ঢাকা মতিঝিল আরামবাগের ধর্ম ব্যবসায়ী ভণ্ড পীর সৈয়দ মাহবুব এ খোদার মৃত্যুতে আপনাদের অনেকের মতো আমি একদিক থেকে আনন্দিত হলেও তার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে আমি শোকাহত। ধর্ম নিয়ে তিনি পয়সা কামিয়েছেন, মিথ্যাচারের কল্পিত কাহিনী তৈরি করে নিজকে ফাতেমা’র স্বামী বলে দাবি করেছেন, আল্লাহর সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল এমন কথাও বলেছেন কিন্তু ধর্মকে তিনি হেফাজতি , জামাতি বা চরমোনাইয়ের পীরের মতো কখনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেননি। ধর্মকে তিনি হিংসা ঘৃনা বিদ্বেষে উষ্কানির কাজে ব্যবহার করেননি। পরমতের বিরুদ্ধে হিংস্র হয়ে তিনি জিহাদের ডাক দেননি বা কাউকে হত্যার জন্য প্ররোচিত করেননি। ধর্মীয় কুসংস্কার ও রীতিকে তিনি ব্যবহার করছেন তার অর্থ উপার্জনের কাজে যে কাজটি সকল পীর ও ওয়াজি হুজুরদের সবাইকেই করতে দেখা যায়। আপনি মাওলানা আজহারীর হিমালয় পর্বত দর্শনের মিথ্যাচারের গল্প বিশ্বাস করে মারহাবা মারহাবা করবেন, ইব্রাহিম হুজুরের রকেটে ভ্রমন বিশ্বাস করে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢেলে তাদের ধনী সম্পদশালী বানিয়ে দেবেন কিন্তু দেওয়ানবাগীকে আপনার পছন্দ নয় কারন তিনি ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন না, ধর্মকে নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন না, ধর্ম নিয়ে হিংসার ছড়ানোর কাজটি করেন না এজন্যই। ভণ্ড হুজুরদের কেউই ভাল না, কিন্তু দেওয়ানবাগী ছিলেন মন্দের ভাল একজন। সারা বাংলাদেশে লক্ষ দেওয়ানবাগী থাকলেও মানবতার কোন অকল্যাণ হয় না, একজন চরমোনাইয়ের ভণ্ড পীরের বংশধর, বা হেফাজতি দেশটাতে বিদ্বেষের আগুনে ছাড়খার করে দিতে পারেন। পীর প্রথা খারাপ জানি , কিন্তু আবহমান বাংলার পীর ফকিরদের অধিকাংশই কেবলমাত্র ধর্ম ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ ছাড়া মোটাদাগে মানুষের কোন ক্ষতি করেন নাই। আপনি বিশ্বাস করে ধর্ম মানলে সেই সরল বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে পীরের পানি পড়াও খেতে পারেন । দেওয়ানবাগী তো আপনাকে বিষ খাওয়াই নাই বা ধর্মের বিষ আপনার মধ্যে ইন্জেক্ট করে আপনাকে গুলশানের হলি আর্টিজানে মানুষের গলা কাটতেও উদ্বুদ্ধ করেন নাই।
সৈয়দ মাহবুবে খোদা ওরফে দেওয়ানবাগী ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ৩ এবং ২ নম্বর সেক্টরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে তিনি চাকুরি ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি শাহবাজপুর, তেলিয়াপাড়া,মাধবপুর, বাগসইর এলাকায় সরাসরি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক সহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধার লেখা নিবন্ধে দেওয়ানবাগীর বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা জানা যায়।
বাংলাদেশের বহু মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আখের গুছিয়ে আজ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তাদের দুর্নীতি লুটপাট কি দেওয়ানবাগীর পানি পড়া বিক্রি করে পয়সা কামানোর চাইতে বহু অংশেই নিকৃষ্টতম নয়। আপনি দেওয়ানবাগীর হস্তি সাদৃশ্য চেহারা নিয়ে ট্রল করতে পারেন তাকে ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ী হিসেবে গালি দিতে পারেন কিন্তু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার প্রতি আমি অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল। কারন ধর্ম ব্যবসা করলেও শেষ পর্যন্ত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তিনি অটল আস্থা রেখেছিলেন। একজন ধর্ম ব্যবসায়ী হলেও তিনি আপনাদের অনেকের মতো ভণ্ড সাম্প্রদায়িক ছিলেন না।