নিঃসন্দেহে, ২০২০–এর কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বাজেটের focal point হল LIC-এর disinvestment অথবা বিলগ্নিকরণ।

অনিমিত্র চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ভারত

নিঃসন্দেহে, ২০২০–এর কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বাজেটের focal point হল LIC-এর disinvestment অথবা বিলগ্নিকরণ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গেছে। ভারতবর্ষের দক্ষিণপন্থীদের একাংশের মধ্যে এ নিয়ে প্রবল উৎসাহ দেখা গেলেও, সামান্য দ্বিধাও দেখা যাচ্ছে অপর একটি অপেক্ষাকৃত ছোট অংশের মধ্যে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্ৰতিবাদকারী অথচ অর্থনৈতিকভাবে প্রবল সংরক্ষনপন্থী বামপন্থীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবল আলোড়ন উঠেছে। বিলগ্নীকরণের মধ্য দিয়ে বাজার চাঙ্গা করার এই প্রচেষ্টা কত সাফল্য পায়, নবভাবে কোন বাজপেয়ী-ঠেঙ্গারি দ্বৈরথ জন্ম নেয় কিনা তাও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগও রয়েছে। তবে, একটি কথা অবশ্যই বলা যায় যে প্রবলতর ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বাজারে গতিশীলতা আনে, বীমাশিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়তো আগামী জাতীয় অর্থনীতি তথা রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ও লিখবে।

কিন্তু প্রশ্ন থাকে এ ক্ষেত্রে বাঙ্গালীর লাভ বা লোকসান কি? এ প্রশ্নও ওঠে – মুনাফা/লাভ হয় ব্যক্তিগত স্তরে বা জাতিগত এবং তাই সেই অমোঘ প্রশ্নটি উঠে আসে – What’s your take?

এক্ষেত্রে প্রথমেই উঠে আসে স্বীয় দাদামহাশয় শ্রী কুলেন্দ্রনাথ রায়ের কথা – তৎকালীন প্রখ্যাত Oriental Fire & General insurance Company -এর Deputy Regional Manager ও পরবর্তীকালে, Calcutta Fire Insurance-এর Fire Manager……ব্যবসা প্রসারে অতি সিদ্ধহস্ত এবং একই দেহে বাঙ্গালী ভদ্রলোক ও British Gentleman-এর অত্যাশ্চর্য সংমিশ্রণের শেষ প্রতীকদের অন্যতম। তিনি যখন কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেন সেই সময় অর্থাৎ ১৯৬৭-৬৮ সালেও কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্যিক সূর্য অধুনা ২০২০ সালের মতো অমাবস্যার আঁধারে মুখ লুকোয়নি। যদিও তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ক্ষমতার কেন্দ্রে বামপন্থীদের থাকার কল্যাণে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুঁজির পলায়ন শুরু হয়েছে কিন্তু ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে যাকে বলা হয় Flight of Capitals তার শেষ লগ্ন এসে পৌঁছয়নি। যদিও নিশ্চিতভাবেই নেহেরু সরকার দ্বারা অধিকৃত নীতি অনুযায়ী (মাশুল সমীকরণ নীতি, বিশেষত) কলকাতা তার বাণিজ্যিক ঐতিহ্যের শেষ লগ্নে প্রায় উপস্থিত তবুও Calcutta-র পতন ও Bombay-এর উত্থান ভারতবর্ষের economic capital/অর্থনৈতিক রাজধানী রূপে হয়নি। …….তা হওয়ার যদিও সমস্ত প্রক্রিয়া চলছিল সজোরে কিন্তু তবুও কলকাতার Clive Street কে পিছনে ফেলে বোম্বাইয়ের Dalal Street-এর উত্থান হয়নি।

কেউ যদি এটিকে ধান ভানতে শিবের গীতের সাথে তুলনা করেন সেই মহাশয়/মহাশয়ার সাথে প্রবল মতপার্থক্য রইবে। মূল কথা, Banking এবং Insurance Industry-এর সাথে বাঙ্গালীর নাড়ির সম্পর্ক রয়েছে যা তার কাছ থেকে বহু উপঢৌকনের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।  ধৈর্য সহকারে তালিকা দেখলে দেখা যায় ১৯৩০ – ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত registered head office এর সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতাই ছিল এই দুই শিল্পের প্র্রাণকেন্দ্র। এবং হবেই বা কেন, তার উত্তরে শুধু দুটি নামের উচ্চারণ বড়ই প্রয়োজন – শ্রী সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শ্রী নলিনী রঞ্জন সরকার এবং দুজনেই সম্পূর্ণরূপে ও প্রত্যাশিতভাবেই আজ বিস্মৃত। অপদার্থ উত্তরসূরি তার তেজদৃপ্ত পূর্বপুরুষ সম্পর্কে উদাসীন থাকতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

প্রথমজন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের মেজদাদা শ্রী সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তথা প্রথম ভারতীয় ICS-এর পুত্র, অনুশীলন সমিতির কোষাধক্ষ্য ও ভারতীয় তথা বাঙ্গালী-পরিচালিত বীমা ও ব্যাঙ্কিং শিল্প প্রসারের অন্যতম স্তম্ভ, দ্বিতীয়জন – এক কথায় অনেক কিছু – অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, পশ্চিমবঙ্গের প্রথম অর্থমন্ত্রী তথা ভারতবর্ষের বীমাশিল্পের বেতাজ বাদশা। Hindustan Cooperative Insurance Society -এর President, Federation of Indian Chambers of Commerce & Industry (FICCI) & the Bengal National Chamber of Commerce & Industry = এরও। এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থনীতির প্রতি অবিশ্বাসী।

শ্রী নলিনীরঞ্জন সরকারের এহেন অবিশ্বাসের প্ৰমাণ পাওয়া যায় প্রখ্যাতা লেখিকা শ্রীমতী এষা দের লেখা তাঁর পিতা, বিখ্যাত সম্পাদক তথা সাংবাদিক শ্রী বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ “তবু মনে রেখো” তে।

“সাংবাদিক প্রভাত গোস্বামীকে উপদেশ, ‘প্রবাত, ভাইব্যা দ্যাখ, আলা জ্বালাইবা না ন্যাশনালাইজ করবা।’ তখন এক মিনিটের জন্য ‘আলা’ বা বৈদ্যুতিক এল কলকাতায় নিভত না। কলকাতায় বাবাদের জীবনে ইলেকট্রিসিটি সূর্যকিরণের মতো স্বাভাবিক, পর্যাপ্ত ও প্রকৃতিদত্ত। সত্তরের দশকে অন্ধকারে হ্যারিকেন, ইমার্জেন্সি লাইটে যখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস লিখতেন, তখন বার বার স্মরণ করেছেন নলিনীরঞ্জনকে। কৃতী মানুষটি বাঙ্গালী-জাতীয় চরিত্র এমন হাড়ে হাড়ে চিনেছিলেন যে, সরকারী উদ্যোগ বা অধিগ্রহণের অবধারিত পরিণতি যে কর্মকুশলতার অধোগতি ও নিষ্কর্মাশাহী, সেটা স্বাধীনতা আসতে না আসতে তাঁর দূরদৃষ্টিতে সম্পন্ন ছিল।”  

প্রয়োজন ছিল কিঞ্চিৎ সরকারী সহায়তার, জাতীয়করণ নয়। কিন্তু বাঙ্গালীর ভাগ্যে তা জোটেনি, তার কর্মস্পৃহা বিলীন হয় বামপন্থী চিন্তার আবর্তে এবং  কংগ্রেসী অর্থনৈতিক চিন্তার বানের তোড়ে। ক্রমে একটি সর্ব বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন creamy layer-এর সৃষ্টি এবং বাঙ্গালীর সামগ্রিক পতন।  এবং এক creamy layer proletariat যে ক্রমশ এক unfounded bourgeoisie এ পরিণত হয় তাও সর্বজনবিদিত। 

মূল সমস্যা কি এই ক্ষণে? কেন্দ্রীয় সরকারের এই নয়া নীতির কোন profit বা মুনাফা বা উপকার কি বাঙ্গালী হিন্দুর ঘটবে? না তা সীমিত থাকবে বাঙ্গালী ব্যতিরেকে কর্মক্ষম অন্যান্য ধর্মীয়, ভাষাভাষী সমাজের মধ্যেই? এটাই হল মূল প্রশ্ন – এই ক্ষেত্রে লাভ করার জন্য যে দেহ-মন–আত্মা এক মন্ত্রে সঁপে থাকা সক্ষম রাজনৈতিক শক্তি/catalyst-র প্রয়োজন তা এই মুহূর্তে বাঙ্গালীর নেই। লাভ হতে পারে একমাত্র যদি মহারাষ্ট্রের শিবসেনা, অসমের অসম গণ পরিষদ, পাঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল, তামিলনাড়ুর এআইডিএমকে-র মতো state political party থাকে। আজ নেই বাঙ্গালীর, তবে কাল যে থাকবেনা তাও বলা যায়না।

কালচক্র পরিবর্তিত হচ্ছে দ্রুত – রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রও পরিবর্তিত হচ্ছে প্রচন্ড গতিতে। ইতিহাস সামনে নতুনভাবে উঠে দাঁড়াচ্ছে – বাঙ্গালী হিন্দুকে অমিত স্বার্থপর হতে হবে, বিশ্ববিপ্লবের দীক্ষা ছুঁড়ে ফেলে।

ইতিহাস অধ্যয়নের মূল অর্থ হল – সর্বনাশের মূল কারণগুলোকে অনুভব করা ও তার মূলোচ্ছেদ করা।

“Instruction in world history in the so-called high schools is even today in a very sorry condition. Few teachers understand that the study of history can never be to learn historical dates and events by heart and recite them by rote; that what matters is not whether the child knows exactly when this battle or that was fought, when a general was born, or even when a monarch (usually a very insignificant one) came into the crown of his forefathers. No, by the living God, this is very unimportant. To ‘learn’ history means to seek and find the forces which are the causes leading to those effects which we subsequently perceive as historical events.” – Adolf Hitler, “Mein Kampf”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *