দ্বিজাতিতত্বের সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান আর ধর্মান্ধ, ধর্মব্যবসায়ী রাজাকারদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
আমজনতার এই ধর্মান্ধতার কারনেই দেশে ভারত বিরোধিতা এবং ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামীলীগকে নাস্তিক ও ভারতপন্থী ট্যাগ দেয়া হয়েছে সবসময়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ধর্ম ও দেশ উদ্ধারের নামে ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ও নানা কাটাছেঁড়া করে মুশতাক, জিয়া, এরশাদ রাজাকার ও খুনীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে, শেখ মুজিবের বাবা হিন্দু, তো মা হিন্দু, নানা অপপ্রচার চালিয়ে ১৬ বছর কাটিয়ে দিয়েছে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় অতি অল্প বয়সেই দেখেছি আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কী পরিমাণ সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার। প্রচার করা হয়েছে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে মসজিদ থাকবে না, আজান থাকবে না, মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে, শেখ হাসিনা দেশ ভারতের কাছে বিক্রি করে দিবে, ইন্ডিয়ার হিন্দুরা এসে দেশের সব জমি, চাকরি দখল করে ফেলবে। কুকুরের মাথায় টুপি বসিয়ে আওয়ামী লীগের কাজ বলে মসজিদের মসজিদে ভুলভাল বানানে নিউজপ্রিন্ট কাগজের পোস্টার বিলি করেছে ধর্মমাতালরা।যার ফলে ১৯৯১ সালেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে যায়।
১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে বাস্তবতা উপলদ্ধি করে শেখ হাসিনা হজ্ব করে এসে মাথায় হিজাব, হাতে তসবি নিয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেন চালালেন, আমার এলাকার মসজিদের মুয়াজ্জিম আমার সাথে বাজি ধরলেন যে, আওয়ামী লীগ যদি আগামী ১০০ বছরে ক্ষমতায় যেতে পারে তবে সে নেংটা হয়ে প্রকাশ্যে সারা বরিশাল শহর ঘুরবে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হল। সফলভাবে দেশ চালানোর পরেও আবার পুরনো ষড়যন্ত্র।
২০০১ সালের আগেই জামাত বিএনপি এক হয়ে গেল। আবার একই কৌশল ধর্মান্ধদের। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাগ গেলে ফেনি পর্যন্ত ইন্ডিয়ার হয়ে যাবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যাবে, খালেদা জিয়া আইএসআই এর টাকায় জোর গলায় এসব প্রচার চালালেন। বিচারপতি লতিফুর রহমান, প্রথম আলো গং এক হয়ে গেলো। হিন্দুদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেয়া হল। বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝরা আসনে যে পরিমান সংখ্যালঘু ভোটার আছে তার চেয়েও আওয়ামীলীগ অনেক কম ভোট পেল। আওয়ামীলীগ হেরে যাওয়ার পর সারাদেশে ব্যাপকভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্ষন হল, বাড়িঘর ভাংচুর হল। এরপরে হরকাতুল জেহাদ, মুফতি হান্নান, বাংলা ভাই, জামাতুল মোজাহেদিন, আব্দুর রহমান, আমিনীদের কার্যক্রম, সারাদেশে একযোগে বোমাহামলা, ছায়ানট, উদীচি, সিনামাহলে, শেখ হাসিনাকে শতাধিকবার গ্রেনেড, বোমা হামলা চলতে থাকল। রাজাকার নিজামী, মুজাহিদ, সাইদী, সাকারা দেশকে জঙ্গীদের অভয়ারণ্য বানিয়ে ফেলল। হুমায়ুন আজাদকে কোপালো, শামসুর রাহমানের বাড়িতে আগুন দিল, কিবরিয়া, আহসানউল্লাহর মত রানিং এমপি, আইভি রহমান সহ অসংখ্যকে মেরে ফেলল।
২০০৮ এ আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করলে সাম্প্রদায়িক জামাত, বিএনপি মরণ কামড় শুরু করল। সর্বশেষ দেশ বিদেশের লবিং, জাতিসংঘ, তুরস্কের ফোন, কোন কিছুতে না পেরে দেশের কওমী ওলামাদের দিয়ে হেফাজতের মোড়কে শাপলা চত্বর তান্ডব ঘটিয়ে সরকার পতন ঘটিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চাইল। তারা একই সাথে সারাজীবনের স্বঘোষিত নাস্তিক ফরহাদ মজহার, শফিক রহমানদের নিয়ে আমার দেশ, ফারাবিদের সমন্বয়ে পুরনো কৌশল হিসেবে শাহবাগীদের নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে কোপানো শুরু করল।
ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট চালানো মুরাদ টাকলারা এবং অনলাইনে নতুনরা খাওয়া শুরু করল, শাহবাগীদের কারনেই শাপলা চত্বর জেগেছে এবং হাজার হাজার হুগুরের লাশ ইন্ডিয়ায় পাচার করা হয়েছে। তারা জানে না ৯০ এর দশক দেশে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামাল, জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন, আনিসুজ্জামানরা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি করার পর থেকেই তারা নাস্তিক ট্যাগ খেয়ে, সাইদিদের জাহান্নামের ইমাম উপাধী পেয়ে, শত বাধা বিঘ্ন, অপবাদ, অপমান স্বত্বেও আন্দোলন চালিয়ে গেছেন, অনলাইনে অমি রহমান পিয়াল, ডাক্তার আইজুদ্দিনরা রাতদিন শিবির, ছাগু বিরোধী প্লাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।
এরা ভুলে যায়, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাত্র দুই দন আগেও এদেশিয় ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক রাজাকারেরা পরাজয় বুঝতে পেরে দেশসেরা শতাধিক প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবিদেরকেই নাস্তিক, ইন্ডিয়ার এজেন্ট ট্যাগ দিয়ে তালিকা করে ধরে নয়ে নির্মমভাবে জবাই, গুলি, টর্চার করে হত্যা করে।
সাইদীকে চান্দে দেখা, পদ্মা সেতুতে এক লাখ কল্লা যাওয়া জাতি জানে না, আওয়ামী মুসলিম লীগ গত ৭০ বছর আগে নিজ নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়ার পর থেকে এই ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথেই লড়াই করে যাচ্ছে। শাপলা চত্ব্ররের সফলতার পর আওয়ামী লীগ দেখল যে প্রচন্ড সফল সুযোগ্য জনপ্রিয় মেয়ররা নির্বাচনে হেরে গেল, দেশের শিক্ষিত নামধারী, ননপ্রাকটিচিং আধুনিক চলন বলনের মুসলিমরাও সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধতায় ভুগছে। জামাতকে ছেটে ফেলতে এবং জন অনুভূতিকে ধরে রাখতে তারা হেফাজতকে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করল। সার বীজ, পেয়ে হেজাবীরা (হেফাজত, জামাত, বিএনপি) একাকার হয়ে আবার ছোবল দেয়া শুরু করল। কারন তারা দেখল দেশ দুর্দান্ত গতিতে প্রতিবেশি ভারত, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বৈশ্বিক সকল সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন না থামালে তাদের বিপদ।
ইহুদী, খ্রিস্টান ধর্মান্ধরা কয়েক শতক জুড়ে বিশ্বে জ্বালাও পোড়াও করে এখন ধর্ম আফিমের নেশা কিছুটা থেমেছে, জ্ঞান বিজ্ঞান উন্নয়ন বিলাসে মন দিয়েছে। মুসলিমরা শুরু থেকেই ৪ খলিফাদের ৩ জনকেই নির্মমভাবে খুন করে, কারবালার নির্মমতা থেকে শুরু করে মাঝখানে ২/৩ শতকের জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে নাস্তিক খেতাব পেয়ে বর্তমানে আইএস, আল কায়েদা, বোকো হেরেম, তালেবান, ব্রাদারহুড সহ শতাধিক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতবর্ষে গো মাতার অনুসারী মোদী বাহিনী নতুন করে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে রক্তের নেশায় পড়েছে।
এদেশের বড় অংশের মননে এখনও ৪৭ এর দাঙ্গা, উদবাস্তু, বিতারণ, দেশ ত্যাগ, অন্যের ভূমি দখল করে রাখার পাপ, দ্বিজাতিতত্ত্বের চেতনা যা সর্বদাই জাগরণের অপেক্ষায় থাকে। সাথে আছে স্বধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকা, খেলাফতের খোয়াব আর যেকোন উপায়ে সারাবিশ্বে স্বধর্ম কায়েমের ইউটোপিয়া এবং শর্টকাট পথে জান্নাতে যাওয়ার দুর্বার নেশা।
এদেশ তথা ভারতবর্ষের প্রধান সমস্যা ধর্মান্ধতা, বৈশ্বিক প্রধান সমস্যাও বলা যায় এটিকে।