপুর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া র‌্যাবের যৌথ অভিযানে শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয় বাঞ্ছারামপুর থেকে। গ্রেফতার করা হয় ছেলেটিকেও। 
পুরো ঘটনা আরও ভয়ানক! 
মায়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো মেয়েটি। স্কুলের বান্ধবীরা তাতে খুলে দিয়েছিল ফেসবুক। ব্যাস! কয়েক দিনের মধ্যেই সাইদুল নামে এক ছেলের সঙ্গে প্রেম হয়ে যায়। পরিচয়ের একুশ দিনের মাথায় ছেলেটি আসে দিনাজপুরে। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে চা খায় মেয়েটি। তারপর আর কিছু মনে নেই।
প্রথমে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়। 
বোঝানো হয় বাড়ি ফিরে গেলে বাবা-মা বকবে। বিয়ে করে সংসার করবে তারপর সৌদি আরব যাবে বলেও জানায় ছেলেটি। এরপর ব্রাহ্মণবাড়ীয়া নিয়ে এসে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতে শুরু করে। মেয়েটিকে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির কাজ শুরু করেছিল ছেলেটি। 
মামলার তদন্তকর্তারা ধারণা করেন, এরা শক্তিশালী কোন পাচারকারী চক্র। যারা কিশোরী মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ফুঁসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে। তারপর বিয়ে করে সৌদি আরবে নিয়ে বিক্রি করে ধনকুবেরদের কাছে। মেয়ে যোগাড়ের এ কাজে ইদানিং ফেসবুক ও মোবাইল খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। হয়তো অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে মেয়েটি! 
বালিকা বা কিশোরী মেয়ের আবদার মেটাতে হাতে তুলে দিচ্ছেন ফোন। সেই ফোনে সে কি করছে, কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, কি দেখছে রাতভর, তার কি খোঁজ রাখছেন? 
স্মার্টফোনে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্নাপচ্যাট কিংবা টিন্ডারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকছে অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা। হুট করে জড়িয়ে যাচ্ছে প্রেমের ফাঁদে। আবেগের বশে একদিন পাড়ি দিচ্ছে অজানায়; যার শেষ পরিণতি হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের কোনো বন্দিশালা! 
সংঘবদ্ধ এই চক্রের পরবর্তী টার্গেট কে? 
আপনার বা আমার পরিবারের কেউ নয় তো! 
আপনি কি নিশ্চিত?
প্রিয়জন হারিয়ে খোঁজার চেয়ে আগেই আগলে রাখুন। 
কেননা, দিনাজপুরের মেয়েটির মতো সবাই এতোটা সৌভাগ্যবান নাও হতে পারে!
~ Abdullah Al Imran

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *