নারীরাই নারীদের বড় শত্রু কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও পুরুষতান্ত্রিক নারী

Uncategorized

নারীরাই নারীদের বড় শত্রু কিংবা
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও পুরুষতান্ত্রিক নারী-

এই যে একটা নারী ওড়না ছাড়া হাঁটলে আগে একজন নারীই আড় চোখে তাকায়, পাড়ায় পাড়ায় বলে বেড়ায় এই মেয়ে কি করে বুঝেন না ভাবি? কেমনে কেমনে চলে দেখেননা? কয়জনের সাথেই যেনো শুয়ে বেড়ায় আল্লাহ জানে! ছি ছি!

মেয়ে হয়েছো তো তুমি সহমর্মিতা শিখো, রাগ/ জেদ বাদ দেয়া শিখো, চুপ করে থাকতে শেখো, সহ্য করতে শিখো, রান্নার কাজ শিখো, সংসার সামলাইতে শিখো ইত্যাদি ইত্যাদি এই শিক্ষাগুলো একজন নারী রে প্রথম দেয়ই হচ্ছে তার “মা”।

বউ-শ্বাশুড়ির সম্পর্ক মানেই শ্বাশুড়ির কর্তৃত্ব বউ এর ওপর, বউরে দিয়ে সংসার সব কাজ উদ্ধার করানো; দরকার হইলে সারাদিন ক্যাচক্যাচ করা আর ভুল হইলে    কষে দুইটা চড় লাগানো এবং তাতে না হলে স্ত্রীরে সাইজ করার জন্য ছেলেরে উষ্কায়ে দেয়া যা সবই করেন শ্বাশুড়ি।
বউও যে কিছু করেন না তেমন না। সে আরেক বাসায় যায়া নিজের শ্বাশুড়ি নামে গালাগাল কইরা আসে, কখন মরবে বুড়ি সেই আশায় থাকে!

এক মেয়ে বন্ধু খুব কাছের মেয়ে বন্ধুটার নামেই আরেকজনের কাছে বদনাম করে বেড়ায়। আর পুরুষরা তখন বলে,মেয়েদের পেটে কথা থাকেনা।

এক মেয়ে বন্ধুই আরেক মেয়ে বন্ধুরে বলে, ওড়না টা ঠিক কর!
ছেলেরা কেমনে তাকায় তোর দিকে! কিংবা বলেও বসে এরপর কিছু হইলে তো ছেলেদের দোষ দিবি, ওড়না ঠিক কর!

এক নারী কলিগের প্রমোশন হলে আরেক পুরুষ কলিগের আগে নারী কলিগই বলে নিশ্চয়ই বসের সাথে শুইছে।

এক নারী দামী শাড়ি গয়না পরে সাইজা সো কল্ড সুন্দ্রী হয়ে বের হলে পুরুষের আগে এক নারীই তার দিকে আগে তাকায়। উঁহু, সুন্দর দেখাচ্ছে তাই নয়!
তার থেকে অন্যকে সুন্দর দেখাচ্ছে বেশি তাই সে তাকায়, তাকায় হিংসায়।
এরপর অবশ্য সে জেনেও নেয়, কই থিক্কা এই শাড়ি,গয়না,মেকাপ কিন্সে উক্ত নারী :3

তো এসব ঘটনার জন্য খুব বিরক্ত হয়ে আমিও আগে সবার মতনই নারীদের দোষ দিতাম,বলতাম নারীরাই তো নারীদের দেখতে পারেনা ব্লা ব্লা।

কিন্তু এখন দিই না, দিই না কারণ আমি এখন গোড়াটা কোথায় জানি।

এখন কথা হচ্ছে, নারীদের এসব বৈশিষ্ট্য,ভূমিকা আসলে কোত্থেকে শুরু হয়েছে? নাকি জন্মলগ্ন থেকেই এরম?

প্রতিটা মানুষের মনমানসের একটা অহং হচ্ছে তার স্বকীয়তা বা সেল্ফ লাভ(self)।
কিন্তু মানুষ যতই নিজেকে ভালোবাসুক সে একা কিছুই করতে পারবেনা, নিজেকে ভালোবাসার জন্য হলেও তার অন্যের(other) ওপর ডিপেন্ড করতে হয়/ হবে।
এই self ও other বেপারটা একসাথে হলে self তার সকল ইচ্ছা/ চাওয়া নিজের মত পূরণ করতে পারেনা আসলে।
কনফ্লিক্টটা তখনই শুরু হয়, self এর সুপিরিয়রিটির জন্য  other এর প্রতি ঘৃণা,শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার শুরু হয়।

আর এই মর্মে আসলে পুরুষ Self আর নারী other।
কিন্তু কেনো সেটা আসলে অনেক বড় ঘটনা যার সারাংশ এমন হইতে পারে যে মানুষ আর প্রানীকূলের মধ্যে পার্থক্য এই যে, মানুষ ও প্রানী উভয়েই নতুন জীব সৃষ্টিতে সক্ষম হইলেও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে কিন্তু প্রাণী নেয় না৷ আর মানুষের মধ্যে নারী নতুন জীবন সৃষ্টি করতে পারে আর পুরুষ প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হত্যা করতে পারে বা নিহত হতে পারে ( পড়ুন বিবর্তনবাদ)। 

এছাড়া আরো যেমন প্রজননে নারীর নিষ্ক্রিয়তা, নারী পুরুষের দৈহিক শক্তির পার্থক্য, প্লেইস্টোসিন যুগের পর শ্রম বিভাজন, পুঁজিবাদী মুদ্রায়িত অর্থনীতি সাথে নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পতন,পুরুষের তৈরী ধর্ম,সংস্কৃতি সব মিলিয়েই পুরুষ নারীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবী শুরু করে।

নারীরে নিয়ে নানা গবেষণা শুরু হয় যার প্রথম দানটাই মারেন এরিস্টটল তারপর আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট থেকে সমাজের মাথা মাথা মানুষগণ।

এতো এতো গবেষণা করে তারা other ( নারী) রে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নানারকম মিথ, সাহিত্য, নারীর ওপর গবেষণা ধর্মী লেখা লিখেন যা নারীকে চিত্রিত করে এইভাবে যে নারী বিচারশক্তিশূণ্য,অবিবেকী,রহস্যময়,জটিল আরো কত কি!
নারী কে বুঝায় সে আত্নবিসর্জন, আত্নত্যাগের আদর্শ।

এই যে এই আদর্শ নারীর রূপ এখন সেটার ছাঁচ এই পুরুষের নির্মাণ করা।
অজ্ঞ নারী সেই ছাঁচে পরে পুরুষের Other হিসেবে নিজের এসব বৈশিষ্ট্য কে নিজের নারীত্ব ভেবে নিয়ে এবং তা স্বীকার ও সুরক্ষায় অভ্যস্ত  হয়ে গেছে আসলে।

এইসব কিছুতে ষোল কলা পূর্ণ করতে আছে আমাদের পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা!
এইখানে নারী হচ্ছে শ্রমিক শ্রেনীর অন্তর্গত শ্রমিক শ্রেণী।
শ্রমিকের যেমন তার উৎপাদনে অধিকার নাই, নিয়ন্ত্রণ নাই; সবই বিচ্ছিন্ন।মালিক এইসব নিয়ন্ত্রণ করে বিক্রি করে।

তেমনি প্রজননের সুবিধা পাওয়ায় নারীরে তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে,খুব সুকৌশলে!
একজন নারী সাজে, ব্যায়াম করে,পোশাক পরে মূলত নিজের রক্তমাংসরে পুরুষের আনন্দের জন্য সজ্জিত করে।
ইভেন একজন কর্মজীবী নারীও তার এই নারীত্বের ফাঁদ থেকে রেহাই পায় না।
সে সাজে, ভ্রু উঠায়, ডায়েট করে, নিতম্ব সরু করে,স্তন স্ফীত করে, নখ সুন্দর করে কত কি করে করে পুরুষের  ভোগের বস্তুতে পরিণত হয় যেই মেসেজ আবার সবার মধ্যে ছড়ায়ে দিতে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি তো সোনায় সোহাগা!

এই যে এই পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে শ্রমিক যেমন তার কাজ, ভাগ্য মেনে নিয়েই চলছে আর তাতেই অভ্যস্ত হয়ে যন্ত্রের ন্যায় তাই করে যাচ্ছে তেমনি নারীরা নিজেরা নিজেদের এসব জায়গায় মেনে নিয়ে নিজেদেরকে বস্তুতে পরিণত করে ফেলেছে।

অতএব সারাংশ হইলো, শ্রমিক যেমন ডলারের পেছনে ধাওয়া করে সহকর্মী শ্রমিকদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামে নারী তেমনি তার ওই এক প্রোডাক্টিভিটির জায়গা তার শরীর  দিয়ে পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণে,অনুমোদন, অনুরাগের জন্য অন্যান্য নারীদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামে।
তাই এক নারী আরেক নারীর ভালোটা নিতে পারেনা, আরেক নারীর পেছনে লেগে থাকে, তার খুঁত ধরায় ব্যস্ত থাকে কেনোনা সেই খুঁতগুলো জেনেই না সে নিজে নিখুঁত  হতে পারবে!

কিন্তু ট্রাজেডি হইলো, স্ত্রী,মাতা, কর্মজীবী রমনীর তথাকথিত ভূমিকা তাদের কারোরই নিজ সৃষ্ট নয়; পুরুষ, পুরুষের নির্মিত কাঠামো বা প্রতিষ্ঠান এই ভূমিকাগুলোর স্রষ্টা।
তাই ভুল দিকে আঙুল তোলা বন্ধ করেন!

এখন অফটপিক হইলো, সারাদিন একটা মানুষ রান্ধা,খাওয়া দাওয়া, ধোয়া-মোছার মত এক কাজ নিয়াই কোনোরকম নিজের সাধ আহ্লাদ ছাড়া নিজের জীবন কিভাবে কাটায়ে দিতে পারে? তাদের একঘেয়েমী আসে না?
আসে, তখন হয়তো আর কোনো কাজ না থাকায় এই অন্যজন রে নিয়ে একটু ব্যস্ত হয় মানুষগুলা, মস্তিষ্কের একঘেয়েমিতা কাটায় :3

পুনশ্চঃ এই লেখার সাথে আমার ছবি দেয়ার কারণ হচ্ছে আমি একটু একটু করে নিজেরে ভেঙেছি, নিজের মধ্য থেকে এসব স্টেরিওটাইপ চিন্তা ভেঙেছি।
মানুষ নাকি তার চিন্তার মত আর ছবি সেই মানুষেরই প্রতিবিম্ব।
অনেক ভেঙেচূড়ে এই আমি,এটাই আমি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *