“সালাম যশোর !!!
প্রথম চালান আজকে রাতেই পৌঁছে যাচ্ছে আপনার শহরে।
আশা করি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে এই ত্রাণ আগামী দুই দিনে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের কাছে পৌঁছে যাবে।”
কথাগুলো “বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে। তারা আরও বলেছে, দুর্যোগের সময়টাতেই খাবারের সম-বন্টন খুব দরকার। এমন একটা জায়গা থাকুক যেখানে যার বেশি আছে সে দিয়ে যাবে, যার নেই সে নিয়ে যাবে। তেমনই একটা অসাধারণ মডেল। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় সমাজের ধনী মানুষের অর্থায়নে “বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন” সবজি বা খাদ্যসামগ্রী রেখে যাচ্ছে, আর সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষগুলো।
ধরুন, যশোরে সবজির মূল্য কম। যশোরের বাজার থেকে সবজি কিনে ঢাকায় নিচ্ছে এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিচ্ছে। এবার সত্যিই যাদের প্রয়োজন তারা তাদের মত করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা দাবী করেছে, কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিচ্ছে না। যথেষ্ট পারস্পরিক দূরত্বও নিশ্চিত করা হচ্ছে। এভাবে মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যসমাগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে বিদ্যানন্দ।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ অদূরে দাঁড়িয়ে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে, কখনো কখনো সাথে থাকছে পুলিশের সাপোর্ট। যশোর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় এমন উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যানন্দ।
তাঁদের একটি ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, বাড়ীতে লকডাউন অবস্থায় যদি কেউ খাবার সংকটে ভুগেন তবে “এক টাকায় আহার – 1 Taka Meal” পেজে যোগাযোগ করলে বিদ্যানন্দ – Bidyanondo টিম খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবে।
এখানে ছবি তোলার বাড়বাড়ন্ত নেই। যারা খাদ্যসামগ্রী নিচ্ছেন তাঁদের কোনো ছবি আমি এখনো দেখিনি। একজন মানুষের হাতে পাঁচ কেজি চাল তুলে দিচ্ছেন ১৫ জন মানুষ! এমন ছবি আপনি হরহামেশা দেখতে পাবেন। যেখানে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখারও কোনো সুযোগ থাকে না। পাঁচ কেজি চালের বিনিময়ে একজন মানুষকে জাতীয় ভিক্ষুক বানিয়ে দেয়। সেসব আপত্তিকর ব্যাপারগুলো আমরা বিদ্যানন্দে দেখিনি।
একঝাক শিক্ষিত যুবকের হাতে গড়া এই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন – এক টাকার বিনিময়ে খাবার প্রদান করে দেশের মানুষের নজর কেড়ে নেয়। ছিন্নমূল শিশুদের স্কুল, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমুখী কাজের সাথে যুক্ত এরা।
প্রতিবছর বইমেলায় সততার স্টল করে, যেখানে কোনো বিক্রেতা থাকে না। বই ক্রয় করতে হলে, ক্রেতা একটি বাক্সে মূল্য রেখে যান। কে কম দিচ্ছে, কে বেশি দিচ্ছে সেসব দেখার কেই থাকে না।

এবারও যখন দেশে করোনা দুর্যোগ তখন দেশের মানুষ পাশে দাড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বাসস্টপেজ, রেলস্টেশন, হাসপাতালসহ মহল্লায় মহল্লায় জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের সাধ্যমত, মাস্ক, পিপিইসহ বিভিন্ন উপকরণ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করছেন।
আর যখন অঘোষিত লকডাউনে বাংলাদেশ তখন খাদ্য সংকটে ভোগা পরিবারগুলোর পাশে দাড়াচ্ছে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফটোসেশন না করে অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে সবচেয়ে মানবিক কাজ করে যাচ্ছে এরা।
বিদ্যানন্দের কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যখন আমরা একে অপরের সমালোচনা করতে ব্যস্ত, দোষ ধরতে ব্যস্ত – তখন তারা মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের কাছে পৌঁছে, মানুষের প্রকৃত উপকার করছে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা বিদ্যানন্দ টিম।
তথ্যসূত্র: