ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করবে যে সাতটি কাজ

অনুপ্রেরণা Blog সচেতনতা সাস্থ্য স্বাস্থ্য


যারা সিগারেট ছাড়তে চাচ্ছেন শুধুমাত্র তাঁদের জন্য। দয়াকরে অন্যরা সময় নষ্ট করবেন না।প্রথমে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে রাখি: আপনি মাত্র ১ বছর ধূমপান না করলেই, দীর্ঘদিন ধূমপান করার কারণে আপনার শরীরের ক্ষতিগুলো বা যে রোগগুলো বাসা বেঁধেছিল সেগুলো এমনিতেই চলে যাবে। আপনার শরীর হয়ে উঠবে একজন অধূমপায়ীর শরীরের মত। আপনি হয়ে উঠবেন আগেরমত নিরোগ, সুস্থ ও মাদকমুক্ত পরিপূর্ণ সুখী মানুষ।
যারা অনেক দিন ধরে ধূমপান করছেন, তাঁদের জন্য ধূমপান ছাড়া কঠিন; কিন্তু অসম্ভব নয়। আসুন, দেখা যাক কীভাবে ধূমপানের এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।


১. প্রথমে ধূমপান কেন ছাড়বেন, তা নিয়ে ভাবুন।
 প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন, তাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণটি বেছে নিন। সন্তান ও পরিবারের ক্ষতি, অর্থনৈতিক ক্ষতি বা ধূমপানের শারীরিক কুফলের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন। একটা পরিষ্কার লক্ষ্য ধূমপান ছাড়ার জন্য সবচেয়ে দরকারি।


২. ধূমপান ছাড়ার তারিখ নির্ধারণ করুন।
 তবে এটা এক সপ্তাহের বেশি যেন না হয়। এই সাত দিনে ধীরে ধীরে ধূমপানের পরিমাণ কমিয়ে দিন। যদি এই কদিন বেশি ধূমপান করেন এই ভেবে যে আর তো কখনো করব না, তাহলে উল্টো মন বেঁকে বসবে।


৩. যেদিন ধূমপান ছাড়বেন, সেদিন আপনার রুটিন পরিবর্তন করুন।
 সেটা হবে একটা নতুন দিন, যা আপনাকে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে শেখাবে। যদি রুটিন থাকে এ রকম যে আপনি হাঁটতে বের হবেন, আর সকালের নাশতার আগে একটা সিগারেট খাবেন, তাহলে এই রুটিন পরিবর্তন করুন। যেমন হাঁটতে বের হবেন এবং বাসায় ফিরেই গোসল করে নেবেন, তারপর এক কাপ চা খাবেন।


৪. লিখে রাখুন, ঠিক কী ঘটলে এবং কখন আপনি ধূমপান করেন।
 খাওয়ার পর নাকি কাজের বিরতির সময়ে। সেই সময় আসার আগেই নিজের মনকে উৎসাহিত করবেন অন্য কোনো কাজের জন্য।


৫. আপনি যে ধূমপান ছাড়বেন, সেটা সবাইকে জানান।
পরিবার ও বন্ধুদের জানালে দায়বদ্ধতা বাড়বে। চাইবেন কেউ যেন আপনার সামনে ধূমপান না করে। কোনো বন্ধুকে আপনার সঙ্গে ধূমপান ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করুন। সবার সমর্থন ধূমপান ছাড়তে অনেকখানি সহায়তা করে।


 ৬. নতুন কিছু করুন, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
 এমন কিছু যা আপনাকে শারীরিকভাবে ধূমপান থেকে বিরত রাখে। যেমন সাঁতার কাটা, ইয়োগা করা বা বাগান করা।


৭. নিজেকে প্রতিদিন পুরস্কৃত করুন ধূমপান না করার জন্য।
 একটি জার বা মাটির ব্যাংকে টাকা জমান প্রতিদিন যে টাকা আপনি ধূমপানের জন্য ব্যয় করতেন। কিছুদিন পর দেখবেন, এত বেশি টাকা জমে গেছে যেটা দিয়ে আপনি হয়তো খেলাধুলা বা ব্যায়ামের কিছু কিনতে পারছেন অথবা নিজের পরিবারকে উপহার দিতে পারছেন। বিষয়টি আপনাকে উৎসাহিত করবে।


৮. মনকে বোঝান, সারাজীবনের জন্য নয়– কয়েকদিনের জন্য ধূমপান ত্যাগ করছেন।
ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে গেলে যেমন কষ্ট হয়, ধূমপায়ীদের তেমনি কষ্ট হয় ধূমপান ছাড়ে থাকার কথা চিন্তা করলে। এইসময় মনকে বোঝান, আপনি কয়েকদিনের জন্য ধূমপান ত্যাগ করছেন, মোটেও সারাজীবনের জন্য নয়। 


৯. কোনো অবস্থাতেই সিগারেট খাবেন না, একটুও না।
আপনি যদি মনে করেন, “কয়েকদিন তো হয়ে গেলো, এবার কয়েক টান দেওয়া যায়।” এটা একটা মস্তবড় ভুল। একটান দিলেন তো মরলেন। এটা করবেন না। আপনি একবার ছাড়লে নির্দিষ্টদিন পর্যন্ত মোটেও কোনো সিগারেট খাবেন না। একদম না।


১০. অন্তত এক বছরের টার্গেট করুন।
গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ধূমপায়ী সিগারেট ছাড়ার এক বছরের মধ্যে পুনরায় ধূমপান করলে তিনি আবারও আসক্ত হয়ে পড়েন। তাই অন্তত একবছর বিরতি দিন। কঠোরভাবে একটি বছর পার করুন। এক বছর পর আপনার আর ধূমপানের আগ্রহই থাকবে না। এটা একটা যাদুর মত পদ্ধতি। একটি বছর ধূমপান না করার প্রতিজ্ঞা করুন, দেখবেন আপনি সম্ভবত সারাজীবনের জন্য অধূমপায়ীর কাতারে পড়তে যাচ্ছেন। 
তামাকের মধ্যে ৭০টি ক্যানসার তৈরির উপাদানসহ প্রায় ৭০০০টি বিষাক্ত উপাদান রয়েছে। তামাক ও ধূমপান কেবল ফুসফুস বা মুখের ক্যানসারের জন্য নয়; স্তন, গর্ভাশয়, পাকস্থলী, কিডনি বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের জন্যও দায়ী। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, অস্টিওপোরোসিসের জন্য এটি সরাসরি দায়ী। দীর্ঘমেয়াদি তামাকের ব্যবহারে ত্বক ও দাঁতে বার্ধক্যের চিহ্ন দেখা দেয়, চোখে ছানি পড়ে। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হয়। গর্ভপাত বা গর্ভধারণের সমস্যা দেখা দেয়। একজন ধূমপায়ী ব্যক্তির আয়ু কোনো অধূমপায়ীর তুলনায় সাধারণত ১৫ বছর কমে যায়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান থেকেও শরীরে কুপ্রভাব পড়ে। তাই আজই ধূমপানকে না বলুন।
অধূমপায়ীদের সুস্থ সুন্দর পৃথিবীতে আপনাকে স্বাগতম।

তথ্যসূত্র:

উইকিপিডিয়া

বিবিসি

বিকাশপিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *