দেশকে ধর্মের আবরণে ঢাকতে চাওয়ার পরিণতি এমনই হয়, সবে তো শুরু !

Uncategorized

সবে তো শুরু!

সেদিন কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেললো, আজ কুষ্টিয়ায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বীর বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভেঙেছে।

যারা ভাস্কর্য অথবা মূর্তি ভাঙছে, কাজটা অপরাধ হলেও এটা তো সত্য, ওরা মক্তব মাদ্রাসায় যা শিখেছে, সেটা অন্তর দিয়ে শিখেছে, পরম বিশ্বাস থেকে শিখেছে।

ওরা শিখেছে, ইসলামে মূর্তি হারাম।
তাছাড়া হিন্দুরা দেবদেবীর মূর্তি পূজা করে, তাই ওরা ধরেই নিয়েছে মূর্তি মানেই হিন্দুদের দেবদেবী।

ওদের কাছে মাটির মূর্তিও যা, ইট কাঠ পাথর তামা লোহা বালি সুরকি দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যও তা।

ওদের কাছে থেমিসের ভাস্কর্য যা, লালনের ভাস্কর্যও তা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যা, বাঘা যতীনের ভাস্কর্যও তা।
তাই ওরা থেমিসের ভাস্কর্যও চায়নি, লালনের ভাস্কর্যও চায়নি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও চায় না।

এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিলো! দেশ ব্যাপি মাদ্রাসা শিক্ষা রমরমা চলবে, রাজনীতিতে হুজুরদের প্রভাব থাকবে, নির্বাচন এলেই রাজনীতির ময়দানে লড়াকু সৈনিকও নির্বাচনের সাত দিন আগে হুজুরদের কাছ থেকে দোয়া মাঙতে যাবে, পানি পড়া, মাথায় ফুঁ নিবে, হুজুরদের দোয়া নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মুখ ঘুরিয়ে থাকা যায়? প্রতিদান দিতে হবে না?  

হীরক রাজার যন্তর মন্তর ঘরে হুজুরগণ দিনে রাতে ছাত্রছাত্রীদের বয়ান শোনায় কোন্ কাজ শিরক আর কোন্ কাজ সহীহ্। যন্তর মন্তর ঘর থেকে ব্রেন ওয়াশড নতুন আলেমগণ রাস্তায় নেমে ভাস্কর্য ( শিরক) বিরোধী আন্দোলন তো করলেই তখন তাদের দোষ হয়ে গেলো!

আলেমগণ যখন মূর্তি রাখা শিরক বলে কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে থেমিসের ভাস্কর্য সরাতে বলেছিলো, আপনারা সরিয়ে দিয়েছেন।

আলেমগণ যখন মূর্তি শিরক বলে লালন ফকিরের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেললো, আপনারা চুপ করে ছিলেন।

এবার যখন আলেমগণ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধিতা শুরু করলো, আপনারা বই খাতা খুলে মূর্তি আর ভাস্কর্যের তফাৎ নির্ণয় শুরু করে দিলেন।
আলেমদের ওয়াশড ব্রেন থেকে প্রাপ্ত ইসলামিক রেফারেন্সের বিপরীতে কোণঠাসা হয়ে আপনারা তুরস্ক ইরাক মিসর আগগানিস্তান এমনকি সৌদি আরবের কোথায় কোন্ ভাস্কর্য সহি সালামতে টিকে আছে, তার লিস্ট তৈরি করা শুরু করলেন!

আচ্ছা, আপনারা কেনো মূর্তি আর ভাস্কর্যের তফাৎ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন! আমি তো নব্য আলেমদের সাথে একমত পোষণ করি, আমিও মনে করি, মূর্তি আর ভাস্কর্যে কোনো অর্থগত বৈষম্য নেই।

মূর্তি মানে অবয়ব। মূর্তি যে শুধু মাটিরই হয়, তা তো নয়। মূর্তি যে শুধু দেবদেবীরই হয়, তাও নয়।
ছায়া মূর্তিও হয়। ছায়া মূর্তি মানুষের হতে পারে, গরু ঘোড়ারও হতে পারে, বাঘ ভালুকের হতে পারে, আবার হিন্দুদের আরাধ্য দেবদেবীরও হতে পারে।

পাথর কেটে যে কারিগর মূর্তি বানায়, তাকে যদি ভাস্কর বলা যায় আর পাথরের মূর্তিকে ভাস্কর্য বলা যায়, তাহলে পর্দায় আলো আঁধারের কারিগরি দিয়ে যে কারিগর ছায়া মূর্তি তৈরি করে, তাকে কেনো ছায়া ভাস্কর বলা যাবে না, আর ছায়া মূর্তিকে কেনো ছায়া ভাস্কর্য বলা যাবে না!

আপনারা যে ভাস্কর্য আর মূর্তির পার্থক্য বুঝাতে গিয়ে বারবার বলছেন, হিন্দুরা মাটির মূর্তি পূজা করে, ইসলাম পৌত্তলিকতা সমর্থন করে না তাই ইসলামে মূর্তি শিরক কিন্তু ইসলামে ভাস্কর্য শিরক নয়।

কী আশ্চর্য ব্যাখ্যা! আপনারা তো ভুল বোঝাচ্ছেন! হিন্দুরা শুধু মাটির তৈরি দেবদেবী পূজা করে কে বললো?
হিন্দুরা পাথরের তৈরি,  কাঠের তৈরি, কাগজের তৈরি, বাঁশের তৈরি, কাঁচের তৈরি, তামা পিতল লোহার তৈরি দেবদেবীর মূর্তিও পূজা করে। দেবদেবীর অবয়ব হলেই হলো, তা মাটির তৈরি মূর্তি নাকি পাথরের তৈরি ভাস্কর্য তা নিয়ে ভাবে না।

মাটি দিয়েও যে কোনো কিছুর অবয়ব বানানো যায়, পাথর খোদাই করেও যে কারো অবয়ব বানানো যায়।

অযথাই কতোগুলো ব্রেন ওয়াশড পাবলিকের কাছে ভাস্কর্য আর মূর্তির মাঝে ফারাক দেখাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে উচ্চতা থেকে নীচের দিকে টানছেন।

কেনো সৎ সাহস নিয়ে বলতে পারছেন না, হিন্দুরা মাটির দেবদেবী পূজা করে, সেটা অচ্ছুৎ কোনো বিষয় নয়। ওরা পূজার মাধ্যমে নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে, মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত সেজদায় বসে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে।

এর সাথে সাধারণ  মূর্তি অথবা ভাস্কর্যের সম্পর্ক নেই। মূর্তি যদি শিরকই হতো, তাহলে মুসলমানের ঘরে বাচ্চাদের খেলার জন্য পুতুল রাখা যেতো না, হাতি ঘোড়া বাঘ ভালুকের মূর্তি দিয়ে ঘর সাজানো যেতো না। যে সকল আলেম হুজুররা ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন করছে, তাদের বাচ্চা কাচ্চা, নাতি নাতনিদের জন্য তো পুতুল খেলা, ক্রিকেট ফুটবল খেলাও বন্ধ হয়ে যাবে!

আপনারা কি কোরান হাদিস পড়েন নাই? উচ্চকন্ঠে বলতে পারেন না যে, কোরান হাদিসে এমন হিংসাত্মক কথা লেখা নেই। বলতে পারেন না, “খবরদার ইসলামের দোহাই দিয়ে কোনো উল্টাপাল্টা কথা বরদাশত করা হবে না!”

ধমক না দিয়ে এদের ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন বন্ধ করতে এতো যে ভাস্কর্য ভাস্কর্য করছেন, বিভিন্ন মুসলিম দেশের উদাহরণ দেখাচ্ছেন, লাভ কিছু হয়েছে তাতে? বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত ভাস্কর্যটাও মাত্র দুইজন আলেম এসে ভেঙ্গে দিয়েছে!

বাংলার প্রবাদ ভুলে গেছেন, বাঁদরকে কাঁধে চড়াতে নেই, সাপের মুখে চুমু দিতে নেই!

দেশে এতো যন্তর মন্তর ঘর তৈরি হয়েছে, যন্তর মন্তর ঘরে ব্রেন ওয়াশ হয়েছে এদের, এদের হাত থেকে সহজে মুক্তি নেই!
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যই ভেঙ্গে ফেলেছে ওরা, বাঘা যতীনের ভাস্কর্য আস্ত থাকবে কেনো?

দেশকে ধর্মের আবরণে ঢাকতে চাওয়ার পরিণতি এমনই হয়, সবে তো শুরু !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *